আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একিট জাতীয় ননে-েনরিাপদ দবিসরে ভাবনা

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

একটি জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবসের ভাবনা রেজা ঘটক বাংলাদেশ একটি নদীমার্তৃক দেশ। আর নৌ-যান যেমন লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার, ইঞ্জিন নৌকা, নৌকা ইত্যাদি দেশের অন্যতম প্রধান নৌ-যানবাহন। বিশেষ করে দেশের গোটা দণিাঞ্চল যেমন বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, বাগেরহাট, খুলনা, পটুয়াখালী, ভোলা ইত্যাদি জেলার মানুষজনকে নৌ-যানেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করতে হয়। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের দণিাঞ্চলের মানুষজনকে নৌ-পথে যোগাযোগ করেই জীবনযাপন অতিবাহিত করতে হয়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি অন্যতম প্রধান বাধা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকা সত্ত্বেও নৌ-পথে যোগাযোগ না করে এই অঞ্চলের মানুষের বিকল্প কোনো উপায়ও নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে যেমন আছে ঘুর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস, কাল বৈশাখী, প্লাবন, ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি রয়েছে ত্র“টিপূর্ণ নৌ-যান, ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্রফেশনাল নৌ-চালকের অভাব, নৌ-যানে প্রকুতিক দুর্যোগ বা কোন ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলা করার মতো প্রয়োজনীয় লাইফ জ্যাকেট, ছোট নৌকা, বায়া, বা সরঞ্জামের অভাব, নৌ-চালকদের খামখেয়ালীপনা, নৌ-মালিকদের অশুভ এবং অমানবিক দৌরাত্ম ও চক্রান্ত, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই, নৌ-চালক ও নৌ-যাত্রীদের প্রাকুতিক দুর্যোগ বা বড় থরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলা করার মতো ধৈর্য এবং প্রশিণের অভাব, ঘাট ও রুট দখলের রাজনৈতিক খেলা ও প্রচলিত দখল কালচার, সর্বপরি সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ নৌ-চলাচল দেশের দণিাঞ্চলের মানুষের নিত্য সঙ্গী। আর নৌ-যান নৌ-যাত্রী, নৌ-চালক ও নৌ-মালিক কেন্দ্রীক জটিল এই চক্রটি বারংবার নৌ-দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে কেবলমাত্র একটি কেন্দ্র্রীয় মনিটরিং সেলের উপযুক্ত কাযৃক্রমের অভাব থেকেই। দেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে, প্রায় প্রত্যেকটির জন্যই প্রথমেই জবাবদিহিতা থাকার কথা নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের।

কোন রাষ্ট্রের একটি নির্বচিত সরকার কাঠামো নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা অমন উদাসীনতাকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। নৌ-মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত বাজেটের টাকা তাহলে বছরের পর বছর কোথায় খরচ হয়? আর তারা কেন প্রচলিত আইন ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দিয়ে বারবার দায় এড়ানোরই কেবল চেষ্টা করবে? নৌ-মালিকদের দৌরাত্ম, নৌ-চালকদের খামখেয়ালীপনা, ত্র“টিপূর্ণ নৌ-চলাচলের সুযোগ এবং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ব্যাপারটি নৌ-মন্ত্রণালয়ের বাইরে কেন? তাহলে কি রাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী মন্ত্রণালয়ের চেয়েও গুটিকয় নৌ-মালিকদের লিঁয়াজো বা কনসোর্টিয়াম অনেক বেশি শক্তিশালী? আর সে কারণে তারা আইনকে বুদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে বা অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখাতে সম হয়? আলটিমেটলি দেশের নৌ-দুর্ঘটনার কারণে জীবনহানী ও মৃত্যৃর জন্য শেষ পর্যন্ত জনসাধারণকে জবাবদিহিতার প্রশ্নে সরকারকেই এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে আর কোন ব্যর্থতা থেকে নৌ-দুর্ঘটনায় হাজার হাজার প্রণহানী দেখতে চাই না। সর্বপরি এই জটিল চক্রান্তের কারসাজিতে সৃষ্ট নৌ-দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের আত্মীয় বা স্বজনদের চিরকালের জন্য হারাতে চাই না। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে, বিশেষ করে চৈত্র, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য মাসের কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বড় বড় নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে।

আর এতে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ অকালে প্রাণ হারায়। ২০০৪ সালের ২৩ মে চাঁদপুরের নিকট মেঘনা নদীতে সংঘটিত জোড়ালঞ্চ ডুবির ঘটনায় প্রাণহানীর সংখ্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের একটি অংশ হিসেবে আমরা প্রতি বছর ২৩ মে কে সামনে রেখে নিহত স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনা করি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে। তার আগে আমরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হই। আর শোক র‌্যালি করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত যাই।

মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের পর আমরা নিহত স্বজনদের জন্য প্রতি বছরই ১ মিনিট নিরবতা পালন করে থাকি। নিহতদেও আত্মার চিরশান্তি কামনা করে থাকি। এ বছরও আমরা নিহতদেও স্বজনরা ২৩ মে অন্তত এই কর্মসূচি টুকু পালন করব। প্রতি বছর ২৩ মে দিনটিকে আমরা এভাবে পালন করার প্রধান উদ্দেশ্য হলÑ নৌ-যাত্রী, নৌ-চালক, নৌ-মালিক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহকে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা। দেশের সংবাদত মাধ্যমগুলো এই প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন কওে আসছে।

