এম এ জোবায়ের
আমার বয়স এখন ৫৫+। আসলে ৫৭, ৫৫+ বলি বয়স একটু কম মনে হবার জন্য। অনেক দেখলাম, অনেক ঘুরলাম, অনেককে চিনলাম। বাবা চাকুরীজীবি হবার কারনে জায়গা জায়গা ঘোরা, মানুষের সাথে পরিচিতি এবং জীবনের স্মৃতি অন্য সবার থেকে বেশ বেশী বলেই মনে হয়। জীবনের মজার মজার স্মৃতিগুলো আগে থেকেই সবার সথে শেয়ার করতে ইচ্ছা হত, লেখার সামান্য সামান্য অভ্যাস থাকলেও প্রকাশের কোন পথ ছিলনা।
এখন ইমেইল আছে, ব্লগ আছে ফেসবুক আছে, আরো অনেক কিছু আছে নেই শুধু আমার লেখার মন আর অভ্যাস। ফেসবুক, ব্লগ আমার বয়সীদের জন্য নয়। আমার বয়সের কাউকে এখানে দেখিনা। ফেসবুকে ঢুকলে চ্যাট স্ক্রীন পপ করে ছেলের মেসেজ পাই "বাবা তুমি বুড়া মানুষ তুমি ফেসবুকে কি কর?" মেয়ে বলে 'তোমার আবার ইমেইল আইডির কি দরকার?" তবুও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবনের মজার স্মৃতির কিছুটাও যদি সবার সাথে শেয়ার করতে পারি তাহলে ভালই লাগবে। ধন্যবাদ বিজ্ঞানকে বিশেষ করে কম্পিউটার বিজ্ঞানকে ইমেইল, ফেসবুক, ব্লগকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দেবার জন্য।
আজ একটা মজার ঘটনা বলছি। ১৯৭২ বা ১৯৭৩ সাল। আমি তখন নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ি। নড়াইল থেকে যশোরে যাচ্ছি। লক্কড় ঝক্কড় মার্কা বাস, ষ্টিয়ারিং আড়াই পাক ফলস, টপ গিয়ারে চটি মারতে হয়, খাইট্টা ব্রেক (আড়াই পাক ফলস,চটি মারা, খাইট্টা ব্রেক এর ব্যাখ্যা পরে একদিন দেবো)।
তুলারামপুরে এসে এক সাপুড়িয়া বাসে উঠলো, সাথে বাঁকে এক পাশে একটা মাটির হাড়ি অন্য পাশে দুইটা কাঠের সাপের বাক্স। জানা গেল সে এই মাত্র খুব বড় একটা শ্ঙখচুড় সাপ (King Cobra) ধরে এনেছে। আমরা সাপটার ফোঁশ ফোঁশ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। সাপুড়িয়া আরো জানালো সাপটা খুব রাগী এবং ধরতে গিয়ে সে প্রায় জানে মারা যাচ্ছিল। আমরা সাপুড়িয়ার দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলাম সেও খুব গর্বভরে আমাদের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাচ্ছিল, একট হিরো হিরো ভাব।
নড়াইল যশোর রাস্তা তখন খুব অপ্রসস্খ ছিল, একটা বাস অন্য একটা বাসকে ক্রসিং করতে একপাশের চাকা রাস্তা থেকে নীচে নামানোর প্রয়োজন পড়তো। এই সময় সামনে থেকে একটা বাস এলো, সামনের বাসটাকে সাইড দেবার জন্য আমাদের বাসটা একপাশের চাকা নীচে নামালো। সম্ভবত সেখানে একটা বড় গর্ত ছিল বাসের চাকা সেখানে পড়ে বাসটা হটাৎ করে অনেক খানি কাত হয়ে গেল এবং বড় ধরনের ঝাকি খেল। সাপুড়িয়ার মাটির হাড়িটা ছিটকে পড়ে ঠাঁশ করে শব্দ করে ভেঙ্গে গেল। সমন্ত বাস জুড়ে শুরু হয়ে গেল সাপ সাপ করে চিৎকার চেচামেচি।
বাসের ড্রাইভার তার পাশের দরজা খুলে হাওয়া। যত্রিরা সব বাসের সিটের উপর দাড়িয়ে চিল্লা ফাল্লায় ব্যাস্ত। একটা জিনিষ আবারো লক্ষ করলাম মহিলারা চিৎকার চেচামেচিতে সত্যিকারের পারদর্শী। সে এক মহা হট্টোগোল। হটাৎ সপুড়িয়ার এক মহা চিৎকারে সবাই থেমে গেল।
সাপুড়িয়া জানালো হাড়িতে সাপ ছিলনা সাপ ছিল কাঠের বাক্সে, এবং সাপ সুষ্ঠভাবে বাক্সেই আছে। সব কিছু ঠিকঠাক হলো, ড্রাইভার ফিরে এলো, যাত্রিরা যার যার সিটে বসলো, শুধু বেচারা সপুড়িয়াকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো। তার শত অনুরোধেও তাকে বাসে থাকতে দেওয়া হলোনা। আমাদের বাস ছেড়ে দিল, সাপুড়িয়া বেচারা যতক্ষন বাসটা দেখাগেল অসহায় দৃষ্টিতে বাসের দিকে তাকিয়ে থাকল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।