আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রজন্মের কণ্ঠস্বর শুনছে না বিএনপি!

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে সারাদেশ যখন টালমাটাল, স্বার্থান্ধ রাজনীতির বাইরে থেকে তরুণ প্রজন্ম যখন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ না ছাড়ার বজ্রকঠিন শপথ নিয়েছে, তখন বিএনপি নেতারা রাজনীতির পুরনো ভাঙা বাঁশি বাজিয়েই চলেছেন। জনতার মহাজাগরণের পেছনে এখনও তারা খুঁজছেন আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নবপ্রজন্মের এই বিস্ময়কর আন্দোলনের মর্মবাণী অনুধাবনে ব্যর্থ কিংবা বুঝতেই চাইছেন না বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা। গতকালও পুরনো কথা ও সুরের ডুগডুগি বাজিয়েছেন তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি নেতারা মুখে যাই বলুন, শাহবাগের মহাগণজাগরণে তারা ভেতরে ভেতরে রীতিমতো ঘামছেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব ও তৃণমূলের কর্মীরা মনে করছেন, জামায়াতের সঙ্গে সখ্যের কথা ভাবার আর সময় নেই, কালের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে বিএনপিকে। অন্যথায় অনতিক্রম্য এক রাজনৈতিক সংকটে পড়বে দেশের অন্যতম এই প্রধান দলটি। শাহবাগে জনতার আন্দোলন বিষয়ে গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে 'স্পষ্ট' করে কিছু বলেননি।

প্রশ্ন ছিল, শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? মির্জা ফখরুল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, 'আমরা তো আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছি, গণআন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও অর্জিত স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে জনগণের আন্দোলন চলছে। এই সংগ্রামের বিজয় হবেই। ' কারাগার থেকে মুক্তির পর শুক্রবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তার এ মন্তব্য ধান ভানতে শিবের গীত বলে অনেকের মনে হতে পারে।

একই বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও। প্রকৃত প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি অন্য প্রসঙ্গে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে সরকার 'দ্বৈতনীতি' অনুসরণ করছে। তারা (সরকার) যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আইন করেছে। ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। এখন যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে সরকার নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই পড়েছে।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বদেশ জাগরণ পরিষদের উদ্যোগে 'পদ্মা সেতুর দুর্নীতির দায় জনগণ নেবে না' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অবশ্য বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগসহ সারাদেশে গণজাগরণে 'মহাসংকটে' পড়েছে দলটি। আসলে 'শ্যাম রাখি, না কুল রাখি...' অবস্থায় পড়েছে দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ও আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে জামায়াতকে জোটে ধরে রাখতে চায় তারা। আবার যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুতে তরুণ প্রজন্মের আবেগ-অনুভূতি-দেশপ্রেমকেও সম্মান করতে চায় দলটি।

এ ধরনের স্ববিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি অনেককে হতাশ করেছে। নেতারা জানান, এখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি নিয়ে দলের মধ্যে চলছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। প্রতিষ্ঠার পর চৌত্রিশ বছরেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি দলটির নেতাকর্মীরা। গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন অনেকে। সার্বিক পরিস্থিতিতে শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণের বিষয়টি আপাতত 'পর্যবেক্ষণের কৌশল' নিয়েছেন তারা।

গত ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদ াদেশের পর বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের পরও নীরব রয়েছে দলটি। হাইকমান্ডের 'গ্রিন সিগন্যাল' না থাকায় ইচ্ছা থাকলেও প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছেন না দলের অনেক সিনিয়র নেতা। 'বিব্রতকর' পরিস্থিতি : দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দলের সমর্থক এবং নেতাকর্মীরা মনে করেন, কালবিলম্ব না করে বিএনপিকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত।

পাশাপাশি এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে লাভ বিএনপির হবে বলে মনে করেন তারা। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এবং তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই মনোভাবই স্পষ্ট। শুক্রবার বিকেলে আহসানুল হাই নামে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরিজীবী এক ব্যক্তি বিএনপি কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের কাছে আসেন। রিজভী আহমেদকে না পেয়ে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার অনুরোধ করতে তিনি এখানে এসেছেন। তিনি শুধু বিএনপির সমর্থক।

তিনি জানান, একই বিষয়ে কথা বলতে সকালে উত্তরায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বাসায়ও যান তিনি। নেতাকর্মীর ভিড় থাকায় কথা বলতে পারেননি। দলের হাইকমান্ড এখনও নিজেদের তত্ত্বাবধায়ক দাবি ও আগামী নির্বাচনের ভোটের হিসাব-নিকাশের বাইরে যেতে রাজি নন। তারা এখনও মনে করছেন, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীকে তাদের বড় প্রয়োজন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কেউ কেউ শাহবাগের আন্দোলনকে সরকারি দলের ইন্ধনে হচ্ছে বলে অভিমত দিয়েছেন।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জামায়াতের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে সাময়িক ভুল বোঝাবুঝির অবসান করেন বলে জানা গেছে। ক্ষুব্ধ জামায়াত ফখরুলকে বলেছে, জোটে রাখতে চাইলে জামায়াতের দুর্দিনে বিএনপিকে পাশে থাকতে হবে। একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে। জামায়াতবিরোধী শক্তির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিএনপিকে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

