আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থার্ড পার্টি রিক্রুটমেন্ট : ক্রীতদাস প্রথার প্রত্যাবর্তন


দেশে এক ধরনের কম্পানি গজিয়ে উঠেছে। তারা মানুষকে দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিচ্ছে। এই কম্পানিগুলোর গ্রাহক হচ্ছে বাংলাদেশের সব নামকরা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশ্য এই ধারাটি শুরু হয়েছিল বেশ আগে। তখন এই কম্পানি গুলো সরবরাহ করতো শুধুমাত্র সিকিউরিটি গার্ড।

তারপরে এরা ক্লিনার,ড্রাইভার ইত্যাদি সাপ্লায়ার হয়ে দাড়ায়। গ্রামীন ফোনের যে সিকিউরিটি গার্ডটি আপনাকে সালাম ঠুকলো তার পোষাকে কি লোগো দেখেছেন তা একবার মনে করে দেখুন। তা গ্রামীন ফোনের নয় ! সারাদিন,সারা বছর সে গ্রামীন ফোনে চাকরি করলেও তার বেতন কিন্তু সে গ্রামীন ফোন থেকে পায়না। মজার ব্যাপার হচ্ছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বা দেশজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতভাগ নিরাপত্তাকর্মী এখন এভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। একই ভাবে ড্রাইভার,ক্লিনাররাও চাকরি পাচ্ছে।

তাদের চাকরি, বেতন,বদলি,প্রত্যাহার এ সবই করে তাদের নিয়োগদাতা থার্ড পার্টি রিক্রুটিং এজেন্সী গুলো। এই কম্পানি গুলোর শিকার ছিল মূলত শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর একটি জনগোষ্ঠী। তবে এখন আর তা নেই। তারা তাদের শিকার ক্ষেত্র পাল্টাচ্ছে। এখন তাদের টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বা সবে মাত্র পাশ করা শিক্ষিত বেকাররা।

এদেশে ভালো একটা চাকরি পেতে অনেক অপেক্ষা করতে হয় (অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অপেক্ষা বিফলে যায়)। তাই যে কোন চাকরিই বেকারদের কাছে গুরুত্ত্বপূর্ন। ঠিক এই সুযোগটাই রিক্রুটিং এজেন্সীগুলো নেয়। তারা নাম মাত্র বেতনে এদের কে রিক্রুট করে। তারা এই লোকগুলোকে নিয়োগ দেয় বিভিন্ন কম্পানির কাস্টোমার কেয়ারে,কলসেন্টারে,ফিল্ড ওয়ার্কের মত কাজে।

গ্রামীন ফোনের CDM(Customer Demographic Management) ডিপার্টমেন্টের পুরো কাজ এদের দিয়ে করানো হয়। এই রিক্রুটেড লোকগুলোর সাথে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে গোনা অল্প কয়েক জন লোক ও একসাথে কাজ করে। মজাটা হচ্ছে যোগ্যতা ও কাজ এক হলেও রিক্রুটিং এজেন্সীর এমপ্লয়ীরা বেতন পায় তাদের সাথে কাজ করা মূল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের চারভাগের একভাগ । সে টাকা দিয়ে জীবন নির্বাহ তো দুরের কথা,হাত খরচের টাকা ও হয়না। এছাড়া তারা কোম্পানির নিজস্ব সুযোগ সুবিধার অধিকারী ও হয়না ।

তারা সেখানে কাজ করে পরাধীন, অধীকারহীন, অসহায় অবস্থায়। তাদের প্রতি মূল প্রতিষ্ঠানের কোন দায়ীত্ব নেই। সেই প্রতিষ্ঠানে সে বছরের পর বছর চাকরি করে অথচ পরিচয় পত্র বহন করে তার নিয়োগদাতা কম্পানিটির (ভাবুনতো টেলিটকের অফিসে লোকজন কাজ করছে একটেল লেখা পরিচয় পত্র ঝুলিয়ে!)। মাসে একবার রিক্রুটিং এজেন্সীর লোকেরা অফিসে এসে টাকা দিয়ে যায়। এমন অনেক এমপ্লয়ী আছে যারা তাদের রিক্রুটিং এজেন্সীর ঠিকানাটাও জানেননা।

ফোনে চাকরি,ফোনেই নিয়োগ। মূল অফিসে যাবার প্রয়োজনটাও নেই। বাংলাদেশে এই ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্য সম্ভবত মার্কেট এক্সেস,পিপলস্কেপ সবচেয়ে প্রভাবশালী। এরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে অচিরেই নিজের জন্য একজন জেনারেল ম্যানেজার আর একজন পার্সোনাল সেক্রেটারি পানির দরে কিনতে পারবো! জয় হোক দাস ব্যবসার। দাস ব্যবসা জিন্দাবাদ!
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।