আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেরালায় ভোট-৭



কেরালায় এবার বামপন্থীদের লড়তে হলো মিডিয়ার বিরুদ্ধেও অজয় দাশগুপ্ত পালাক্কাদ, ১৬ই এপ্রিল-নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ওরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারে কুৎসা ও অপপ্রচারকেই বে‍‌ছে নিয়েছিলো। বললেন টি শিবদাস মেনন, সি পি আই (এম) কেরালা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। সকাল থেকেই বের হয়েছি কেরালার ভোট দেখতে। পালাক্কাদ (পুরানো পালঘাট) শহরের কেন্দ্রে গভর্নমেন্ট ময়েন মিউজিক কলেজ ভোট কেন্দ্রের সামনে দেখলাম মিডিয়ার ভিড়। কি ব্যাপার, জিজ্ঞাসা করতে ‘দেশাভিমানী’-র পালাক্কাদ ব্যুরো চিফ ই এস সুভাষ জানালেন, এখানে ভোট দিতে আসছেন শিবদাস মেনন।

প্রায় পঁ চাত্তর বছর বয়সী শিবদাস মেনন দীর্ঘদিন কেরালায় এল ডি এফ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বয়সজনিত কারণে তিনি আর ভোটে দাঁড়াননি। ভোট দিয়ে বের হয়ে আসার পরে পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করতে উনি বললেন, দেখুন, ভোটটা লোকসভার হলেও কংগ্রেস নির্বাচনী প্রচারে আমা‍‌দের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই প্রথমদিকে আক্রমণ করা শুরু করেছিলো। কিন্তু আমরা যখন গত আড়াই বছরে এল ডি এফ সরকা‍‌রের সাফল্যের সঙ্গে তার আগে ইউ ডি এফ সরকারের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে লাগলাম, তখন ওরা আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসায় নামলো। এছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানির চেষ্টা তো আছেই।

মনে পড়ে যাচ্ছিলো, পশ্চিমবাংলায় বিরোধীদের প্রচারের কথা। লোকসভা না বিধানসভার ভোট হচ্ছে, বিরোধীদের প্রচারে তা বোঝা দায়। এখানেও একই অবস্থা। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমেরও বাম-বিরোধী চরিত্র এখানে পরিষ্কারভাবে যে কেউ বুঝতে পারবেন। বিভিন্ন রকম সমীক্ষায় ইউ ডি এফ-কে প্রায় সব আসন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আজ, ভোটগ্রহণের দিনই ‘নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ ইউ ডি এফ শিবির ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৯টিই প্রত্যাশা করছে বলে বড় করে সংবাদ ছাপা হয়েছে। ভোটারদের যতটা প্রভাবিত করা যায়, সবরকমভাবে তার চেষ্টা চলছে। সচরাচর কেরালায় রাজনৈতিক শক্তির বিন্যাস যা, তাতে লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফল হলে এল ডি এফ ১১-১২টি আসনে জয়ী হয়, খারাপ হলে ৬-৭টি পায়। ২০০৪ সালের নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম ঘটেছিলো। তার প্রধান কারণ, তৎকালীন ইউ ডি এফ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ।

এছাড়া, রাজ্যের দুই প্রধান কংগ্রেস নেতা এ কে অ্যান্টনি এবং কে করুণাকরণের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল তীব্র আকার ধারণ করার ফলশ্রুতিতে কংগ্রেসে ভাঙন। কে করুণাকরণ দল ছেড়ে বের হয়ে গিয়ে কেরালা ইন্দিরা কংগ্রেস গঠন করেন এবং সবকটি আসনেই প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেন। সব মিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, রাজ্যের ২০টি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই ইউ ডি এফ পরাজিত হয়। একমাত্র পোন্নানি আসনে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের প্রার্থী ইব্‌বার আহ্‌মেদ জোটশরিক হিসাবে জয়ী হয়। এন ডি এ-র শরিক আই এফ ডি পি-র প্রার্থী পি সি থমাস (পুল্লোলি) মুভাত্থুপুঝা কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেও পরে তিনি ও তাঁর দল এল ডি এফ-এ যোগ দেয়।

