আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি কি বাবার সাথে এটি অন্যায় করছি?



লেখাটি একটু লম্বা মনে হচ্ছে কিন্তু পড়তে সময় লাগবে সাড়ে চার মিনিট। অনেক বছর আগের কথা। একদিন আব্বু কিছু ডকুমেন্ট এনে ধরিয়ে দিলেন। বললেন কিছু টাকা পাওয়া যাবে যদি এই ডকুমেন্টগুলি ওয়ার্ডে কম্পোজ করে দেই। আমি তখন টাইপিং শিখেছি এবং খুব দ্রুতই ইংরেজিতে কম্পোজ করতাম (সম্ভবত ৮৫ ওয়ার্ড / মিনিট)।

কিছু টাকা পাওয়া যাবে কাজ করে এই আনন্দে কাজ শুরু করে দিলাম। লেখা পড়ার ক্ষতি হয়নি কারন কম্পোজ করার জন্য ১-২ মাস সময় ছিল। অনেক ডকুমেন্টতো, তাই এতো সময়। প্রায় কম্পোজ শেষের পথে। আমি জানতে চাইলাম যে, প্রিন্ট করে দিতে হবে, নাকি ফ্লপিতে (তখন ফ্লপির প্রচলনই বেশি হতো) দিলেই চলব? আব্বু ফ্লপিতেই নিলেন এবং ২-৩ দিন পর বললেন, আমার কাজ পছন্দ হয়েছে তাদের।

তারা চায় কিছু গ্রাফ সংযোজন করতে। আর কিছু বিউটিফিকেশন করা। নতুন উদ্দ্যমে শুরু করলাম। কিছু গ্রাফ, কিছু ফরমেটিং শুরু করে দিলাম। আফটার অল, এই কাজের জন্য আরো কিছু বাড়তি টাকা পাওয়া যাবে।

তখন আমি মনে হয় যুবক হতে যাচ্ছি। যুবক হতে যাবার সময় অনেক উপায় থাকে নষ্ট হবার। কার সাথে মেলামেশা করি সেটাও একটা ঘটনা। জীবনটাই চরম খারাপ হতে পারে যদি কুসঙ্গে মেলামেশা করি। এই সব চিন্তা করে আমার আব্বু চেয়েছিলেন যেন পড়া লেখার পাশাপাশি একটা কাজের মধ্যে ডুবে থাকি।

আর তাই উনি কাজটি সংগ্রহ করে দেন। কাজটি উনি একটি এন.জি.ও থেকে এনে দেন। অনেক এন.জি.ও তে তার সম্পর্ক। বেশ কয়েক মাস পর কিছু কথা বার্তার মাধ্যমে বুঝতে পারি যে ঐ কাজটি কোন এন.জি.ওর ছিলনা। ওটি সম্পূর্ণই আব্বু নিজে থেকে একটি কাজ বানিয়ে আমায় দিয়েছিলেন যেন আমি কাজে ব্যস্ত থাকি।

খারাপ ছেলেদের সাথে মেশার সুযোগ না পাই, নেশা না করি, ইত্যাদি ইত্যাদি নানা চিন্তায় উনি এটি করেছিলেন। মানে সহজ কথায় কাজটি ছিল মিথ্যা। টাকাটা আব্বু নিজ পকেট থেকেই দিয়েছিলেন। সেই ঘটনা থেকে আজ প্রায় ১৫-২০ বছর হয়ে গেছে। আব্বু আগের মতো শক্তি রাখেন না।

আমরা যাকে বলি বুড়ো হয়ে যাওয়া। উনি লেখক। সবল বয়সে কিছু লিখলেই বই ছাপাতে চাইতেন। ছাপিয়েছেনও বেশ। এখন যেহেতু লেখার সময় অনেক বেশি পান উনি, তাই প্রচুর লেখা জমা হয়েছে তার।

