আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে...
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিআইএর গোপন কারাগারে বন্দিদের ওপর নির্যাতনের দলিলপত্র শেষপর্যন্ত প্রকাশ করলেন না। অভিযুক্ত সিআইএ কর্মকর্তাদেরও অব্যাহতি দিয়েছেন যে কোনোরকম বিচার থেকে। আমরা যারা গুয়ান্তানামোর অকথ্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তারা নিশ্চিতভাবেই হতাশ এ খবরে। কিন্তু শেষ বিচারে এটিই দেশপ্রেম! কারো বিরুদ্ধে যাক কিংবা পক্ষে- বারাক ওবামার কাছে তার দেশের স্বার্থই সবার ওপরে। মুখে মানবাধিকারের ফেনা তোলে যে যেসব সংগঠন, তাদের সেখানে করার কিছু নেই।
তাদের 'মানবাধিকারের মান' পশ্চিমা দেশের জন্য একরকম- কোমল ও নতজানু। তৃতীয় বিশ্বের দেশের জন্য সেটি আবার অন্যরকম- কঠোর ও কঠিন। তৃতীয় বিশ্বের সার্বভৌম গরিব দেশগুলোকে তারা চোখ রাঙাতে দ্বিধা করে না। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কভিত্তিক এমনই এক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এককাঠি এগিয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) প্রয়োজনে বিলুপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের পরামর্শ দেওয়ার ভঙ্গিটি এমন যে, আগামী বছরের প্রতিবেদনে হয়তো তারা খোদ সামরিক বাহিনীকেই বিলুপ্ত করার পরামর্শ দিয়ে দিতে পারে!
গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে কয়েকজন 'চোরের মা'
গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম আঘাতটি এসেছিল দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কয়েকজন সংসদ সদস্যের তরফে।
জাতীয় সংসদে রাশেদ খান মেনন অভিযোগ আনেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছে ডিজিএফআই। তিনি বলেন, ডিজিএফআই কী নির্মমভাবে আব্দুল জলিল, শেখ সেলিম ও মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, তা সকলেরই জানা আছে।
সংসদে মেনন বলেন, 'এখন আমাদের সংসদীয় কমিটি গঠন করে ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। ' আবদুল জলিল, মহিউদ্দিন খান আলমগীরসহ আরো কেউ কেউ সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
উদ্দেশ্য স্পষ্টই ছিল।
ফলে এদের অভিযোগ হালে পানি পায়নি। তবে চক্রটি হালও ছাড়েনি। যদিও তাদের বড়ো গলা শুনে মানুষ হেসেছে নিশ্চিত। দুর্নীতিবাজ এইসব রাজনীতিবিদকে জিজ্ঞাসাবাদের অডিও টেপগুলো এই মুহূর্তে ইন্টারনেটে আপলোড করতে পারছি না ধীরগতির সংযোগের কারণে। যারা এর আগে টেপগুলো শুনেছেন, তাদের নতুন করে কিছু বলার নেই।
যারা শোনেননি, তারা যদি শুনতেন, রাশেদ খান মেননদের অভিযোগের অন্তঃসারশূন্যতা সহজেই বুঝতে পারতেন।
বেছে বেছে রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর সংস্থাগুলোই টার্গেট
ডিজিএফআই বা ডাইরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স বাংলাদেশের একমাত্র সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু সম্ভব, তা বাস্তবায়ন করাই তাদের মূল কাজ। একইসঙ্গে সামরিক বিষয়াদিও তারা দেখাশোনা করে। সামরিক বাহিনী নিজেরা বেতন-ভাতা-সুযোগ-সুবিধা-অবকাঠামো দিয়ে কিছু লোক পোষে, যার পোশাকি নাম ডিজিএফআই, আর তাদের অন্যতম কাজ হচ্ছে সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা খুঁজে বের করা।
বাংলাদেশে আর কোনোখানে আপনি এইরকম উদাহরণ পাবেন?
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ এক অবিশ্বাস্য অভিযান চালিয়ে ডিজিএফআই ও অন্য সংস্থাগুলো একইসঙ্গে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, অসৎ আমলা, অসাধু ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত- সবারই চক্ষুশূল হয়েছে। নির্বাচনের পর থেকেই আবদুল জলিল-তারেক রহমান, রাশেদ খান মেনন-মখা আলমগীর, জাপা-জামাত, আমলা-ব্যবসায়ী- সবাই ডিজিএফআইকে একহাত দেখে নিতে চাইছে। রাশেদ খান মেনন-আবদুল জলিল থেকে মার্কিন মুল্লুকের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ - সবারই স্বর এই এক জায়গায় একই।
এলিট ফোর্স র্যাব নিয়ে কথা উঠেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই এলিট ফোর্সকেও বিলুপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছে।
অভিযোগ 'ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন'। এনকাউন্টারে র্যাব কর্মকর্তাদের কার কী স্বার্থ আছে, আমার জানা নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতোটা নাজুক হয়ে উঠলে, সন্ত্রাসী তৎপরতা কতোটা ভয়ংকর হয়ে উঠলে, সরকারকে র্যাবের মতো এলিট ফোর্স গঠন করতে হয় এবং সেই এলিট ফোর্সকে এনকাউন্টারের মতো চরমপন্থার আশ্রয় নিতে হয় - তা আমাদের কারোরই অজানা নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন নিজেই গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, 'সন্ত্রাসীরা পুলিশের চেয়ে র্যাবকেই বেশি ভয় পায়। কার্যক্ষেত্রে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ বা দমনে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের প্রয়োজন আছে। '
এই মুহূর্তে সরকারের জরুরি কাজ হচ্ছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টের কড়া প্রতিবাদ জানানো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে কঠোর ভাষায় জানিয়ে দিতে হবে, একটি সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সম্পর্কে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো একটি সংস্থা এ ধরনের চরম আপত্তিকর মন্তব্য করতে পারে না।
আগামী পর্বে : গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি ধোঁয়া তুলসীপাতা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।