আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এতিমদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করেও বহাল কমিটি!

এতিমদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে আছে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার কার্যনির্বাহী কমিটি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করা হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি।
এদিকে কমিটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গঠনতন্ত্র সংশোধন, প্রতিবাদ করায় চাকরিচ্যুতি, তহবিলের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।
২০০৩ সালে এতিমখানার দুই বিঘা জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য একটি আবাসনপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তৎকালীন কমিটির চুক্তি হয়। এতিমখানার ভাগে কম অংশ থাকাসহ একাধিক কারণে কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

এতিমখানার কর্মকর্তা-শিক্ষার্থীরা কমিটি ও চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। চুক্তির বিরুদ্ধে গত ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে রিট আবেদন করা হয়। আদালত এতিমখানার জমিতে সব কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। অপরদিকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের কমিটি অভিযোগের তদন্ত করে ১০ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কনকর্ড কনডোমিনিয়াম লিমিটেড নামক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সম্পাদিত দলিল প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী হয়েছে।

’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ অসম চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা না করে সামসুন্নাহার আহসানউল্লাহর (সাবেক সভাপতি) পুত্র খাজা জাকি আহসানউল্লাহর (বর্তমান সভাপতি) গঠিত বর্তমান কমিটি চুক্তি অব্যাহত রাখে। ’ প্রতিবেদনে কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ১৮ বছর উত্তীর্ণদের এতিমখানা ছাড়ার নির্দেশসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়। কিন্তু একটিও কার্যকর হয়নি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিবেদন আছে, আদালতে মামলাও চলছে।

যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
তবে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুপারিশ বাস্তবায়নে মামলা বাধা নয়। এ ব্যাপারে আমি সচিবসহ কয়েকজনকে চিঠি দিয়েছি। ’
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৭ সালেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক তদন্ত প্রতিবেদনে চুক্তিটিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে কমিটি বাতিল করার পর অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অভিযোগ, ওই কমিটিতেও খাজা জাকিসহ কয়েকজন স্থান করে নেওয়ায় এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় চুক্তি নিয়ে আলোচনা এগোয়নি।


২২ মে রাজধানীর পল্টনের সিটি হার্ট ভবনে বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় কমিটির সভাপতি জাকি আহসানউল্লাহ, সম্পাদক আনিসুর রহমান ও সহ-সম্পাদক মনজুর আহমেদের সঙ্গে। জাকি দাবি করেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্তের ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানতেন না।
তবে তদন্ত কমিটির প্রধান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রতিষ্ঠান) সুলতান মাহমুদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটির কর্মকর্তারা আমার অফিসে এসে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ’ চুক্তিতে সমস্যা থাকলে তার জন্য তৎকালীন সম্পাদক জি এ খানই দায়ী বলে দাবি করেন জাকি। ‘আপনার মা তো সভাপতি ছিলেন, সাক্ষী হিসেবে আপনারও স্বাক্ষর আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল ব্যক্তি জি এ খান।

’ জাকির দাবি, ২০১১ সালে অংশ বাড়িয়ে সম্পূরক চুক্তি হয়েছে।
তবে চাওয়া সত্ত্বেও সম্পূরক চুক্তির কোনো কপি এ প্রতিবেদককে দেওয়া হয়নি। জি এ খান যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
আরও অভিযোগ: এতিমখানার কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তত্ত্বাবধায়ক নাজমুস সাদতকে চাকরিচ্যুত করেছে কমিটি। অর্থ সরবরাহ বন্ধ করায় খাদ্যসংকট দেখা দেয়।

পরে আদালতের নির্দেশে খাবারের টাকা দেওয়া হলেও চাহিদাপত্রে নাজমুসের স্বাক্ষর থাকায় তা অনুমোদন করেনি কমিটি। ফলে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে বেতন পাননি।
আরও অভিযোগ, কমিটি গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছে। ২০১১ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় নিয়ম ভঙ্গ করে অল্পসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। শ খানেক সদস্যের মধ্যে কাগজে উপস্থিতির স্বাক্ষর আছে ২৩ জনের।


এ ছাড়া সহ-সম্পাদক মনজুরের বিরুদ্ধে দোকান স্থানান্তর বাবদ এক লাখ টাকা না দেওয়া ও ফাইল গায়েব, সম্পাদক আনিসুরের বিরুদ্ধে রসিদ বই ফেরত না দেওয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে এতিমখানার তহবিল থেকে টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে।
চাকরিচ্যুতি ও বেতন-ভাতার ব্যাপারে আনিসুর বলেন, ‘নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নাজমুসকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাহিদাপত্র না আনায় বেতন-ভাতা দেওয়া হয়নি। ’ মামলা হলে রসিদ বই আদালতেই জমা দেবেন বলে তিনি জানান।
সহ-সম্পাদক মনজুর বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে গঠনতন্ত্র সংশোধিত হয়েছে।

স্বাক্ষরের প্রমাণ দেখাতে বললে তিনি বলেন, ‘আদালতে দেব। ’
দোকান স্থানান্তর বাবদ টাকা দেওয়া হয়েছে দাবি করেন মনজুর। ‘ফাইলটি কোথায়?’ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কমিটির কারও কাছে আছে হয়তো। ’ তহবিল থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে কমিটির সদস্য সাইদুর মুঠোফোনে বলেন, ‘এটা ক্যাশিয়ার সালেহের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত লেনদেন। ’ এতিমখানার হিসাবরক্ষক (ক্যাশিয়ার) সালেহ ইসলাম বলেন, ‘সাইদুরের সঙ্গে ব্যক্তিগত লেনদেন নেই।


কমিটির যত অভিযোগ: কমিটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্রে না থাকলেও ১৮ বছরের বেশি কয়েকজন শিক্ষার্থী এতিমখানায় অবস্থান করছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় কমিটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন এতিমখানার শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা।
২০০৯ সালে করা বয়স উত্তীর্ণ ৩৪ জন শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়ে কমিটির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, তাঁরা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। অনেকের উচ্চশিক্ষার কাগজপত্র নেই। এতিমখানার সহকারী তত্ত্বাবধায়ক নূরুল ইসলাম ও সালেহের বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতির অভিযোগ।

এতিমখানার দোকানগুলো সাবেক শিক্ষার্থীদের দখলে।
তবে এতিমখানার কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৩ সালেও বয়স উত্তীর্ণ ৩৯ জনের আরেকটি তালিকা করা হয়েছিল, যা কমিটি গোপন করেছে। ৩৯ জনের মধ্যে ২১ জন এতিমখানায় নেই। ১০ জন উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। আর আটজন কারিগরি শিক্ষার জন্য আবেদন করেও কমিটির অনুমোদন পাননি।

কর্মকর্তারা বলেন, গঠনতন্ত্রে এতিমদের বয়স ১৮ বছরের বেশি না হওয়ার কথা বলা হলেও শিক্ষাগত মানসম্পন্ন ও পরীক্ষায় সন্তোষজনকভাবে উন্নীত শিক্ষার্থীদের জন্য তা ‘শিথিলযোগ্য’ ছিল। কার্যনির্বাহী কমিটি তা বাদ দিয়ে ওই স্থলে ‘বৃত্তি দেওয়ার’ কথা বলেছে। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে এতিমখানার কর্মকর্তা নূরুল ও সালেহ বলেন, কমিটির সঙ্গে চুক্তি করেই তিন-চারটি দোকান সাবেক শিক্ষার্থীরা চালাচ্ছেন। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।