আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাছে ভাতে বাঙ্গালী, দুর্বল দেহ, দুর্বল মন,ঘাড়ে চাপে স্বদেশী বিদেশী দু:শাসন

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
জামাত, বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও বামপন্থীদের নিয়ে লিখার পর কেহ কেহ বলছেন- নতুন পার্টির দাওয়াত দিব কিনা! এ ব্যপারে মুখে কলুপ এঁটে রাখলাম। আপাতত: সেই 'বাংলার মানুষ'কে নিয়েই কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা যাক- যাদেরকে সবাই 'তাদের পক্ষের লোক' বলে। বাংলার মানুষ, বাঙ্গালি, আমি, আমরা, আমাদের মা, তার মা, তার মা কিংবা আমাদের বাবা, তার বাবা, তার বাবারা......। হিমালয় নি:সৃত গঙ্গা, বহ্মপুত্রের ভাটিতে আমাদের বাস। অস্থি খুবই নরম।

ক্ষীনকায় দেহ। পেট ভর্তি কৃমি। মারপিটে গড়পরতা পাকিস্তানী, তামিল, মোংগল, আরব, নিগ্রো, ইউরোপিয়ানদের সাথে পেরে উঠার কোন সম্ভাবনা নেই। কুস্তি, ফুটবল, ভারোত্তোলন, ক্রিকেট, সাঁতার, দৌড় বা কায়িক শ্রম প্রয়োজন হয় এমন খেলায় আমাদের পারদর্শিতাই (!) বলে দেয় এটি। অসংখ্য খাল বিল নদী নালার বাংলায় পেটপুরে ভাত ও মাছ, সন্ধ্যা বেলায় একটু হুক্কা টানা, ও একমাত্র বিনোদন বিছানায় গমন- এই করেই পার হয়েছে পল্লীবাংলার হাজারো বছর।

ফলাফল- জনসংখ্যা বিস্ফোরন। তবে জনশক্তি হতে পারেনি। এখনো মোটাদাগে অদক্ষ শ্রমিকের কাতারে আন্তর্জাতিক বাজারে। অথচ প্রতিবেশী ভারতীয়, সিংহলি, থাই বা পাকরাও খানিকটা এগিয়ে দক্ষ, সুপারভাইজার বা ম্যানেজার পর্যায়ে ধাবমান। শারীরিক এই দুর্বলতা ভিন কোন দেশ পদানত করা দুরের কথা নিজ দেশের আত্নরক্ষাও সবসময় আমাদের করা হয়ে উঠেনি।

তাই তো মুখে অযথাই বীর বাঙ্গালী বলে কাল্পনিক ঢেকুর তুললেও কালের পর কাল পাক, ব্রিটিশ, মোঘল, আরব, আর্যরা আমাদের গলায় গোলামীর জিন্জির পরিয়ে রেখেছিল। অদৃশ্য মার্কিনি ও ভারতীয় জিন্জির থেকে এখনো আমরা মুক্ত নই। টিভিতে পর্তুগীজদের দেখে পরিচিত একজন বলল, দেখ দেখ, আমাদের মত চেহারা। আমি বললুম, নাহে ভ্রাত আমরা ওদের মত! তবে দেহের চেয়েও মনটা নরম আরো বেশি। হাসিও বেশী, কাঁদিও।

কলা খাবি রাম? ছিলা আছে, না ছিলতে হবে আবার? এটাই মোদের সংগ্রাম। পরীক্ষা পেছানোর দরকার পড়ল ইউনিভার্সিটির ৫ম বা ৬স্ট সেমিস্টারে। হলের বারান্দায় প্রায় সব ক্লাশমেট বিপ্লবী। কারো কারো ভাষনের উত্তাপে সেদিন তাপমাত্রা বেড়ে যায়। খুঁজে পাওয়া গেল যুৎসই একটা কারন।

লিখা হল দরখাস্ত- বন্ধু বিনোদ লামসাল অসুস্থ। তাকে রেখে কি করে পরীক্ষা দেই। ততটা নিষ্ঠুর কেমনে হই! স্বাক্ষর দেবার বেলায় কেহ কেহ আমতা আমতা ভাব। যাহোক, দরখাস্ত নিয়ে রওনা হলাম ডাইরেক্টর স্যারের অফিসে। হলের বারান্দার মৌচাক সদৃশ ভীড়টি আস্তে আস্ত পিপঁড়ার সারির মত হতে লাগল।

