আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা “স্রেফ” ব্লগ লেখার জন্য

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

রবি বুড়োকে প্রথম অপছন্দ করতে শুরু করি যখন তার লেখা পড়তে পড়তে কাঠামোর ভেতরের একঘেয়েমিটা স্পষ্ট হতে শুরু করে তখন থেকে। এরপর ওরিয়েন্টশনের বদল হয়েছে, রবি বুড়ো দূরের বটবৃক্ষের মত সরে গেছেন, কিন্তু কখনোই তাকে ক্ষুদ্র মনে হয়নি। ঐ ব্যাটা আবার ডাক দিয়ে উঠলেন পাশের সিটের পাঠ্য পুস্তক থেকে।

“ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী, আমার সোনার ধানে গিয়াছে ভরি” আলোচ্য অংশে কবি মহাকালের সাপেক্ষে তার সৃষ্টির অবদানের কথা বললেও একই সাথে ব্যক্ত করেছেন ব্যক্তি হিসেবে তার ক্ষুদ্র এবং অবশ্যম্ভাবী বিলিয়মান অস্তিত্বের কথা। বাসে বসেই একমনে রিভাইজ করে চলেছে সাদা ইউনিফর্মের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী, আরো একটা পাবলিক পরীক্ষা তাহলে শুরু হয়ে গেছে। অনেকদিন যাবৎ কিছু লিখতে পারছি না। লেখা না আসার বিলাসিতা আমার মগজ এবং লোভ অনেক আগে খারিজ করে দেয়াতে সেটা নিয়ে কখনোই সমস্যা হয়নি। সমস্যা আরো ভেতরের, লেখার সময় এবং উদ্যোগকে সামাল দেবার জটিলতা।

কৌশিকের সাথে যোগাযোগ থাকাতে মাসুম ভাইয়ের স্টিকি পোষ্টের কথা শুনি, বিষয় নিয়ে তর্কও করি। অন্য আননকে আইএমএফ আর ওয়ার্ড ব্যাংক নিয়ে বয়ান দেই। বাকী বিল্লাহর পোষ্ট অফিসে মাকড়ার জাল জমেছে, তাকে ঘর পরিষ্কারের কথাও বলি কিন্তু আমার আর লেখা হয়ে ওঠেনা। মাছরাঙা, আন্দালীব, মুক্তি মন্ডল, আকাশ চুরি আর ছন্নছাড়ার ছাড়া ছাড়া কবিতা অভিমান কষ্ট দেয়, গোত্র চ্যুতি/যুক্তির সুখও দেয়, কাকশালিখ, শিমুল, প্রণব, মাঠশালা আরো অনেক প্রিয় কবির কবিতা আঁচ করি কিন্তু কবিতা লেখা হয় না। ইমন জুবায়েরের এবার টপিক কি, নাফিস নতুন ছবি কি দিল, লুকাল এখন কি খালি মাঠে ড্রিবলিং করেছে? কোন গেইম মাঠ কাপাচ্ছে? নতুন নিক কি কি এসেছে? রিভার্স গেইম কেমন চলছে? কাউন্টার এসপিওনাজ এর খবর কি? নতুন প্রবন্ধ কেমন লেখা হচ্ছে? আধুনিক ডিসকোর্সের বাইরে কারা আসতে চেষ্টা করছেন? ফরহাদ মাজহার ছদ্ম নিকে কি লিখলো? সুমন রহমান সামহয়ারনামার সুখ আর সীমাবদ্ধতা কোন কোন জায়গায়? ছোটগল্প কেমন চলছে? মানস মনে হয় লিখছেন না, ব্রাত্যর অভিমান কাটেনি, মামো কি পোষ্ট দেয় এখনো? (এত অসংখ্য নাম এত অসংখ্য মানুষ , সবার কথা গতিবিধি জানতে ইচ্ছা করে)।

ভালো কথা, স্রোত নতুন গালি কি দিল? পুরান কে কে ফিরলো? কে কে ব্লগ ছাপিয়ে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে? কার কার ক্ষমতার লিপ্সা তাকে জারজ বানিয়ে দিচ্ছে সবই জানতে ইচ্ছে করে, যুদ্ধ করতে ইচ্ছে করে। আসলে জীবন করতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে গেওর্গের মঙ্গলার্থেও..............হাহাহাহাহা। প্রতিদিন যখন বাসে করে অফিস যাই, দেখি জাবির পোলাপান দাঁড়িয়ে আছে ১০ নম্বরে, ১ নম্বরে, টেকনিক্যালে আমার তখনি বাস থেকে ছুটে নেমে যেতে ইচ্ছে করে আবার শংকাও করে। এটা হল সেই শংকা যা কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ততার ফলে ধীরে ধীরে শেকড় গাড়ে, বিস্তৃত হয় অজান্তে।

দীর্ঘ বিরতির পর আবার প্রবেশ করতে চাইলে কেমন যেন লজ্জা লাগে। ব্লগে অনেক দিন আসি না বলে আমারো লজ্জা লাগে, কখনো এত তীব্রভাবে লাগে যে লজ্জায় পেজটাও খুলতে পারি না। যদিও দেখা হয়ে যায় অনেকে সাথেই প্রস্তুতি আর অপ্রস্তুতিতে। ১লা বৈশাখে মেজবা য়াজাদ, অরণ্য, জামাল ভাষ্কর, এছাড়া ভিন্ন সময়ে রুবেল, আইরিন। এমনকি আমন্ত্রিত হয়ে মন্সীয়ানা, জুয়েল, আরিল, জানার সাথেও।

