সিগারেট ফুঁকে মৃত্যুকে আহ্বান
ফকির ইলিয়াস
=======================================
‘সিগারেটের নেশা কেড়ে নিতে পারে আপনার জীবন। কিংবা আপনি বরণ করতে পারেন পঙ্গুত্ব’- এ বাণীগুলো শোভা পাচ্ছে নিউইয়র্ক মহানগরীর যত্রতত্র। আসছে গ্রীষ্মকালকে সামনে রেখে ‘ধূমপান বর্জন’ ক্যাম্পেইন বেশ জোরালো করেছে নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিতরণ করছে বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে ধূমপান নিরোধক ‘নিকোটিন প্যাঁচ এবং গাম’। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাবেশ করছে বিভিন্ন মানবকল্যাণমূলক সংগঠন।
ধূমপান বর্তমান বিশ্বে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি। এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৩ লাখেরও বেশি প্রাণহানি ঘটে ধূমপানজনিত ব্যাধিতে। পঙ্গুত্ববরণ করে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ।
গেল কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে একটি ক্ষতিপূরণ মামলা হয়েছিল সিগারেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। সম্মিলিত এই ‘ল স্যুট’-এ বাদী ছিলেন হাজার হাজার ধূমপানকারী পুরুষ-নারী।
তাদের বক্তব্য ছিল, ধূমপান করে তারা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেউ কেউ মারাত্মক রোগে ভুগছেন। কিন্তু মামলাটি ধোপে টেকেনি। উচ্চ আদালতে যাওয়ার আগেই খারিজ হয়ে গেছে।
ধূমপানে ভুক্তভোগীদের কাহিনী আমরা সবাই জানি কম-বেশি।
নিউইয়র্কের পাতাল রেলে কিংবা বড় বড় ভবনগুলোর বিলবোর্ডে এর বিরুদ্ধে শ্লোগান চিত্রগুলো দেখলে প্রাণ কেঁপে ওঠে। ধূমপানের ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে হাতের অর্ধেক কেটে ফেলতে হয়েছে এক মহিলার। কিংবা শ্বাসনালি কেটে ফেলা কোনো পুরুষ সহযাত্রীর কৃত্রিম ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে প্রশ্বাস নেয়ার দৃশ্যটি দেখতে কতই মর্মবিদারক!
বিশ্বে সিগারেট ব্যবসা একটি ব্যাপক মুনাফা বাণিজ্য। এ সম্পর্কে নিউইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ও মানব সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক, গবেষক ড. চাইমস মারি বলেন, সিগারেট বাক্সের গায়ে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ’ লিখেই দায়িত্ব শেষ করার কোনো যুক্তি নেই। এটা হচ্ছে দায় থেকে বাঁচার একটি কৃত্রিম ব্যবস্থা।
অথচ মানব হত্যার শামিলই হচ্ছে এই স্লো পয়জনিং নিকোটিন গিলানো। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়া দরকার।
বিশ্বে সিগারেট জাতীয় ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করার জন্য নানা প্রচেষ্টা চলছে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও গৃহীত হচ্ছে। সমাজের ধুনকুবেররা বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এ অভ্যাস পরিত্যাগ মানুষকে উৎসাহিত করছেন।
ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অনেক মানবকল্যাণমূলক সংস্থা আছে যারা বিনামূল্যে ধূমপান নিরোধক বিভিন্ন সামগ্রী, ওষুধ বিতরণ করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত এদের সঙ্গে ‘জয়েন্ট ভেঞ্চার’ করে বাংলাদেশে এসব প্রচেষ্টাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া। বিভিন্ন এনজিও সংস্থাও এমন উদ্যোগ নিতে পারে।
সিগারেট যে জন ফুঁকে- শুধু সেই নয়, যার পাশে ধূমপান করা হয় সে ব্যক্তিটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের স্বপ্নের পৃথিবী এমনভাবেই প্রতিদিন বিষাক্ত হচ্ছে।
একটি পরিশুদ্ধ প্রজন্ম গঠনের জন্য ধূমপানবিরোধী সামাজিক উদ্যোগকে সবারই স্বাগত জানানো উচিত। এ সর্বসংহারী অভ্যাস জীবন এবং সমাজ দুটিকেই ধ্বংস করছে সমানভাবে।
-------------------------------------------------------------
দৈনিক ডেসটিনি । ঢাকা। ৯ মে ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।