বর্তমানে করুণাকরণ আবার কংগ্রেসে ফিরে এলেও তাঁর বড়‍‌ ছেলে কে মুরলীধরণ ফেরেননি, বরং অনুগামীদের নিয়ে এখানে এন সি পি-র শাখা খুলেছেন। ওয়াইনাড কেন্দ্রে তাঁর হয়ে প্রচারেও এসেছিলেন এন সি পি সভাপতি শারদ পাওয়ার। অন্যান্য কেন্দ্রেও এন সি পি প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থী বাছাই নিয়েও কংগ্রেসে ব্যাপক জলঘোলা হয়েছে। করুণাকরণ নিজে বিক্ষোভ জানিয়েছেন প্রকাশ্যে।

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে কংগ্রেস সরকারের ভূমিকাতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমরা যখন ব্যাপকভাবে সি পি আই (এম) তথা এল ডি এফ-এর প্রতি এখানে সমর্থন জানাচ্ছেন, তখন সংখ্যালঘু খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে বাম-বিরোধী করে তোলার জন্য উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়েছে কংগ্রেস। এমনকি, কেরালা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী গত ১৪ই এপ্রিল কোচিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম) নেতারা সম্পর্ক বজায় রাখছে বলে কিছু অনুষ্ঠানের ছবি বিলি করেন, যাতে মুসলিমরা বিরূপ হন। এখানে প্রচারে এসে সোনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিং-এর করা রাজ্যের উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশ্নে প্রতিটি অপপ্রচারের জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের এরাজ্যে আগের সরকার অথবা কংগ্রেসশাসিত অন্য কোন রাজ্যে মাত্র আড়াই বছরে এই রকম জনস্বার্থে কাজ হয়েছে, তা দেখাক। কিন্তু প্রদেশ নেতৃত্ব তার জবাব দেওয়ার রাস্তায় হাঁ‍‌টেনি। অন্যদিকে, প্রাথমিক প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে এল ডি এফ শিবিরেও কিছুটা মতপার্থক্য হয়েছিলো।

ডিলিমি‍‌টেশনের কারণে কিছু আসনের চেহারার রদবদল ঘটার জন্যই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। কোঝিকোড়ে আসনটির একটি বড় অংশ নবগঠিত ওয়াইনাড লোকসভা আসনে চলে যাওয়ায় জনতা দল (এস)কে ঐ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কোঝিকোড়ের বর্তমান সাংসদ ও ‘মাথ্রুভূমি’ পত্রিকার মালিক এম পি বীরেন্দ্রকুমার বিষয়টিকে জেদের প্রশ্ন হিসাবে নিয়ে সরাসরি সি পি আই (এম) এবং আরও সুনির্দিষ্টভাবে পার্টির রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে ব্যাপক কুৎসা ও অপপ্রচার শুরু করেন। জনতা দল (এস)-র সর্বভারতীয় নেতৃত্ব এল ডি এফ-র সঙ্গে থাকলেও এখানে এম পি বীরেন্দ্রকুমারের নেতৃত্বে ওই দলের একটি অংশ এল ডি এফ-র বিরুদ্ধে কাজ করছে এই নির্বাচনে। অন্য অংশটি জনতা দল (এস) হিসাবে এল ডি এফ-র সঙ্গেই আছে।

প্রাথমিকভাবে এই মতপার্থক্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম খুব হইচই করলেও প্রকৃত অর্থে এনিয়ে এল ডি এফ-এ কোনো সমস্যা হয়নি। এদিন ভোট শেষে সি পি আই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম এ বেবি বললেন, যেভাবে ভোট প‍‌ড়েছে, তা আমাদের পক্ষে আশাব্যঞ্জক। এবারে শুধু বিরোধীদের অপপ্রচারই নয়, সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচারের তীব্র ঝড়কে মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচনে লড়েছি। অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের মতোই একেবারে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।