এ অবস্থায় বিএনপি হাইকমান্ড জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। জামায়াতের দুঃসময়ে বিএনপি তাদের পাশে আছে_ তা বোঝাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এ লক্ষ্যেই হঠাৎ করে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির মাঝেই আজ শনিবার রাজধানীতে ১৮ দলের সমাবেশ ডাকা হয়। এর নেপথ্যে জামায়াতের 'অভিমান' ভাঙানোর কৌশল ছিল বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ১৮ দলের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।

পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি বলে দাবি করেছে বিএনপি। জানা গেছে, বিএনপি- জামায়াতের এ কর্মসূচিকে ঘিরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে, বিষয়টি খালেদা জিয়াকে অবহিত করা হয়। পরে সমাবেশ স্থগিত করার ইঙ্গিত আসে হাইকমান্ড থেকে। বুধবার রাতে খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলামকে গুলশান কার্যালয়ে তলব করে এ সমাবেশ ডাকার সিদ্ধান্ত দেন। এতে কিছুটা হলেও জামায়াত-বিএনপিকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির বিষয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি কাটবে বলে মনে করছে দলের হাইকমান্ড।

বৃহস্পতিবার সকালে এ কর্মসূচি ঘোষণা করার পর রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ১৩ ফেব্রুয়ারি গণমিছিলের আরেকটি কর্মসূচি যুক্ত করা হয়। শাহবাগ ইস্যুতে আগের 'অবস্থান' থেকে কিছুটা সরে আসছে : যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জনতার আন্দোলন নিয়ে বিএনপি নেতারা তাদের অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছেন। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রথম দু'দিনের আন্দোলনে তাদের মনে হয়েছিল, এটি সরকারের ইন্ধনে আন্দোলন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার থেকে তারা মনে করছেন, এ আন্দোলন আর সরকারের হাতে নেই। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জোট রক্ষা করতে গিয়ে এ বিষয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারছে না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে জোট ভেঙে যাবে। নির্বাচনী হিসাব করে জোট রাখতে গেলে অবস্থান পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়। তাই আপাতত বিএনপি একটি গোঁজামিলের অবস্থানেই থাকছে। আজ নয়াপল্টনে ১৮ দলের সমাবেশেও যুদ্ধারপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি জামায়াত নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন বহন না করতে বিএনপির পক্ষ থেকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে সারাদেশ যখন টালমাটাল, স্বার্থান্ধ রাজনীতির বাইরে থেকে তরুণ প্রজন্ম যখন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ না ছাড়ার বজ্রকঠিন শপথ নিয়েছে, তখন বিএনপি নেতারা রাজনীতির পুরনো ভাঙা বাঁশি বাজিয়েই চলেছেন।

জনতার মহাজাগরণের পেছনে এখনও তারা খুঁজছেন আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নবপ্রজন্মের এই বিস্ময়কর আন্দোলনের মর্মবাণী অনুধাবনে ব্যর্থ কিংবা বুঝতেই চাইছেন না বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা। গতকালও পুরনো কথা ও সুরের ডুগডুগি বাজিয়েছেন তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি নেতারা মুখে যাই বলুন, শাহবাগের মহাগণজাগরণে তারা ভেতরে ভেতরে রীতিমতো ঘামছেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন।

বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব ও তৃণমূলের কর্মীরা মনে করছেন, জামায়াতের সঙ্গে সখ্যের কথা ভাবার আর সময় নেই, কালের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে বিএনপিকে। অন্যথায় অনতিক্রম্য এক রাজনৈতিক সংকটে পড়বে দেশের অন্যতম এই প্রধান দলটি। শাহবাগে জনতার আন্দোলন বিষয়ে গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে 'স্পষ্ট' করে কিছু বলেননি। প্রশ্ন ছিল, শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? মির্জা ফখরুল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, 'আমরা তো আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছি, গণআন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও অর্জিত স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে জনগণের আন্দোলন চলছে।

এই সংগ্রামের বিজয় হবেই। ' কারাগার থেকে মুক্তির পর শুক্রবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তার এ মন্তব্য ধান ভানতে শিবের গীত বলে অনেকের মনে হতে পারে। একই বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও। প্রকৃত প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি অন্য প্রসঙ্গে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে সরকার 'দ্বৈতনীতি' অনুসরণ করছে।

তারা (সরকার) যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আইন করেছে। ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। এখন যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে সরকার নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই পড়েছে। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বদেশ জাগরণ পরিষদের উদ্যোগে 'পদ্মা সেতুর দুর্নীতির দায় জনগণ নেবে না' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অবশ্য বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগসহ সারাদেশে গণজাগরণে 'মহাসংকটে' পড়েছে দলটি।

