প্রস্তুতি পর্ব
আরব সাগরের তীরে ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা। কেরালা রাজ্য সরকারের আয়োজনে আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবে যখন আমাদের আরণ্যক নাট্যদল "রাঢ়াঙ" নাটকটি মঞ্চায়নের আমন্ত্রণ পেল তখন স্বভাবতই দলের নবীন নাট্যকর্মীরা আনন্দময় স্নায়বিক চাপ অনুভব করা শুরু করলাম। ভারত ভ্রমণ হয়েছে অনেকবার- কেরালা'তে যাওয়া হয়নি। নাটক করতে যেয়ে এমন সুন্দর একটি জায়গা দেখা হবে- রথ দেখার পাশাপাশি কলা বেঁচার এমন সুযোগ তো সচরাচর হয়না!! ঠিক এমন সময়ে মুম্বাই এ তাজ হোটেলে জঙ্গী হামলা আমাদের যারপরনাই হতাশাগ্রস্থ করে তুললো। নানাদিক থেকে নানা গুঞ্জন, 'এ সময়ে ভারত সরকার ভিসা দেবে না', 'এ সময়ে ভারতে যাওয়া নিরাপদ নয়'-ইত্যাদি।
কিন্তু ভিসা পেতে কোনরকম বেগ পেতে হলো না- কেরালা রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠান 'কেরালা সঙ্গীত নাটক একাডেমী' বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসকে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও নির্দেশনা প্রদান করার কারণে।
অতপরঃ ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ রাত ১০.৩০ এ আমাদের যাত্রা শুরু হলো। ৪১ জনের বিশাল বাহিনী ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লাম ভারতের দর্শকদের কাছে বাংলাদেশের ঋদ্ধ থিয়েটার চর্চাকে পৌঁছে দিতে। আমাদের দলনেতা বাংলাদেশের পথিকৃৎ নাট্যজন মামুনুর রশীদ- তার সন্তানসম বিশাল বাহিনী নিয়ে চললেন কেরালার উদেশ্যে।
'রাঢ়াঙ' নাটকে আমরা যারা কাজ করি অধিকাংশ-ই বয়সে নবীন।
তারুণ্যে উজ্জীবিত মানুষগুলো যাত্রা শুরু করলাম আনন্দের ভেলায়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরীঘাট পার হয়ে কিছুদূর এগোতেই আমাদের বাসটি থেমে গেল। আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠলাম আমরা। উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সহৃদয় ড্রাইভার জানালেন- রাস্তায় গাছ ফেলে আমাদের ঠিক সামনের বাসটিতে ডাকাতি হচ্ছে, ওদিকে যাওয়া নিরাপদ নয়। অগত্যা অপেক্ষা।
প্রায় আধাঘন্টা পর আবার বাস ছাড়লো- সবাই প্রস্তুত (!!) ডাকাতের সাথে সাথে লড়াই এর জন্য। রাড়াঙ নাটকের প্রপস্ তীর-ধনুক-বল্লম যে আমাদের সাথেই আছে!! ভাগ্য বিরূপ- ডাকাতের দেখা মিললো না। আমরা বাঁচলাম, নাকি ডাকাত দলটি বেঁচে গেল!!!- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে গেলাম বেনাপোল।
বেনাপোল এ কাস্টমস এর কর্মকর্তারা আমাদের সামনে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। মামুনুর রশীদ, তমালিকা, চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসানের মতো তারকাদের সামনে পেয়ে তারা যেন আকাশের চাঁদ (নাকি তারা!) হাতে পেলেন।
খুব অল্প সময়ে-ই আমাদের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজ সেরে আমরা পৌঁছে গেলাম ভারতের মাটিতে।
আবারও বাস থামলো, না এবারে ডাকাত নয়। বনধ্। বারাসাতের কোনো এক স্কুলের ছাত্ররা স্কুল সরকারীকরণের দাবীতে বনধ্ ডেকেছে। কতক্ষণ বসে থাকতে হবে আমাদের!!!
(ক্রমশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।