সুরের সাথে সুর মেলাও...
সাদাসিধে কথা
বাংলাদেশে পারমাণিবক শক্তি কেন্দ্র
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
জুন ১১, ২০০৯
প্রথম আলো
১.
যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দিনের জন্য গিয়েছি, সেখানে হ্যারল্ড নামে একটা ছেলের খুব সখ আমাদের রান্না করে খাওয়াবে। তাকে অনেক দিন থেকে চিনি। এমআইটি নামক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। ভদ্র, বিনয়ী এবং সুদর্শন একটি ছেলে। খুব আগ্রহ নিয়ে তার বাসায় ডিনার করতে গিয়েছিলাম।
হ্যারল্ড খুব ভালো রান্না করে সুস্বাদু কিছু খাওয়াবে সে জন্য নয়−সে আমাকে কথা দিয়েছে খাওয়ার পর আমাদের নিয়ে যাবে টোকামাক দেখাবে। বইপত্র ম্যাগাজিনে টোকামাক সম্পর্কে পড়েছি, টেলিভিশনে ছবি দেখেছি, নিজের চোখে দেখার একটা সখ ছিল। হ্যারল্ডের কল্যাণে আমার সেই সখটি পূরণ হলো। ঘুরে ঘুরে আমরা সেই টোকামাকটি দেখলাম। এবারে টোকামাকটি কী জিনিস সেটা বলা দরকার।
বাংলাদেশের মানুষ গত কিছুদিনে ‘পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র’ কথাটি অনেকবার শুনেছে এবং আমার ধারণা, দেশের বেশির ভাগ মানুষ সেটা নিয়ে এক ধরনের আগ্রহ এবং উত্তেজনা অনুভব করেছে। প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার, পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র কথাটি ভুল, শুদ্ধ কথাটি হচ্ছে ‘নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র’। পৃথিবীর সবকিছু তৈরি অণু-পরমাণু দিয়ে এবং আমাদের চারপাশের পরিচিত সব শক্তি আসে এই অণু-পরমাণুর রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে। আমরা যখন ম্যাচের কাঠি জ্বালাই তখন সেই শক্তিটা আসে পরমাণুর বিক্রিয়া থেকে−সেই অর্থে সেটাও পারমাণবিক শক্তি। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস।
যখন সেই নিউক্লিয়াসকে ভেঙে কিংবা জুড়ে দিয়ে তার ভেতর থেকে শক্তি বের করে আনা হয় সেটাই হচ্ছে নিউক্লিয়ার শক্তি। এবং এই নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে বের করে আনা শক্তি দিয়ে যখন বৈদ্যুতিক কেন্দ্র তৈরি করা হয় তখন সেটাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র। কোনো একটা বিচিত্র কারণে পৃথিবীর সব জায়গাতেই নিউক্লিয়ার শক্তি বোঝাতে পারমাণবিক শক্তি এই ভুল কথাটি অবলীলায় ব্যবহার করা হয়। (আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা এ রকম অনেক ভুল শব্দ অবলীলায় ব্যবহার করি। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মাঝখানে আটকা পড়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার নাম ক্রসফায়ার।
আমাদের দেশে ক্রসফায়ার শব্দটির অর্থ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে বিনা বিচারে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় একজন মানুষকে হত্যা করা। বর্তমান সরকার কথা দিয়েছিল তারা বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করা বন্ধ করবে−সেটা বন্ধ হয়নি। দেখে মনে হচ্ছে সরকারের ভেতর আরেকটা সরকার আছে তারা এত দুর্বিনীত এবং বেপরোয়া যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতেও দ্বিধা করে না। )
যাই হোক, নিউক্লিয়ার শক্তি নিয়ে কথা হচ্ছিল। বলা হয়েছে ভারী নিউক্লিয়াস ভেঙে বা হালকা নিউক্লিয়াস জুড়ে দিয়ে নিউক্লিয়ার শক্তি পাওয়া যায়।
যখন ভারী নিউক্লিয়াস (যেমন ইউরেনিয়াম) ভাঙা হয় তখন দেখা যায় ভাঙা টুকরোগুলোর ভর মূল নিউক্লিয়াসের ভর থেকে কম এবং যেটুকু ভর কমে যায় সেটা আইনস্টাইনের বিখ্যাত সুত্র E=mc2 হিসেবে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। হিরোশিমাতে যে বোমা ফেলে এক মুহুর্তে প্রায় লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল সেই বোমায় এই প্রক্রিয়ায় শক্তি বের করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিটির নাম Fission এবং পৃথিবীর সব নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রে এই পদ্ধতিতে শক্তি তৈরি করা হয়।
