সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী হাছন লোক উৎসবে যোগ দিতে এসে সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষের মনই জয় করলেন না, এতিমদের জন্য তার মানবিক হৃদয়খানিও খুলে দিয়ে গেলেন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে প্রশাসনের কর্মচারীদের সজাগ থাকতে বললেন। হাওর ও প্রকৃতিপ্রেমিক সৈয়দ মহসিন আলী তিন দিনব্যাপী হাছন রাজা লোক উৎসবের সমাপনী দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে সুনামগঞ্জ যান। শুক্রবার রাতযাপন করেন হাওরের বরদই বিলে। শনিবার রাতে হাছন রাজা লোক উৎসবের মঞ্চে হাজার হাজার দর্শকের তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্যে তাদের হৃদয় জয় করেন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া বক্তৃতা আর হাছন রাজার লোকে বলে বলেরে ঘরবাড়ি ভালা নায় আমার গান গেয়ে।
উৎসবের সমাপনী দিনে তার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন হাছন রাজার বংশধর ও গবেষক দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী। শনিবার সকালে জেলা সার্কিট হাউসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তার আন্তরিকতা ও সহানুভূতিতে কেউ কেউ অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তার ব্যক্তিগত টাকায় বিরিয়ানি এনেছিলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরিয়ানি খাবার প্লেটে সরবরাহ না করে ডাইনিং টেবিলে প্যাকেট ধরিয়ে দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, যাদের জন্য এই দেশ সেই বীর যোদ্ধাদের প্রতি অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না।
পরে জেলা প্রশাসক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং মন্ত্রী সবাইকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। সেই দিন দুপুরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহকে নিয়ে মাইজবাড়ী গ্রামের প্রাচীন মসজিদ ও কবরস্থান পরিদর্শন করেন। সেখানে শত শত মানুষ জমায়েত হয়। তিনি মসজিদ সংস্কারের জন্য প্ল্যান পাস করাতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা অনুদান করেন। সৈয়দ মহসিন আলী গ্রামবাসীর অভাব-অভিযোগ শোনেন।
তিনি বন বিভাগের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের টেলিফোনে কবরস্থানের জঙ্গল পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন। এর পর তিনি সরকারি এতিমখানা পরিদর্শনে যান। একজন মন্ত্রীকে পেয়ে এতিম শিশুরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। তিনি সবাইকে স্বস্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এতিম শিশুদের গান শুনে মুগ্ধ হোন।
নিজেও তাদের গান গেয়ে শুনান। তিনি সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ময়লা-নোংরা ভবনের পরিবেশ সুন্দর করে তুলতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। তাৎক্ষণিক এতিমখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। শিশুদের গান শেখানোর জন্য একজন সংগীত শিক্ষক রাখার নির্দেশ দেন এবং তা চালিয়ে যেতে সমাজসেবা অধিদফতরকে নির্দেশ দেন। তিনি এতিমদের ক্রিকেট আর হকি খেলার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলেন।
তার স্বপ্ন সুবিধাবঞ্চিত এতিমদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে জাতীয় দলে খেলার জন্য তৈরি করতে হবে। সন্ধ্যায় হাছন রাজা লোক উৎসবে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবেগ, অনুভূতি, দুঃখ আমি যতটা উপলব্ধি করি তারচেয়ে বেশি উপলব্ধি করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী তার সাধ্যমতো করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদেরও দায়িত্ব আজ একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে জনগণকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর।
তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার ও এতিমদের সঙ্গে একটি দিন কাটানোর কর্মসূচি নিয়ে আসবেন বলে জানান। মন্ত্রী মরমি কবি হাছন রাজা লোক উৎসব মঞ্চে বক্তৃতার শুরুতে অতীতের এই বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজক তিনবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র প্রয়াত কবি মমিনুল মউজদীনের আত্দার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দর্শকসহ সবাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। -আ স ম মাসুম, সুনামগঞ্জ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।