ফাস্টক্লাশ স্কোরাররা সারির একেবারে শেষে। ইচ্চাকৃত শ্লথগতি অনেকের পদযুগলের। কথাছিল- সবাই যাব স্যারের রুমে। কিন্তু এ কি- পেছনে তাকিয়ে দেখি আমি আর মোবারক। ছাড়া ছাড়া বিপ্লবী।

কেহ বা টয়লেটে, কেহ বা অফিসের অন্যকক্ষে ব্যস্ত। সুরা কুলহুয়াল্লাহ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দু'জন ঢুকে পড়লাম মহোদয়ের কক্ষে। প্রচুর গাল মন্দ, বকা ঝকা হজম করে..। 'রেখে যাও দরখাস্ত'- বাক্যের মধ্য দিয়ে ইতি টানলেন। যেই না বের হলাম বিপ্লবীরা আবার দেখি মৌচাক।

ঘিরে ধরল। কি হল? কি হল? কি কইল? পিছাইব? পাড়ায় বোমা ফাটল। হালকা করে জানালার ফাঁক গলিয়ে উঁকি দিয়ে কৌতুহল নিবারন। অত:পর বৌয়ের বুকে মুখ গুঁজন। মোটা দাগে অতখানিই সামাজিক দায়িত্ব বাঙ্গালি মননে।

লাইন ধরতে মানে বাধে মোর। ব্যস্ততা বেড়ে যায় রেলস্টেশনে বা ব্যাংকের কাউন্টারে। ডানে বামে ইতি উতি করে আগে ভাগে কাজ সারা। তারপর পাড়ার মোড়ে আড্ডা। স্বার্থপরতা মৌলিক মনন বাংলার।

এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ নিজ সীমানার। একটুও ভাবনা নেই রাস্তাঘাট, বায়ুচলাচল হবে কিভাবে। আমি, আমার বাচ্চা, আমার পরিবার, আমাদের এলাকার এভাবে আমি আর আমিতে আচ্ছন্ন বাংগাল। পথচারী অবস্থায় মাথার উপর ময়লা পড়লে আকাশ ফাটিয়ে গালমন্দ। কোন ..নীর পুত? অথচ অবলীলায় ব্যালকোনি থেকে ছুড়ে মারি কলার খোসা।

নিরন্ন প্রতিবেশী ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির। তবুও জন্মদিনের বাজেট কমেনা। বাসের দু'সিটের সারিতে এমনভাবে পা চেগিয়ে বসি যাতে নতুন যাত্রী সাহস না পায় এদিকে তাকাতে। অথচ পরের যাত্রায় নিজেই গোঁৎ গোঁৎ করি- শালা পা ফাক করে বসেছে কেন? কলেজ গামী সন্তানকে হাজার বার উপদেশ দিই- বাবা আর যাই কর রাজনীতি নয়? তবুও ভোটের আগে খুঁজতে থাকি সৎ, মেধাবি রাজনৈতিক! ন্যায়কে ন্যায়, অন্যায় কে অন্যায় বলার সৎসাহস লুকিয়ে রাখি সদাসর্বত্র। আর্তের চিৎকার নাড়া দেয়না আমাদের মন।

তবে বিশ্বাসী আমরা। ফুটপাতের ওষুধ, কাঠমোল্লার বেহেস্ত পাওয়ার সর্টকাট তরিকা, ফেয়ার এন্ড লাভলি, প্রথম আলোর ভারত বাংলাদেশ নিয়ে ছাপানো প্রবন্ধ, মোবাইল কোম্পানীর বোনাস, দল বিশেষকে ভোট দিলে প্রতি বেলায় খাবারের পর ফুটবল সাইজের রসগোল্লা- সবকিছুতেই আমাদের বিশ্বাস। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ব্যবসায়িক প্রস্তাবে যেমন বিশ্বাস স্থাপন করেছিল আলিবর্দি খাঁ। এশিয়া এনার্জির প্রতি যেমন বিশ্বাস কতক নব্য মীরজাফরের। আমাদের কায়িক দুর্বলতা, মানবিক তরলতা, আমিত্ববোধ, সমাজ ও রাস্ট্রের প্রতি অনীহা একটি স্থায়ী ফাঁক তৈরী করেছে দুস্টলোকদের কারবারের জন্য।

তাই পর্তুগীজ, ওলন্দাজ, ব্রিটিশ, পাকিস্তানি, আওয়ামিলিগ, বিএনপি, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নামধারীদের দু:শাসন প্রায়শ:ই চেপে বসে আমাদের ঘাড়ে। কবে নামবে এসব দৈত্য? যেদিন আমরা জোরে সোরে একটা ঝাঁকুনি দিব!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.