বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
প্রাচীন গ্রিক কবি অ্যানাক্রিওন।
জীবনে দুজন শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক পেয়েছিলেন বলে জীবনভর লিরা বাজিয়ে ও মদ্যপান করে সুখি ও আনন্দিতই ছিলেন প্রাচীন গ্রিক কবি অ্যানাক্রিওন; কবির কেবল ভয় ছিল বৃদ্ধ বয়েসের দুর্দশাকে ...
সিগহাজিক জায়গাটি বর্তমান তুরস্কে। প্রাচীনকালে জায়গাটি পরিচিত ছিল এশিয়া মাইনর হিসেবে; এশিয়া মাইনরেই ছিল আইওনিয় গ্রিক বন্দর নগরী-তেয়স।
এশিয়া মাইনর; লক্ষ করুন উত্তরে থ্রাস।
ঐ বন্দর নগরী তেয়সেই খ্রিস্টপূর্ব ৫৬০ সালে জন্ম নেন আইওনিয় গীতিকবি অ্যানাক্রিওন- যদিও তাঁর জীবন সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু (মানে, ইনডিটেইলস) জানা যায়নি। ৫৪৫ খ্রিস্টপূর্বে পারস্যের সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট এশিয়ার গ্রিক নগরগুলো আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। তখন সেই উদ্বেগ বাতাসে ছড়িয়ে তিয়সে পৌঁছায়। দলে দলে তেয়সবাসী তেয়সের উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে থ্রাসের অ্যাবডেরা নামে একটি স্থানে পৌঁছে (উপরের মানচিত্র দেখুন) ।
কবি অ্যানাক্রিওনও সেই উদ্বাস্তু দলে ছিলেন সম্ভবত পরিবারসমেত। তেয়সবাসী অ্যাবডেরায় একটি উপনিবেশ তৈরি করে; পরে অ্যাবডেরায় দার্শনিক প্রোটাগোরাসের ( যিনি বাক্যের পাটর্স অভ স্পিচ আবিস্কার করেছিলেন আর বলেছিলেন, ম্যান ইজ দ্য মেজার অভ অল থিঙ্কস্) অ্যাবডেরা নগরে দার্শনিক প্রোটাগোরাসের জন্ম হওয়ায় স্থানটি ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। যা হোক। থ্রাস থেকে পরে অ্যানাক্রিওন চলে আসেন সামোস দ্বীপে (উপরের মানচিত্র দেখুন) । দ্বীপটি এজিয়ান সমুদ্রের পুবে-সেকালে ব্যবসা-বানিজ্যের মূলকেন্দ্র ছিল।
যা হোক। সামোস দ্বীপের শাসক ছিলেন পলিক্রেটাস। গ্রিক ইতিহাসে পলিক্রেটাস আজও স্বৈরাচারী বলে চিহ্ণিত। কবি হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়েছিল অ্যানাক্রিওন-এর সে কারণেই কি না কে জানে পলিক্রেটাস-এর শিক্ষক নিযুক্ত হলেন অ্যানাক্রিওন...আসলে গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস তেমনই লিখেছেন। সামোস দ্বীপের রাজপ্রাসাদের তারপর লিরা বাজিয়ে ও মদ্যপান করে সুখি ও আনন্দিত জীবন শুরু হল কবির।
কবির কেবল ভয় ছিল বৃদ্ধ বয়েসের দুর্দশাকে .. সেই উদ্বেগ এড়িয়ে ঘাসফড়িং-এর জীবন পর্যবেক্ষণ করা ও প্রাকৃতিক বসন্তের শুভাশুভ নির্নয়। যাক। এক মাঘে শীত যায় না। আশ্রয়দাতা স্বৈরাচারী পলিক্রেটাস- এর মৃত্যু হল। স্বৈরাচারের মৃত্যুর পর অ্যানাক্রিওন ফিরে যান জন্মনগর তেয়স-এ।
তেয়সেই ৪৮৫ খ্রিস্টপূর্বে মারা যান তিনি। কবি হিসেবে গ্রিকবিশ্বে খ্যাতি ছড়িয়েছিল; বন্ধু ছিলেন গ্রিক রাজনীতিবিদ প্লেরিক্লিসের বাবার। কাজেই, এথেন্সে অ্যাক্রোপলিসে গড়া হয়েছিল কবির একটি ভাস্কর্য।
এখন অ্যানাক্রিওন এর দুটি কবিতা পাঠ করা যাক।
বসন্ত
দেখ, বসন্ত মেলেছে তারে।
আর, তার মাধুর্য যেন গোলাপসম।
দেখ কী ভাবে অপার সমুদ্র
তার স্ফীত ঢেউকে করে শান্ত।
দেখ, হাঁসেদের অপরুপ সাঁতার;
আবার এসেছে তারা শীতের ঘর থেকে।
দেখ, কীভাবে টাইটানের আনন্দিত রশ্মি
সরিয়ে দিচ্ছে কালো মেঘমালা।
বসন্তের সবুজ পোশাকে এখন
কৃষকের ঘামশ্রমও দেখি!
কামুক পৃথিবী এখন হয়ে আছে ঘন
প্রতি প্রহরে জন্ম দিচ্ছে নবীন শস্যের।
এখন জলপাই ফলে -দ্রাক্ষাকুঞ্জ
এখন উজ্জ্বল ঝুলন্ত ফলে।
ফলন্ত পাতা আর প্রতিটি ডালে
সজীব বেগুনি ফুল।
মূল গ্রিক থেকে অনুবাদ: টমাস স্ট্যানলি (১৬৫১)
১৮৪৮ সালে শিল্পী জ্যাঁ লিও জেরোমের আঁকা কবি অ্যানাক্রিওন।
ঘাস ফড়িং
সুখি পতঙ্গ! তোর কি সুখের সীমা নেই রে?
স্বর্গীয় পুষ্টি পেয়ে পেয়ে আর পান করে
ভোরের শিশিরের শান্ত মদ?
প্রকৃতি আজও শান্তভাবে ভরে তোর মেদুর পেয়ালা;
যেখানেই যাস তুই-সুরার দেবতা তোর পিছু পিছু যায়।
তুই পান করিস, নাচিস আর গাস গান
সুখিতম রাজার চেয়েও সুখি তুই!
সমস্ত প্রান্তর তোর সমস্ত উদ্ভিদও তোর;
গ্রীষ্ম যা উৎপন্ন করে- সেসবও তোর;
এমন কী উর্বরতার প্রাথমিক মদও তোর।
তোর জন্য লোকে চাষবাস করে
সবাই কৃষক আর তুইই ভূস্বামী!
তোর এই নিরীহ সুখ
তোর এই নিরন্তর বিলাস
মেষপালকের সঙ্গী তুই
আনন্দময় এক সামঞ্জস্য
তোর এই প্রসন্নতা
ভরা ঋতুর প্রতিবেদক তুই
দেবদেবীর ভালোবাসা।
তোর প্রতি জগতের আর্শীবাদ
জীবন তোর সুখের চেয়ে দীর্ঘ নয়।
সুখি পতঙ্গ! তোর কি সুখের সীমা নেই রে?
শীত কি জরা চেনে না তোকে
যখন তুই পান করিস নাচিস গাস
ফুলেল পাতারা সব আনন্দে জাগে।
হে, লোলুপ আনন্দপায়ী পতঙ্গ
গ্রীষ্মের উৎসবে তৃপ্ত
এখন তা হলে তুই বিশ্রামে যা!
মূল গ্রিক থেকে অনুবাদ: আব্রাহাম কোওলি (১৬১৮-১৬৬৭)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।