দুটি হালকা নিউক্লিয়াস (যেমন হাইড্রোজেনের আইসোটপ) জুড়ে দিয়ে অন্য একটি নিউক্লিয়াস তৈরি করে যখন শক্তি তৈরি করা হয় সেটাকে বলা হয় Fusion, এখানেও দেখা যায় তৈরি করা নিউক্লিয়াসের ভর হালকা দুটি নিউক্লিয়াসের ভর থেকে কম এবং যেটুকু ভর কমে যায় সেটা আইনস্টাইনের E=mc2 অনুযায়ী শক্তি হিসেবে বের হয়ে যায়। সুর্যে এই প্রক্রিয়া দিয়ে শক্তি তৈরি হয়, অল্প একটু ভর ব্যবহার করে অনেক শক্তি পাওয়া যায় বলে সুর্যের জ্বালানি হঠাৎ করে এশ দিন শেষ হয়ে যাবে আমাদের সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না।
এই পদ্ধতিতে এখনো কোনো নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করা যায়নি। এটা করার জন্য যে তাপমাত্রার দরকার হয়, সেটা ধারণ করার মতো কোনো পাত্র নেই। তাই চৌম্বক ক্ষেত্রের মাঝে শুন্যে ভাসিয়ে রেখে প্রক্রিয়াটা করার চেষ্টা করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে যেখানে এ রকম চৌম্বক ক্ষেত্রে ফিউসান করার চেষ্টা করা হয় সেটাই হচ্ছে টোকামাক। এমআইটিতে আমি এ রকম একটি টোকামাক দেখতে গিয়েছিলাম।
এই ফিউসান পদ্ধতিতে শক্তি তৈরি করার জন্য পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ মিলে ফ্রান্সে ITER নামে একটা বিশাল প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর মানুষ যদি এই প্রক্রিয়ায় শক্তি তৈরি করার প্রযুক্তিটি জেনে যায় তাহলে আমাদের পৃথিবীর জ্বালানির জন্য হাহাকার পুরোপুরি মিটে যাবে−আমরা তখন একটি নতুন পৃথিবী দেখব, যেখানে শক্তি বা বিদ্যুতের জন্য আর কোনো দুর্ভাবনা থাকবে না।
এটুকু ছিল ভুমিকা, (ভুমিকাটা একটু বড়ই হয়ে গেল) এবার মূল বক্তব্যে আসি।
২.
একটা দেশ কতটুকু উন্নত সেটা বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে সেই দেশে কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তার একটা হিসাব নেওয়া। যে দেশ যত উন্নত সেই দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার তত বেশি−কথাটা উল্টোভাবেও বলা যায়, যে দেশে যত সহজে বিদ্যুৎ দেওয়া যায়, সেই দেশ তত দ্রুত উন্নত হয়ে ওঠে।
কাজেই আমরা যদি আমাদের দেশের উন্নতি করতে চাই তাহলে দেশে বিদ্যুৎ তৈরি করতে হবে। আমাদের খুব বড় দুর্ভাগ্য, গত জোট সরকারের আমলে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও তৈরি হয়নি। অসংখ্য বিদ্যুতের খাম্বা তৈরি হয়েছে। এর চাইতে উৎকট রসিকতা আর কিছু হতে পারে কি না আমার জানা নেই।
বিদ্যুৎ তৈরি করার জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে হয় এবং সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর জন্য জ্বালানির দরকার হয়।
আমাদের দেশের প্রধান জ্বালানি হচ্ছে গ্যাস, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান নির্বাচনে জিতেই বলেছিলেন এই দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে এবং সেই গ্যাস বিদেশে রপ্তানি করার জন্য লাফঝাঁপ দেওয়া শুরু করেছিলেন। দেশের মানুষ রীতিমতো পথে নেমে আন্দোলন করে সেই ষড়যন্ত্র বন্ধ করেছিল। এখন আমরা দেখছি সম্পুর্ণ ভিন্ন একটা ছবি, বিদেশে রপ্তানি দুরে থাকুক দেশের জন্যই যথেষ্ট গ্যাস নেই। দ্রুত গ্যাস শেষ হয়ে আসছে, দেশের প্রয়োজনের জন্য যদি নতুন গ্যাস ফিল্ড পাওয়া না যায় আমাদের প্রধান জ্বালানি যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে এই দেশ চলবে কীভাবে?
