যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
বাংলাদেশে থাকতে আইড় মাছ ছিলো আমার পছন্দের তালিকার একটা মাছ। বিশেষ করে শীতকালে এই মাছটা খেতে খুবই সুস্বাদু বটে। তবে আইড় যতটানা খাবারের আনন্দ - তার চেয়ে আইড় মাছ ধরার স্মৃতিই মনে হয় আমাকে বেশী তাড়িত করে। আইড় মাছ ধরার কৌশলটা কিন্তু বেশ মজার - অনেকটা গেরিলা স্টাইলে সেই অভিযান চালাতে হয়। গ্রামের বাড়ীতে বিশাল একটা দীঘি আছে যা সরাসরি নদীর সাথে যোগ করা হয়েছে একটা খাল কেটে।
বর্ষায় প্রচুর পানি আর সাথে মাছ চলে আসতো দীঘিটায়। সেই সময় হিজলের ডাল দিয়ে মাছের জন্যে ফাঁদ পাতা হতো। সেখানে প্রচুর মাছ থেকে যেত।
আইড় ধরার জন্যে প্রথমে পানিতে নেমে হেঁটে হেঁটে গর্ত খোঁজতে হতো। মসৃন আর বেশ বড় গর্ত পেলে পরীক্ষা করা হতো সেখানে কোন কাদা জমে আছ একিনা।
কাদাবিহীন গর্ত মানে হলো আইড় মাছের বাসা - সেখানে কলমী বা অন্য কোন জলজ ঘাসের ডগা পুতে মাথাটা পানির উপর থেকে দেখা যায় এমন ভাবে রাখা হতো। তারপর নৌকায় জাল নিয়ে গর্তটার কাছাকাছি ঘাপটি মেরে বসে থাকা। একসময় দেখা যেত পুতে রাখা জলজ গাছের ডগাটা দ্রুত নাড়াচাড়া করছে - তখন জাল ফেলতে হতো - আর সাথে সাথে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে পালটাকে সুরক্ষিত করে ধীরে ধীরে আটকে যাওয়া মাছটাকে তোলা হয়তো নৌকায়। মাছ ধরার এই গোয়েন্দা স্টাইলটা ছিলো নেশার মতো - দিনে পর দিন আমরা নিবিস্ট মনে এই কাজটা করতাম।
যাই হোক, এইগুলো হলো স্মৃতি - প্রয়াসই মনকে আর্দ্র করে।
কিন্তু কি আর করা - ফিরে তো যেতে পারবো না সেই সময়ে!
(২)
একদিন কি একটা কাজে বাঙালী পাড়ায় গেছি। বাজার করার কোন উদ্দেশ্য ছিলো না। কিন্তু একজনের সাথে কথা বলতে বলতে একটা বাঙালী গ্রোসারীতে ঢুকে দেখি বিশাল একটা আইড় মাছে ফ্রিজে ঢুকাচ্ছে। দেখে মনটা দূর্বল হয়ে গেল। মনে হলো আইড় মাছটা নিয়ে যাই আর বাসায় গিয়ে আইড় মাছ নিয়ে গল্পটাও করা যাবে।
দাম জিজ্ঞাসা করতেই দোকানের কর্মচারী বললো - ৪.৯৯ ডলার প্রতি পাউন্ড - কিন্তু মালিক চিৎকার করে বললো - না, এইটা ৫.৯৯ ডার প্রতি পাউন্ড। একটা কথা বলে রাখি - প্রবাসে বাঙালী গ্রোসারীর মালিকদের দেশী পতাকা টাঙ্গিঙে প্রবাসীদের "সাইকোলজ্যিক্যাল ব্লাকমেইল" করে মনে হয় এক সপ্তাহেই মিলিওনিয়ার হবার একটা স্বপ্ন দেখে। হয়তো আমার আচরনে অতিআগ্রহ প্রকাশ পেয়ে থাকবে বলেই মালিক এক ডলার প্রতি পাউন্ডে দাম বাড়িয়েছে। এদিকে আমারও জিদ পেয়ে গেল - মাছটা নেবোই। ওজন করে দাম লিখে দিয়ে কর্মচারী মাছটা ইলেট্রিক করাত দিয়ে কাটার জন্যে ভিতরে নিয়ে গেল।
দাম পরিশোধ করার সময় মনে হলো মাছটার ওজন একটু বেশীই হয়েছে।
জানতে চাইলাম - আইড় মাছে এতো ওজন কেন?