পথে, আড্ডায় কেউ ব্লগ নিয়ে কথা বললে কান পাতি, মিটিমিটি হাসি, কখনো স্রেফ চুপচাপ শুনি। আর আমার গল্প জমতে থাকে, কবিতা জমতে থাকে, প্রবন্ধ জমতে থাকে। সব মিলিয়ে ব্লগ জমতে থাকে। আমি একের পর এর শিরোনাম ঠিক করি আর অন্য শিরোনাম ভর করতে থাকে, পিষে দিতে থাকে জমা হতে থাকে। নেটেই দেখা হয়ে যায় অনেকের সাথে, আমি ভয়ে ভয়ে থাকি ব্লগের প্রসঙ্গ না আসার জন্য প্রার্থনা করি।

আমার কেবলই মনে হয়, এখনি তো আমার বলতে হবে, বুঝলেন কিনা অনেকদিন ব্লগে ঢোকা হয় না। তারারা কতখানি হাসছে, লাল দরজা সবুজ হল কিনা, অষ্টডটু মনোটোন থেকে বেরুলো কিনা কত মানুষ কত ভয় কত জিগ্গাসা। আমার হিংস্রও লাগে, ব্লগের মুখোশের ভেতরের দাঁতগুলো দেখে বাষ্টার্ড বলে গালি দেই, টাইম মত ছেইচা দেওনের পরিকল্পনা করি। আবার সাধু হই আবার সন্ত হই। সমস্ত বীররস শুকনো বীর্য হয়ে উঠলে ফু দিতে ইচ্ছে করে।

একটা বড় ফু। অমি পিয়ালরে, প্রত্যুরে, ইমনরে, সালউদ্দীনরে আরো কতজনরে অন লাইন দেখি আর মনে হয় দীর্ঘদিন আউট অফ দ্যা গেইম। কিন্তু জীবনের গেইমে ছুইটা বেড়াই কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, বদরখালী, জয়পুরহাট, পাহাড়পুর, মহেশখালি, কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনের পিছনের এতিমখানায়। কক্স এর ল্যান্ডিং স্টেশন দেখলেই পথিকের কথা মনে হয়। মনে মনে করি পথিক এত কম ছবি তুলছিল ক্যান।

মিডিয়াতে যুদ্ধাপরাধী দেখলেই মনে হয় কেউ করছে আমাদের মধ্যে কেউ কিছু করছে। আমি বাসের কাঁচে ছেঁড়া স্টিকারের ছবি তুলি। বিরিশিরির রানী খং চার্চ লম্বা ক্রস দেখে যীশূর কথা মনে হয়। আর ক ল দেখলেই কালপুরুষের কথা মনে হয় এমনকি কোয়ান্টাম দেখলেও। সারিয়াকে অনলাইন দেখি, প্রাপ্তীর কথা জানতে ইচ্ছা করে।

জীবনতো গল্পই, আমার গল্পের ভেতরের গল্প জানতে ইচ্ছা করে, জানাতে ইচ্ছা করে। আমি যখন যেখানে যাই সেখানকার ছবি তুলতে থাকি । আর ভাবি এই ছবি ব্লগাররা কিভাবে নেবেন, নিশ্চয়ই এই ছবিটা অনেক বেশি পছন্দ করবে, এটা করবে না। সময়গুলো পেরিয়ে যায় আমি উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত ছবিগুলো আর দেই না। বসুন্ধরা পুড়ে যায়, পহেলা বৈশাখ রূপ ছটায় বিহব্বল করে. সাগর সন্ধ্যা প্রতিদিন নতুন করে সাজে, পাহাড়ের বাঁকে সীমান্ত খেলা করে।

রাস্তার শেষে প্রাচীন ইঁট সভ্যতা উঁকি দেয়, খাসিয়া রমনী নতুন তাঁত বোনে, আমি রিকশা নিয়ে সমুদ্রে ঢুকে যাই। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে আমি আর উপযুক্ত কাজগুলো করি না। আমি ফেইসবুকে ছবি দেই ফ্লিকারে দেই কিন্তু ব্লগে দেই না,আবারো আমার ভীষণ লজ্জা করে, কমিউনিটির মুখোমুখি হতে। আমি সবকিছু শুরু করতে যেয়ে কিছুই করতে পারি না, একটা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ছবি ব্লগ, বিশ্লেষণ কিছুই না। আর ঠিক তখনি আমার মনে হয়, আরে আমি তো ব্লগ লিখতে পারি, খোলা অগোছালো, যা ইচ্ছে তাই।

আধুনিক ব্যবস্থার সবচেয়ে উত্তরাধুনিক উপকরণটি সাথে কিছুক্ষণ তো আমি থাকতে পারি। আমি রেডিওতে প্রথম বয়ানের কথা বলতে পারি, গালি খেতে পারি, ঝগড়া করতে পারি, আমি পুরাতন এমনকি প্রাচীনতম প্রসঙ্গ নিয়েও বাচালতা করতে পারি। আমি সাদা চামড়ার মহত্তের ডিসকোর্স নিয়ে দীর্ঘ তর্ক করতে পারি। আমি সতর্ক থাকতে থাকতে বিস্ফোরিত হতে পারি। মহাকালের সাপেক্ষে আমার নগণ্য অস্তিত্বকে মেনে নিয়ে আমি অবশেষে একটা ব্লগ লেখার চেষ্টা তো করতেই পারি।

দেখি রবি বুড়ো আবার বলে উঠছেন, ঠাঁই আছে ঠাঁই আছে অসীম সে তরী, সকলের নির্যাসে গিয়াছে ভরি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.