সারাবিশ্বে প্রতি বছর বিশ্ব নৌ-নিরাপত্তা দিবস পালন করা হয়। ওই দিবসেরও প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সর্বসাধারণকে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ নদীমার্তৃক ও নৌ-যান নির্ভও দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে কোনো জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস পালিত হয় না। সরকারিভাবে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কোনো গণসচেতনতা কার্যক্রমও পালন করা হয় না। কেবল বড় কোনো নৌ-দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন মিডিয়া ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও নৌ-মালিক-পালকদেও নিয়ে এক ধরনের লোক দেখানো ব্যস্ততা জাহির করা হয়।

এরপর আবারও দেশে নৌ-দুর্ঘটনা একই কারণে ঘটে এবং সরকার সর্বোচ্চ তদন্ত কমিটি গঠন পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। আসল কাজের কাজ কিছুই হয় না। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবারো শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে সরকার গঠন করে। এবারের সরকারের কাছে জনসাধারণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির তালিকা নিঃসন্দেহে অনেক। আমাদের বিশ্বাস সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন।

একটি দেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার কেবল সদিচ্ছা থাকলেই রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড় বড় কাজ যেমন করতে পারে, তেমনি অনেক বড় বড় পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের জন্য এই সরকারকে অনেক বেশি দায়িত্ববান হতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি বর্তমান সরকার এ বছর নৌ-সপ্তাহ পালন করবে। আমরা চাই উদ্দেশ্যহীন নৌ-সপ্তাহ পালনের চেয়ে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালন করাই হবে অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত। নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালনের জন্য সপ্তাহ ব্যাপী নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় যে পরিমাণ অর্থ সারা দেশে খরচ করবে, তা যদি নৌ-যাত্রী, নৌ-চালক, নৌ-মালিক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর কার্যকর কোনো দিক নির্দেশনা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালন সার্থক হবে। নইলে কতিপয় আওয়ামী দুস্কৃতদের ও নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেট ভারী করার জন্য বিশাল সরকারি অর্থের অপচয় কোনো শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না।

সরকারিভাবে নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালনের এই উদ্দ্যোগে দেশের দণিাঞ্চলের মানুষজন নিশ্চয়ই অনেক প্রাপ্তি পত্যাশা করছে। আমরা নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের একটি অংশ সকল নৌ-দুর্ঘটনায় নিহতদের জাতীয়ভাবে স্বরণ করার জন্য সরকারের কাছে একটি ছোট্ট দাবী পেশ করতে চাই। ২৩মে কে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস ঘোষণা করা হোক। সেেেত্র ২৩ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত প্রতি বছর নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালন করা যেতে পারে। জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবসে সারা বাংলাদেশের মানুষকে আমরা যদি নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর কৌশল সম্পর্কে গণসচেতনতা সুষ্টি করা সম্ভব হয়, তাহলে ভবিষ্যতে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানো যেমন অনেকাংশে সহজ হবে, তেমনি নৌ-আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন তথা নৌ-মালিক, নৌ-চালকদেও স্বেচ্ছাচারিতা ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের মতো আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার প্রচলিত অভ্যাসকে ভেঙে অনেক নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে এবং নিরীহ অনেক মানুষের জীবন রার কাজটিও পালিত হবে।

আমরা দণিবঙ্গের মানুষজন যখন লঞ্চে উঠি, জীবনটাকে হাতে নিয়েই উঠি। বাঁচা মরা সবকিছু তখন লঞ্চ-চালক ও লঞ্চ-মালিকদের ইচ্ছার উপরে বর্তায়। অথচ, সরকারিভাবে এই দুঃসাধ্য বিষয়টির আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা করা হল না। আমরা নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনরা সরকারের কাছে ২৩ মে কে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস ঘোষণার দাবী জানাচ্ছি। ২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস হিসেবে পালিত হলে ওই দিনে নিহত নিরীহ মানুষগুলোর অত্মা অন্ত শান্তি পাবে।

প্রতি বছর ২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস পালন করতে হবেÑ এটাই বর্তমান সরকারের কাছে দণিাঞ্চলের মানুষের এই সময়ের প্রাণের দাবী। পাশাপাশি, নৌ-মন্ত্রণালয়ের নের্তৃত্বে দেশে একটি সুষ্টু, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও ঝুঁকিমুক্ত নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ উদ্দ্যোগ ও তার বাস্তবায়ন করা হোক। প্রয়োজনে একটি আধুনিক নৌ-চলাচল আইন কওে সে অনুযায়ী কার্যকরী পদপে নেওয়া হোক। নৌ-দুর্ঘটনা থেকে কোনো অনাকাঙ্খত মৃত্যু আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা একটি নৌ-বান্ধব নৌ-চলাচল আইনের সরকারি বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

যা থেকে পৃথিবীর অন্য অনেক নৌ-প্রধান দেশ যাতে আমাদেও অনুকরণ করতে পাওে সেই লে আমাদেও এগিয়ে যেতে হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.