দেশকে রক্ষা করার লক্ষ্যে এখনই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আমি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা নই, কিন্তু তারপরও এই দেশের মানুষের টিকে থাকার ক্ষমতা দেখে অনুভব করতে পারি, যদি তাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎটুকু সরবরাহ করা হয় তাহলে দশ বছরের মধ্যে এই দেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যাবে।
সে জন্য যেকোনো মূল্যে আমাদের দেশের জন্য বিদ্যুৎ তৈরি করতে হবে।
যে দেশে অন্য কোনো জ্বালানি নেই, সেই দেশের জন্য বিদ্যুৎ তৈরি করার একটা পদ্ধতি হচ্ছে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র, একটা কেন্দ্র থেকে অনায়াসে ছয় সাত শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। সবাই দেখেছে কিছুদিন আগে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র স্থাপনসংক্রান্ত একটা চুক্তি হয়ে গেছে।
পরবর্তী প্রশ্ন: আমাদের দেশের জন্য নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র কি একটি যথাযথ সমাধান? বাংলাদেশের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর কে ঠিক করেছেন? কিছু আমলা না কি বিশেষজ্ঞরা?
৩.
আমাদের দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেন আমলারা। আমি এর ঘোর বিরোধী।
কেন বিরোধী, সেটা বোঝানোর জন্য কয়েকটা উদাহরণ দিই। একটা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষা। সেই শিক্ষার ‘সংস্কার’ করার জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে (হাজার কোটি লিখতে হলে একের পরে কয়টা শুন্য বসাতে হয় সেটা সবাই জানে না!)। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে একমুখী শিক্ষা। পাঠ্যবইয়ের বেসরকারীকরণ এবং স্কুল বেসড এসেসমেন্ট (এসবিএ যেটাকে ছাত্রছাত্রীরা টিটকারী করে বলে ‘স্যারের বাসায় এসো’)।
এর মধ্যে কিছু ঠেকানো গেছে, কিছু আধাখিচড়ে অবস্থায় আছে। কিছু গলার মধ্যে কাটার মতো বিঁধে আছে। এ রকম আরও একটা প্রজেক্ট ছিল কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন−অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এটা চমৎকার একটা পদ্ধতি। এই দেশের শিক্ষাবিদেরা এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন, প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর নতুন নামকরণ করেছেন সৃজনশীল প্রশ্ন। এ রকম চমৎকার একটা প্রক্রিয়া এমনভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল যে এটা জন্নানোর আগেই মৃত্যুবরণ করত।
অনেক কষ্ট করে সেটাকে ঠেকানো গেছে। কারণ আমলা নন, এ রকম কিছু মানুষ সেটাকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। আশির দশকে কিছু আমলা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমাদের দেশের জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন নেই। কারণ তাহলে দেশের তথ্য বাইরে পাচার হয়ে যাবে। দুই-একজন মানুষের নির্বুদ্ধিতার কারণে পুরো দেশ প্রায় এক যুগ পিছিয়ে গিয়েছিল।
এ রকম উদাহরণ কতগুলো প্রয়োজন?
