হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায়
সকাল সাতটা বাজতেই এলার্ম দেয়া মোবাইলের আর্তচিৎকার। পড়িমড়ি করে বিছানা ছেড়ে মেসের প্রতিদিনের প্রতিযোগিতায় শামিল হওয়া-কার আগে কে টয়লেটে যাবে! একটু পর খবর এল - বুয়া আসেনি। কোন মতে হোটেলে নাশতা খেয়ে এক দৌড়ে ১২ নম্বর বাসে ঝুলে পড়া- মোহাম্মদপুর থেকে কাওরান বাজার। অফিসে ঢুকে বসের ঝারি-এত দেরি কেন? এটা করনি কেন? ওটা কই? তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না!’ বিকেলে আবার সেই ১২ নম্বর, আবার বাদুরঝোলা, আবার মোহাম্মদপুর- এ এক অভিনব জীবনচক্রে জড়িয়ে গেছে মশিউলের জীবন। প্রতিদিনের একই জীবনচিত্র।
কিচ্ছু ভাল লাগে না তার। এটা কোন লাইফ হল! টাকা নাই। পয়সা নাই। গাড়ি-বাড়ির তো প্রশ্নই আসে না। একটা গালফ্রেন্ড পর্যন্ত নাই।
মেস মেম্বার নয়নের আছে প্রেমিকা, তপনের আছে ফোন-ফ্রেন্ড আর জয়ের তো কথাই নেইÑপ্রায়ই সে তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। কি করে ওরা ভিতরে বসে? সবার আছে। আমার নেই। সবার হয়। আমার হয় না কেন? প্রবলেমটা কোথায়?
(২)
- হুম তারপর বল।
- কি বলব? আসলে তোমার সাথে আমি এত এত কথা বলেছি যে আমার সব কথা মনে হয় ফুরিয়ে গেছে। আর আমার বলার চেয়ে শুনতেই বেশি ভাল লাগে। আচ্ছা তোমার একটা ফ্রেন্ড ছিল না ফরহাদ। মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করত। ওর কি খবর?
- জানি না।
- এখন আর যোগাযোগ নেই?
- না, নাই। আর ওর কথা বাদ দাও। ফালতু কোথাকার!
- কে ফালতু আমি নাকি ফরহাদ?
- আররে তুমি তো আমার জান!
ফাহমিদার মুখে এ কথাটা শুনতে মশিউলের অসম্ভব ভাল লাগে। অবাকও লাগে। এত বড় লোকের মেয়ে! অথচ মশিউলকে এত কেয়ার করে! ফাহমিদার সাথে মশিউলের সম্পর্ক প্রায় ছয় মাসের।
একদিন রাতে মেসের সবাই মোবাইলে ব্যস্ত। চুপচাপ বসে ছিল মশিউল। আর তা দেখে বোধহয় খুব মায়া হয়েছিল জয়ের। বলতে গেলে একরকম জোর করেই ফাহমিদার নম্বরটা মশিউলের হাতে ধরিয়ে দিল জয়। সেই থেকে শুরু।
প্রথম প্রথম মশিউলই বেশি কল করত। এখন ফাহমিদাই করে। মশিউলের সাথে কথা না বলে ও একদম থাকতেই পারে না। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ওরা নানান জায়গায় ঘুরতে যায়। হাত ধরাথরি করে হাঁটে।
একসাথে আইসক্রিম খায়। ফুচকা খায়। আস্তে আস্তে মশিউল অনুভব করতে শুরু করেÑতার জীবনটা এখন আর কালারলেস নয়।
(৩)
- কি ব্যাপার? কার সাথে কথা বলছিলে? প্রায় দু’ঘন্টা ধরে ট্রাই করছি।
- ও তাই।
মশিউলের প্রশ্নের কেমন যেন নিঃ¯প্রাণ জবাব দেয় ফাহমিদা। আচ্ছা আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। তোমার সাথে পরে কথা বলি।
আস্তে আস্তে এ কথাগুলো মশিউলের জীবনে রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হতে শুরু করে। কিন্তু ফাহমিদার আচরণে হঠাৎ এ পরিবর্তন কেন? এ “কেন”র জবাব হঠাৎ একদিন পেয়ে যায় মশিউল বসুন্ধরা সিটিতে।
- মশিউল, এই হচ্ছে ফরহাদ। আর ফরহাদ এ হচ্ছে মশিউল। আমার খুব ভাল বন্ধু। বলল ফাহমিদা।
ফরহাদ হাত বাড়িয়ে দেয়, হ্যাঁ, আমি শুনেছি আপনার কথা।
ইউ আর এ ভেরি নাইস পারসন!
- থ্যাঙ্ক ইউ।
একটুপর ওরা চলে গেল। মশিউল একা দাঁড়িয়ে রইল। ফরহাদ আর ফাহমিদা হাঁত ধরাধরি করে হাঁটছে। দেখতে খুব ভাল লাগছে।
একজনের হাত আরেকজনের হাতে। নাহ এভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক না! ভাবে মশিউল। নিজেকে কেমন যেন থার্ড পারসন বলে মনে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।