আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমিতাভ, বচ্চন স্কেল এবং অন্যান্য

একট হাসি, অলস দুপুর, এক ফোঁটায় জলের পুকুর।

আমাদের একটা স্কেল আছে। ক্লাসে সেই স্কেলেই সাধারণত আমরা মাপামাপি করি। এই স্কেলের নাম বচ্চন স্কেল। বচ্চনের নামে এই স্কেলের নামকরণ হয়েছে এজন্য এর নাম বচ্চন স্কেল না।

এর নাম বচ্চন স্কেল কারণ, এই স্কেলের একক বচ্চন। এই যেমন, আমার হাইট এই স্কেলে ১.১২ বচ্চন। আমাদের রাকিব এই স্কেল বিশেষজ্ঞ। আবার ভেবে বসেন না এই বচ্চন সেই বচ্চন। এই বচ্চন সেই বচ্চন না হলেও সেই বচ্চনের নামানুসারেই তার নাম বচ্চন।

পেঁচিয়ে যাচ্ছে?? আচ্ছা তবে খুলেই বলি। তার নাম অমিতাভ দেবনাথ। অমিতাভ থেকে সে কিভাবে যেন বচ্চন হয়ে গেছে ক্লসের শুরু থেকেই। ছোট খাট, নাক বোঁচা ছেলেটা যে আদিবাসী কোটার নয় এবং সে যে আদিবাসীও নয় এটাই অনেকে জানত না। ধরেই নিয়েছিলো আমাদের ব্যাচে দুইজন আদিবাসী - ইয়ান ইয়ান আর অমিতাভ।

এর অবশ্য কারণ ও আছে। দুজনের রোল ছিলো পর পর, এবং সবার শেষের। অমিতাভ চান্স পেয়েছিলো শেষ কলে। একজনকেই ডাকা হয়েছিলো - আমাদের বচ্চনকে। আমি জানি ভালোই, কারণ, ঠিক তার আগের কলে শেষ যার রোল ছিলো সে আমিই।

আমি ৫৩, অমিতাভ ৫৪। অমিতাভ আমার প্রথম ক্লাসের প্রথম বন্ধু। আমার বুয়েট জীবনের প্রথম বন্ধু। পাঁচ বছরের সখ্যত্যায় এখন সেই আমার কাছের বন্ধুদের একজন। যখন চরম মাথা খারাপ হয়ে যায় ডিজাইন নিয়ে, ফোন দিয়েই আমার ঘ্যান ঘ্যন - দোস্ত কিছুই হয় না তো।

আবার তার যখন মাথা আউলে যায়, ইয়াহুতে বাজ - দোস্ত ভালো লাগে না কিছুই। নানান প্রজেক্ট একসাথে করা ছাড়াও, পর পর রোলের জন্যও আমাদের বন্ধুত্ব বদলেছে সময়ের সাথে। মেয়ে বলে যে আমার আড়ালে বিড়ি খেত একদিন, এখন একটা বেনসন ভাগ করে খাই। গ্রাফিক্স ক্লসে যেমন দুইজনে আলোচনা করে ঠিক ঠাক করতাম কি হবে। এখনও এক জন আরেকজনের প্রজেক্ট দেখে ভুল ধরে দেই।

এখনও এই ৫-১ এও আমার পশের ওয়ার্ক স্টেশনটাই ওর। রাতে কাজ সেরে মেইল করে দেই। যদি প্রিন্টে ঝামেলা হয়, তবে সে যেন প্রিন্ট করে নিয়ে আসে আমার জন্য। ফ্রাস্টেশনে যখন এলো মেলো, আমি থ্রেট দেই বাড়ি যা, নাইলে বললাম তোকে তোর হল থেকে টেনে নিয়ে যাব। হাসে ও।

শেষমেস কাল বাদে পরশু বাড়ি যাবে, আমাকে বললো পরের প্রজেক্টের কাজ সামলে নিতে। ভালো কোনো গান শুনছে- শুনবি? বলে মেইল করে দিলো। পেনড্রাইভ দিলাম, নিজ দ্বায়িত্বে আনিমেশন ভরে দিলো। যেই মানুষগুলোর জন্য আমার মনে হয় এখনও টিকে আছি এই জাহান্নামে, অমিতাভ তাদের একজন। আমার এই বন্ধুটার জন্মদিন আজ।

সৃষ্টিকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ এমন অসাধারণ একটা মানুষকে সৃষ্টি করার জন্য। আর আমাদের বন্ধুত্বের জন্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।