আমলারা যে ইচ্ছে করে এ রকম সিদ্ধান্ত নেন তা নয়, অনেক সময় তাঁদের কিছু করার কথা থাকে না। পশু মন্ত্রণালয়ে কিছুদিন কাজ করে একজন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চলে আসেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ে। কীভাবে কীভাবে জানি আমি বিটিসিএলের একজন বোর্ড মেম্বার, অল্প কিছুদিনে সেখানে তিন তিনজন চেয়ারম্যান বদল হয়েছেন। কিছু বোঝার আগেই একজন বোর্ড মেম্বার বদল হয়ে আরেকজন চলে আসেন। সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে আমি চেঁচামেচি করেছিলাম বলে আমাকে একবার একটা মিটিংয়ে ডাকা হয়েছিল সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কথা আমার আলাদাভাবে মনে আছে।
তার কারণ তিনি ছিলেন সবচেয়ে সরব এবং একটা অবস্থা মেনে নেওয়ার জন্য তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘যদি কোনো মেয়ে আবিষ্ককার করে সে ধর্ষিত হতে যাচ্ছে এবং তার বাঁচার কোনো উপায় নেই তাহলে তার জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ধর্ষণটাকে উপভোগ করা। ’ (এটা কোনো মৌলিক কথা নয়, একজন আমেরিকান রাজনীতিবিদ এই কথাটা বলে সারা পৃথিবীর ঘৃণার পাত্র হয়েছিলেন)। কিছুদিন আগে আমি টেলিভিশনে দেখেছি তিনি সম্পুর্ণ ভিন্ন একটা মন্ত্রণালয়ের জন্য অত্যন্ত উচ্চকন্ঠে বক্তব্য রাখছেন। শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি তাঁর দলবল নিয়ে অসংখ্যবার বিদেশ গিয়েছেন, এখন তিনি তাঁর সমস্ত জ্ঞানভান্ডার আর অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্পুর্ণ ভিন্ন একটা মন্ত্রণালয়ের জন্য কাজ করছেন। যার অর্থ আমাদের আমলারা আসলে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নন।
নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ নেই, তাঁরা কিছুদিন এক জায়গায়, কিছুদিন অন্য জায়গায় কাজ করেন।
যাঁরা কাজের মানুষ তাঁরা সম্ভবত সব জায়গাতেই কাজ করতে পারেন। অ্যাপল কম্পিউটার তৈরি করে যে মানুষটি পৃথিবীতে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের বিপ্লব শুরু করেছিলেন, সেই অ্যাপল কোম্পানি তাঁকে বহিষ্ককার করে পেপসি কোলার একজন কর্তাব্যক্তিকে নিয়ে এসেছিল। পেপসি কোলার মানুষ কম্পিউটারের ব্যবসা বেশ ভালোভাবেই চালিয়ে নিয়েছিল। তাই পশু মন্ত্রণালয়ের আমলা সম্ভবত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও ভালোভাবেই চালিয়ে নিতে পারবেন−যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা হবে রুটিন কাজ।
কিন্তু রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত তাঁরা সঠিকভাবে নিতে পারবেন না। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাঁদের সত্যিকারের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, দেশের মানুষের অনুমতি নিতে হবে।
আমাদের দেশের বিদ্যুতের জন্য পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র (আসলে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র) বসানোই সার্বিক পরিকল্পনা কি না সেই সিদ্ধান্তটিই যেন এই দেশের দুই-একজন আমলারা না নিয়ে বসে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, লাভ-ক্ষতির কথা দেশের মানুষকে জানাতে হবে। একটা দেশের জন্য এটা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত।
৪.