আব্বু লেখেন কলমে আর নীলক্ষেত থেকে কম্পোজ করিয়ে নেন (আমার চাকরির কারনে এখন তার লেখা কম্পোজের কাজটি করতে পারিনা)। বই ছাপাতে চান তিনি। কিন্তু টাকাও লাগবে অনেক এতো এতো বই ছাপাতে। এক মাস আগে, একদিন কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই হুট করে বলে ফেললাম এই সামুর কথা। বললাম যে এখানে অনেক ধরনের পাঠক আছে।

মন্তব্যও করেন তারা। রেটিং এর ঘটনাও আছে। আব্বু আগ্রহী হলেন। শিখিয়ে দিলাম। পোষ্ট করা শুরু করে দিলেন তিনি।

কেউ যদি তার লেখায় একটি মাত্রও মন্তব্য করেন বা একটি প্লাস তবে তিনি আমায় ফোন করে প্রায় ৫ মিনিট ধরে সেই আনন্দের কথা বলেন! প্রথম প্রথম আব্বু তার এক পরিচিতকে দিয়ে কম্পোজ করিয়ে পোষ্ট দিতেন। কিন্তু উনার লেখায় আপনাদের মন্তব্য পাওয়ায় উনার আগ্রহ এতো বেড়ে যায় যে তিনি মাত্র ২-৩ দিনে এই বয়সেও বাংলা কম্পোজ শিখেছেন (ইংরেজি টাইপিং অনেক বছর আগেই শিখেছিলেন তিনি, টু ফিংগার টাইপিষ্ট উনি। )। তার ২ দিনে বাংলা টাইপিং শিখে যাওয়া দেখে (বাংলা কীবোর্ডে নয় কিন্তু) অনেক অবাক হয়েছি! নীলক্ষেতে উনি প্রায় ১লাখ+ টাকা শুধু বাংলা কম্পোজ করিয়ে মজুরি দিয়েছেন (লেখকরা একটু পাগল হয়েই থাকেন। আমি অবশ্য পজিটিভ ভাবেই বললাম।

) বিগত ৮-১০ বছরে। সেই মানুষটি সামুতে লেখা দিয়ে মাত্র ২-৩টি মন্তব্য পেয়ে ২ দিনে বাংলা শিখে... বিগত কিছুদিন তার কিছু লেখায় কোন মন্তব্য পড়েনি। একটি দুটি লেখায় মাইনাসও পড়েছে। তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমায় ফোন করে সেই কথাটা জানিয়েছিলেন তিনি।

আমি উনাকে বোঝালাম যে, সামুতে এমন হয়। এও বোঝালাম যে, সবাই ব্যাস্ত থাকে, মন্তব্য সবাই করেনা যদিও হয়তো আপনার লেখা পাঠকের পছন্দ হয়েছে। তাকে বোঝালাম আপনার লেখা কতবার পাঠিত হয়েছে সেটাও একটা বিষয়। (আব্বু ইন্টারনেট খুব একটা বোঝেন না। আর বাংলা ব্লগতো তার কাছে আরো জটিল লাগে।

) এখন আব্বু ফোন করে তার আনন্দের কথা আমায় জানান। প্রচন্ড আনন্দে তিনি বলেন যে তার লেখা প্রায় ৩০-৪০ জন পড়েছে ৩-৪ ঘন্টার মধ্যেই! আমিও আবিষ্কার করেছি যে সামুতে কোন লেখায় এফ-ফাইভ প্রেস করলে পাঠিত সংখ্যা বাড়তে থাকে। তার ৩০-৪০ জন পাঠিত সংখ্যার মধ্যে আমি নিজে দেই প্রায় ২৫বার এফ-ফাইভ। আব্বু সেটা জানেন না। আমি কি বাবার সাথে এটি অন্যায় করছি? ---------- এই গভীর রাতে পোষ্ট করলাম যেন আব্বু এই লেখাটা প্রথম পাতায় না পান।

ভোর হতে হতে এই লেখা প্রথম পাতা থেকে অন্য পাতায় চলে যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.