আসলে 'শ্যাম রাখি, না কুল রাখি...' অবস্থায় পড়েছে দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ও আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে জামায়াতকে জোটে ধরে রাখতে চায় তারা। আবার যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুতে তরুণ প্রজন্মের আবেগ-অনুভূতি-দেশপ্রেমকেও সম্মান করতে চায় দলটি। এ ধরনের স্ববিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি অনেককে হতাশ করেছে। নেতারা জানান, এখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি নিয়ে দলের মধ্যে চলছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

প্রতিষ্ঠার পর চৌত্রিশ বছরেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি দলটির নেতাকর্মীরা। গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন অনেকে। সার্বিক পরিস্থিতিতে শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণের বিষয়টি আপাতত 'পর্যবেক্ষণের কৌশল' নিয়েছেন তারা। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদ াদেশের পর বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের পরও নীরব রয়েছে দলটি।

হাইকমান্ডের 'গ্রিন সিগন্যাল' না থাকায় ইচ্ছা থাকলেও প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছেন না দলের অনেক সিনিয়র নেতা। 'বিব্রতকর' পরিস্থিতি : দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দলের সমর্থক এবং নেতাকর্মীরা মনে করেন, কালবিলম্ব না করে বিএনপিকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। পাশাপাশি এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে লাভ বিএনপির হবে বলে মনে করেন তারা। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এবং তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই মনোভাবই স্পষ্ট।

শুক্রবার বিকেলে আহসানুল হাই নামে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরিজীবী এক ব্যক্তি বিএনপি কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের কাছে আসেন। রিজভী আহমেদকে না পেয়ে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার অনুরোধ করতে তিনি এখানে এসেছেন। তিনি শুধু বিএনপির সমর্থক। তিনি জানান, একই বিষয়ে কথা বলতে সকালে উত্তরায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বাসায়ও যান তিনি। নেতাকর্মীর ভিড় থাকায় কথা বলতে পারেননি।

দলের হাইকমান্ড এখনও নিজেদের তত্ত্বাবধায়ক দাবি ও আগামী নির্বাচনের ভোটের হিসাব-নিকাশের বাইরে যেতে রাজি নন। তারা এখনও মনে করছেন, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীকে তাদের বড় প্রয়োজন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কেউ কেউ শাহবাগের আন্দোলনকে সরকারি দলের ইন্ধনে হচ্ছে বলে অভিমত দিয়েছেন। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জামায়াতের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে সাময়িক ভুল বোঝাবুঝির অবসান করেন বলে জানা গেছে।

ক্ষুব্ধ জামায়াত ফখরুলকে বলেছে, জোটে রাখতে চাইলে জামায়াতের দুর্দিনে বিএনপিকে পাশে থাকতে হবে। একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে। জামায়াতবিরোধী শক্তির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিএনপিকে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ অবস্থায় বিএনপি হাইকমান্ড জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। জামায়াতের দুঃসময়ে বিএনপি তাদের পাশে আছে_ তা বোঝাতে তৎপর হয়ে উঠেছে।

এ লক্ষ্যেই হঠাৎ করে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির মাঝেই আজ শনিবার রাজধানীতে ১৮ দলের সমাবেশ ডাকা হয়। এর নেপথ্যে জামায়াতের 'অভিমান' ভাঙানোর কৌশল ছিল বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ১৮ দলের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি বলে দাবি করেছে বিএনপি। জানা গেছে, বিএনপি- জামায়াতের এ কর্মসূচিকে ঘিরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে, বিষয়টি খালেদা জিয়াকে অবহিত করা হয়।

পরে সমাবেশ স্থগিত করার ইঙ্গিত আসে হাইকমান্ড থেকে। বুধবার রাতে খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলামকে গুলশান কার্যালয়ে তলব করে এ সমাবেশ ডাকার সিদ্ধান্ত দেন। এতে কিছুটা হলেও জামায়াত-বিএনপিকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির বিষয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি কাটবে বলে মনে করছে দলের হাইকমান্ড। বৃহস্পতিবার সকালে এ কর্মসূচি ঘোষণা করার পর রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ১৩ ফেব্রুয়ারি গণমিছিলের আরেকটি কর্মসূচি যুক্ত করা হয়। শাহবাগ ইস্যুতে আগের 'অবস্থান' থেকে কিছুটা সরে আসছে : যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জনতার আন্দোলন নিয়ে বিএনপি নেতারা তাদের অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছেন।

কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রথম দু'দিনের আন্দোলনে তাদের মনে হয়েছিল, এটি সরকারের ইন্ধনে আন্দোলন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার থেকে তারা মনে করছেন, এ আন্দোলন আর সরকারের হাতে নেই। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জোট রক্ষা করতে গিয়ে এ বিষয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারছে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে জোট ভেঙে যাবে। নির্বাচনী হিসাব করে জোট রাখতে গেলে অবস্থান পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়।

তাই আপাতত বিএনপি একটি গোঁজামিলের অবস্থানেই থাকছে। ১৮ দলের সমাবেশেও যুদ্ধারপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি জামায়াত নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন বহন না করতে বিএনপির পক্ষ থেকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.