আমি কেন বিষয়টিকে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি? কারণগুলো এ রকম: সারা পৃথিবীতে এখন ‘সবুজ’ আন্দোলন হচ্ছে। সবুজ আন্দোলন বলতে বোঝানো হয় পরিবেশের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ার আন্দোলন। এ মুহুর্তে সারা পৃথিবীতে পরিবেশের ওপর সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হচ্ছে বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইড অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া। বাতাসে যদি কার্বন-ডাই অক্সাইড বেড়ে যায় তাহলে সেটা আলাদাভাবে তাপমাত্রাকে ধরে রাখতে পারে, পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে মেরু অঞ্চলের জমে থাকা বরফ গলতে থাকবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে পৃথিবীতে যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম সবার আগে। দেশের অর্ধেক পানিতে ডুবে যাবে, না হয় লোনা পানির আওতায় চলে আসবে।
পৃথিবীর এত বড় বিপর্যয় বন্ধ করার জন্য সারা পৃথিবীর মনুষই এখন সোচ্চার। তাই তেল, গ্যাস বা অন্য কিছু না পুড়িয়ে শক্তি কেন্দ্র তৈরি করার দিকে সবাই নতুন করে নজর দিয়েছে। সেই হিসেবে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র খুব আকর্ষণীয় সমাধান, কোনো কার্বন-ডাই অক্সাইড জন্ন না দিয়েই এটা শতশত মেগাওয়াট শক্তি তৈরি করতে পারে। পৃথিবীতে বেশ কিছু দেশ অত্যন্ত সফলভাবে এই শক্তি তৈরি করে যাচ্ছে। ফ্রান্স এর অত্যন্ত চমৎকার একটি উদাহরণ।
তাদের শক্তির একটা বড় অংশ আসে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র থেকে। তবে আমার সবচেয়ে পছন্দের উদাহরণ হচ্ছে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। নিউক্লিয়ার বোমা বানানোর কারণে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতকে সারা পৃথিবী একঘরে করে রেখেছিল, তাতে তারা বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে নিজেদের বিজ্ঞানী আর প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে নিজের দেশের উপযোগী একেবারে ভিন্ন রকম নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করেছে। বাইরে থেকে জ্বালানি না এনেই নিজের দেশের নতুন ধরনের জ্বালানি দিয়ে তারা তাদের নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রগুলো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি (শতাধিক) নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
পৃথিবীর সব দেশের মতোই তাদের দেশেও শক্তির চাহিদা বাড়ছে, তারপরও গত ৩০ বছরে তারা তাদের দেশে একটিও নতুন নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র করেনি। বলা হয়, কারণটি রাজনৈতিক (তার মানে কী আমি জানি না) সাদা কথায় বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা দেশ বিশাল একটা ভুখন্ডের মালিক হওয়ার পরও তাদের দেশে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র বসাতে স্বস্তি বোধ করে না। জার্মানির মতো দেশ তাদের মাটিতে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার কারণটি কী? তার কারণ, আজকাল সবাই মনে করে এটা পরিবেশের জন্য একটা হুমকি।
নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করার প্রধান কারণ এর বর্জ্য।
এ ধরনের শক্তি কেন্দ্র ব্যবহার করার পর জ্বালানির যে অংশটুকু বর্জ্য হিসেবে পড়ে থাকে সেটা তেজষ্কিত্র্নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তেজষ্কিত্র্নয় পদার্থের তেজষ্কিত্র্নয়তা ধীরে ধীরে কমে আসে, কাজেই নির্দিষ্ট একটা সময় এই তেজষ্কিত্র্নয় পদার্থগুলো আলাদা করে সুরক্ষিত একটা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয়। সেই নির্দিষ্ট সময়টুকু কত? উত্তরটা শুনে সবাই চমকে উঠবে, সময়টুকু এক-দুই সপ্তাহ নয়, এক-দুই মাস বা বছর নয়, টানা ১০ হাজার বছর। মানুষের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার বছর টিকে থাকা কোনো কিছু তৈরি করার উদাহরণ নেই। (তেজষ্কিত্র্নয় পদার্থের আয়ু আরও অনেক বেশি, অনায়াসে লাখ বছর হয়ে যেতে পারে)।
বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ ছবিটি আসলে নিউক্লিয়ার বর্জ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে তাদের নিউক্লিয়ার বর্জ্য সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছে তার বর্ণনাটি পড়লে যেকোনো মানুষ আতঙ্কে শিউরে উঠবে। বর্তমান পৃথিবীতে আমরা কিছু বর্জ্য তৈরি করে যাচ্ছি হাজার হাজার বছর পরও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্নকে সেই ভয়াবহ তেজষ্কিত্র্নয় বর্জ্যরে ঝুঁকি সহ্য করে বেঁচে থাকতে হবে, এটি অনেক বড় একটি নৈতিক প্রশ্ন।
আমাদের বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র বসানো হলে সেখান থেকেও তেজষ্কিত্র্নয় বর্জ্য বের হবে, সেই বর্জ্য আমরা কোথায় রাখব? মাঝেমধ্যেই খবরের কাগজে দেখি, ভয়ানক বর্জ্য দিয়ে দুষিত পুরোনো জাহাজ সারা পৃথিবী থেকে পরিত্যক্ত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসে ভাঙার জন্য। নিউক্লিয়ার বর্জ্যরে বেলায়ও সে রকম কিছু হবে না তো? সারা পৃথিবীর নিউক্লিয়ার বর্জ্য আমাদের দেশে সংরক্ষণ করার জন্য পঠিয়ে দেওয়া হবে না তো? যাঁরা আমাদের বুড়িগঙ্গা নদীটি দেখেছেন, তাঁরা জানেন আমরা এর কী অবস্থা করেছি।
বুড়িগঙ্গার পানি এখন আর পানি নয়, এটি থিকথিকে কালো আঠালো দুর্গন্ধযুক্ত দুষিত এক ধরনের তরল। লোভী ব্যবসায়ী, দুর্বল আমলা আর অবিবেচক মানুষেরা মিলে আমরা নদীকে হত্যা করতে পারি। নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রে সে রকম ভয়াবহ কিছু ঘটবে না তো?
