আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার জানের জান ভাগ্নে



ভাগ্নের জন্ম হয়েছিল সিজার করে। বড়আপার একটা টিউমার ছিল বলে রক্তপাত বেশী হবার সম্ভাবনা ছিল। আমি রক্তের ডোনার হিসাবে স্ট্যান্ডবাই ছিলাম। অপারেশন থিয়েটারে নেবার কিছুক্ষণ পরই আমার রক্ত দিতে হবে জানালেন ডাক্তার। বাসায় কাউকে বলিনি যে একমাস আগেই আমি অর্ধেক ব্যাগ রক্ত দিয়েছি।

রক্ত নেয়ার আগে আমার ব্লাড প্রেসার মেপে লোকটা বলল, এবারই শেষ, আপনি আর কোনদিন রক্ত দিবেন না কাউকে। প্রায় একঘন্টা পর দেখতে পেলাম আমার প্রথম ভাগ্নের মুখ। আপেলের মত গাল দুটা আর দুঠোঁট ভরা আহ্লাদ। কী অদ্ভূত একটা অনুভূতি যে হচ্ছিল। আস্তে আস্তে ভাগ্নে বেড়ে উঠতে থাকল।

আমি তখন হোস্টেলে থাকতাম আর সপ্তাহ শেষে বাসায় আসতাম। এসেই ওকে কোলে তুলে নিতাম। ওর তিন-চার মাস বয়স তখন। আমাকে ভুলে যেত এক সপ্তাহেই। অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত।

তারপর যেই আমার গলার লকেটটা দেখত, মনে পড়ে যেত আমাকে আর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আপেলটা (লকেটটা একটা আপেল) মুখে পুরে নিত। বড়আপা দেখে বলতেন, এই যে লকেট মুখে দিয়ে নিজেই লকেট সেজে ঝুলে আছে। পাঁচ মাস বয়স যখন, ইন্ডিয়া টু্রে গেছিলাম ১৭ দিনের জন্য। ফিরে এসে শুনি সে বসতে শিখেছে। বড়আপা সেটা দেখানোর জন্য ওকে ঘুম থেকে তুলে বসিয়ে দিল।

সে ঘুমঘুম চোখে বসে রইল আর অবাক হয়ে ভাবতে থাকল এভাবে হঠাৎ বসিয়ে দেয়ার মানে কী। কী যে মজা লাগছিল ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে। মেজআপা তখনই ওর জন্য ওয়াকার কিনে দিল। প্রথম প্রথম বোকার মত বসে থাকত। হঠাৎ আবিষ্কার করল পা দিয়ে মাটিতে ঠেলা দিলে ওয়াকার পিছিয়ে যায়।

সব জায়গায় উল্টা দিক ঘুরে যাওয়া শুরু করল। এক সপ্তাহেই ওয়াকারের রহস্য উদ্ধার করে ফেলল। তারপর তার দৌড় দেখে কে। সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়ায় আর তার নানীর রান্নাঘরে কিছু না কিছু আকাম করে আসে। সবচেয়ে প্রিয় কাজটা ছিল, খাবার পানির কলসীর ঢাকনিটা নিয়ে জুতার আলমারীর পিছনে ফেলে আসা।

তখন ওকে ড্রয়িংরুমে সোফা আর টেবিল দিয়ে দুর্গ বানিয়ে মাঝখানে আটকে রাখা হত। ভীষণ অপছন্দ করত সে এটা। আট মাসে পা দিয়েই সে বুঝে ফেলল ওয়াকার দিয়ে হাঁটাহাঁটি করা চরম অপমানজনক ব্যাপার। তখন সে হাঁত ধরে হাঁটা প্র্যাকটিস করত। এই হাঁটার সময় তার হাত সরাসরি ধরা যেত না।

সে কোন একজনের হাতের একটা আঙুল ধরে ধরে হাঁটত, এসময় তার অন্য হাত কেউ ধরতে পারত না। কিন্তু যার আঙুল ধরত তার কোমর একদিকে বাঁকা হয়ে যেত। কারণ ভাগ্নে তার হাতসহ নিজের হাত নিজের কনুইয়ের লেভেলে রাখত। নয় মাস পূর্ণ হতে যেদিন একদিন বাকী, সেদিন সে কারও হাত না ধরে হেঁটে দেখাল সবাইকে, আর সবার সাথে সাথে নিজেও হাততালি দিল। একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে আজকের লেখা শেষ করি।

একদিন আমি বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছি আর ভাগ্নে আমার পাশে বসে আছে। তখন ওর বয়স তিন বছর। আমার ঘুম আসছিল, হাই তুলতে তুলতে চোখ দিয়ে পানি চলে আসল, আমি ভাগ্নের সাথে মজা করার জন্য বললাম, দেখ আমি কাঁদি। ভাগ্নে দেখে আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল, কী হয়েছে তোমার, কাঁদো কেন, আর কাঁদবানা তুমি। দেখি ওর চোখও ছলছল করছে।

ভাগ্নে যে আমার জানের জান সেদিন আবার প্রমাণ পেলাম। পুনশ্চ: ভাগ্নে আমাকে বলে, আমার মাম যখন বাসায় থাকে না, তখন তুমিই আমার মাম। তাই বাসায় আমার অনেক নামের মধ্যে একটা নাম, সাবস্টিটিউট মাদার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.