দোকানের মালিক বললেন - দেখেন না এইটা একটা পাঁকা আইড়।
পাঁকা রুই হয় শুনেছি, পাঁকা আইড়... কি জানি হবে হয়তো। মনের থেকে ওজনে হেরফেরের সম্ভাবনা দুর করে দিলাম - কারন ধরা পড়লে ৫০০০ ডলার জরিমানা গুনতে হবে - তাই কেউই এই বিপদ ডেকে আনবে না।
যাই হোক বেশ চড়া মূল্য দিয়ে মাছ কিনে বাসায় এসে বেশ হাকডাক দিয়ে গিন্নীকে মাছ রান্না করতে বললাম।
আইড় মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাবার আনন্দ মনে নিয়ে গোছল করতে ঢুকলাম। গোছলের পর যখন আশা করছিলাম রান্না ঘর থেকে মাছ রান্না সুবাস আসবে - তখন দেখি গিন্নী ডাইনিং টেবিলে একটা পাত্র নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
ঘটনা কি? - অবাক হয়ে জানতে চাইলাম।
গিন্নী এক টুকরা মাছ এগিয়ে দিলো। দেখলাম পিঠের টুকরাটার দুইপাশে সুন্দর করে বৃত্তাকার ছিদ্র।
মনে হচ্ছিলো কেউ একজন একটা মেশিন দিয়ে চমৎকার করে বৃত্তাকারে মাছ কেটে নিয়েছে। ভাছিলাম এই কেটে নেওয়া টুকরাগুলো দিয়ে কি করবে?
তখন গিন্নী হাতের তালুতে যা দেখালো - তাতে চোখ চড়কগাছ! দুই টুকরা সীসা, ইলেট্রিক করাতে কাঁটার কারনে দুইপাশ চকচক করছে। অর্ধ ইঞ্চি ব্যাসের দুই টুকরা সীসা হাতের নীয়ে পাত্রটার দিকে তাকালাম। দেখলাম পুরোমাছটার পিঠের দিকে মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত সীসার রড় ঢুকানো হয়েছে। সীসাগুলো আলাদা করে মাপ দিলাম - মাছের ওজনের চেয়ে সীসার ওজন অনেক বেশী - যা আমাকে ৫.৯৯ ডলার করে কিনতে হয়েছে।
তার চেয়ে বড় কথা এই সীসা এসেছে বাংলাদেশ থেকে।
ভাবছিলাম - বাংলাদেশে কি সীসার খনি আছে কিনা!
সোনার ডিম পাড়া হাঁসের গল্প পড়েছিলাম ছোট কালে। ভাবছিলাম - বাংলাদেশের মাছ রপ্তানীকারকগন প্রবাসীদের সম্ভবত সোনার ডিমপাড়া হাঁস মনে করে। মাছের প্রতি প্রবাসীদের দূর্বলতার সুযোগ সীসা ভরে মাছ পাঠায়। সীসা যে একটা বিষাক্ত বস্তু - যা একজন মানুষের মৃত্যুর কারন হতে পারে।
প্রবাসীদের দেশের প্রতি দূর্বলতার জন্যে মৃত্যু দন্ড দিচ্ছে মাছ ব্যবসায়ীরা!
কেউ কি মাছ রপ্তানী কারনদের সোনার ডিম পাঁড়া হাঁসের গল্পটা বলবেন? যদি সম্ভব হয় গল্পটা বুঝিয়ে বলবেন - বলবেন বাংলাদেশ থেকে যে মাছ আসে তা আপনার দেশী ভাইবোনেরাই খায় - তাদের সীসা খাইয়ে মেরে ফেললে একসময় আপনাদের মাছ কেনার মতো কেউই থাকবে না। এমনকি যারা একবার মাছের ভিতরে পেরেক বা সীসা দেখেছে - এরাও জীবনে কোন দিন আপনাদের মাছ খাবে না।
(নোট - বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলোতে বাংলাদেশী মাছে জায়গায় এখন থাইল্যান্ড বার্মার মাছ বেশী পাওয়া যায় - কারন ওদের গুনগত মান, গুনগত প্যাকিং আর তুলনামুরক কম দাম। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে আসা মাছের ১ কিলোর প্যাকেটে ৭৫০ প্রাম পানি বরফ আকারে আসে, উপরে বড় মাছ দিয়ে ভিতরে পঁচা মাছ ভরে দিয়ে দ্বিগুন দাম নেওয়া আর ক্ষেত্র বিশেষে বরফ গলানোর পর পঁচা মাছে গন্ধে দ্রুত সেই উচ্মূল্যে কেনা মাছ গারবেজ করার কারনেই দৃশ্যত বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মাছের বাজার হারাচ্ছে। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।