কিছুদিন আগেও একটা নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করতে কয়েক যুগ লেগে যেত। আজকাল প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন পাঁচ-ছয় বছরেই একটা নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করা যায়।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, এর আয়ুষ্ককাল কিন্তু ৩০ বছরের মতো। নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করার প্রক্রিয়া যে রকম জটিল, আয়ুষ্ককাল শেষ হওয়ার পর সেটাকে পরিত্যাগ করা বা নতুন করে তৈরি করার প্রক্রিয়া কিন্তু একই রকম জটিল। কাজেই নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রটির অবস্থা ৩০ বছর পর কী হবে? (ভবদহের কথা মনে আছে? প্রকল্পটি ৩০ বছরের কাছাকাছি সময়সীমার জন্য ছিল। সেই সময়টুকু পার হওয়ার পর পুরো এলাকার মানুষের জন্য কী ভয়ানক দুর্ভোগ নিয়ে এসেছিল মনে আছে?) কাজেই একটা নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করা হলেই কাজ শেষ হয় না, সেটাকে সংরক্ষণ করতে হয় এবং সময় শেষ হলেই সেটাকে ঠিকভাবে পরিত্যাগ করার বিশাল একটা ঝুঁকি সামলাতে হয়।
নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করতে কত খরচ পড়ে? আমি এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত না, তাই ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে জানতে পেরেছি পাঁচ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার, টাকার অঙ্কে তিন থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা।
টাকাটা কোথা থেকে আসবে, কী সমাচার সেই প্রশ্নের উত্তর দেবেন দেশের নীতিনির্ধারকেরা, দেশের অর্থনীতিবিদেরা।
নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের বড় দুটি দুর্ঘটনা হয়েছে রাশিয়ার চেরনোবিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের থ্রি মাইল আইল্যান্ডে। মনে রাখতে হবে, নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের দুর্ঘটনা কিন্তু অন্য দশটা দুর্ঘটনার মতো নয়। প্রচন্ড উত্তাপে যখন চুল্লিটি গলে যায়, তখন তার ভেতরকার ভয়ঙ্কর তেজষ্কিত্র্নয় পদার্থ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসে উড়ে যায়, পানিতে মিশে যায়।
সেই তেজষ্কিত্র্নয় পদার্র্থ লাখ লাখ বছর ধরে বিকীরণ করে, কেউ সেখানে যেতে পারে না। রাশিয়ার চেরনোবিলে দুর্ঘটনা ঘটার পর পুরো শহরটাকেই বাতিল করে দিতে হয়েছিল। চেরনোবিল এবং থ্রি মাইল ছিল বড় দুর্ঘটনা। গণমাধ্যমে সেভাবে আসেনি, এ রকম ছোট দুর্ঘটনার উদাহরণ কিন্তু অসংখ্য। পৃথিবীর যেকোনো প্রযুক্তিতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
গাড়িতে নিয়মিত দুর্ঘটনা হচ্ছে, জাহাজ ডুবে যায়, বিমান মাটিতে আছেড়ে পড়ে, ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরে, স্পেস শাটল মহাকাশে ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও মানুষ এই দুর্ঘটনাকে ভয় পেয়ে থেমে থাকে না। তারা গাড়ি, জাহাজ কিংবা বিমানে চড়ে, ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, স্পেস শাটল করে মহাকাশে যায়। নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রে দুর্ঘটনা হতে পারে জেনেও মানুষ নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করে। চেষ্টা করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমাতে, কিন্তু কখনো দুর্ঘটনা হবে না কেউ সেই গ্যারান্টি দিতে পারে না।
৫.
কাজেই আমাদের দরিদ্র দেশের যৎসামান্য সম্পদ ব্যবহার করে দেশের মানুষের একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার ইচ্ছা, আমলারা যেমন করে একমুখী শিক্ষা বা স্কুল বেডস এসেসমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকেন এবারে যেন সেটা না ঘটে। দুই-চারজন আমলা কিংবা ইন্টারনেটে দুই পাতা পড়ে রাতারাতি গজিয়ে ওঠা বিশেষজ্ঞরা যেন এই সিদ্ধান্ত না নেন। আমাদের দেশের অনেক বড় বড় বিশেষজ্ঞ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে, তাঁদের সম্মিলিত চিন্তাভাবনা এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করতে যত খরচ হয়, তার প্রায় মাত্র দশ ভাগের এক ভাগ খরচ করে অস্ট্রেলিয়া নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র থেকেও বেশি মেগাওয়াট তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
অপ্রচলিত প্রযুক্তির ঝুঁকি হয়তো বাংলাদেশ নিতে পারবে না, তারপরও যেন সেগুলোও বিবেচনা করা হয়।
যেকোনো মূল্যে আমাদের বিদ্যুৎ দরকার, যদি দেখা যায় সত্যিই নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করাই হচ্ছে সবচেয়ে বাস্তবসম্মমত সমাধান তাহলে আমরা যেন পাশাপাশি আরেকটা কাজ করি। আমরা যেন বিদেশ থেকে শুধু একটা যন্ত্র কিনে এনে দেশে বসিয়ে না দিই। আমরা যেন নিউক্লিয়ার শক্তিসংক্রান্ত প্রযুক্তিতে আমাদের দেশের নিজেদের জনশক্তি গড়ে তুলি। ভারত থোরিয়াম এবং ইউরেনিয়াম মিশিয়ে নিজেদের প্রযুক্তিতে ফুয়েল রড তৈরি করেছে।
আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র উপকুলে থোরিয়াম ইউরেনিয়াম জাতীয় খনিজ পাওয়া গেছে। এ রকম একটা তথ্য প্রচলিত আছে। সে জন্য কক্সবাজারে আণবিক শক্তি কমিশনের একটা অফিসও তৈরি করা হয়েছে বলে জানি। আমরা যেন নতুন করে সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করি। আমাদের সমুদ্র উপকুলে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের জ্বালানি যদি পেয়ে যাই তার থেকে চমৎকার ব্যাপার আর কী হতে পারে? পৃথিবীতে কিন্তু ইউরেনিয়ামের খুবই অভাব, যাঁরা নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের বিরোধিতা করেন তাঁরা এটাকে একটা বড় যুক্তি হিসেবে দেখান।
আমাদের বিদ্যুৎ দরকার, যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ দরকার। যদি নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র তৈরি করেই সেটা পেতে হবে তাহলে সেই সিদ্ধান্তই আমাদের নিতে হবে।
তবে আমি স্বপ্ন দেখি, আমরা আমাদের নিজেদের বিজ্ঞানী প্রযুক্তিবিদ গড়ে তুলব। পাশের দেশ ভারত যেভাবে নিজেদের শক্তি কেন্দ্রগুলো গড়ে তুলেছে, আমরাও সেভাবে এক দিন নিজেদের শক্তি কেন্দ্র গড়ে তুলব। কক্সবাজারের সমুদ্র উপকুল থেকে শুধু ঝিনুক কুড়াব না, আমরা থোরিয়াম ইউরেনিয়াম কুড়িয়ে নিজেদের জ্বালানি নিজেরা তৈরি করে নেব।
আমরা স্বপ্ন দিয়ে শুরু করতে চাই, কিন্তু শুধু স্বপ্নে থেমে থাকতে চাই না।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।