সাদ আহাম্মেদ
বিশ্বাস করুন আমি এই দেশেরই একজন একেবারেই সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারপরও বারবার মনে চাচ্ছে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাই। মাথার সামনে যখন ৭১ আর ৫২ এর কথা আসে তখন নিজেকে শান্ত করি। আমার বাবা প্রায় সময় বলে বাহিরে যেয়ে উচ্চতর পড়াশোনা শেষ হলে যেন ওখানেই স্থির হয়ে যাই। কিন্তু আমি বারবার তাকে আমার অনাকাঙ্খা জানাই।
আমি চাইনা এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে,আমি এই দেশে থাকতে চাই। আমার বাড়ির পাশে আমি ময়লা রাস্তা দেখে প্রতিদিন হাঁটি। আমি আকাশ খুজে পাইনা,পাই ইন্টারনেট,ফোন,বিদ্যুৎ এর তার। একটু সামনে এগিয়ে মেইন রাস্তায় যখন হেটে যাই তখন আমি কালো ধোয়া,অগুনিত মানুষ,বুভুক্ষু পেটের আর্তনাদ শুনতে পাই। আমি আমার গন্থব্যের দিকে শুকনো মুখে তাকিয়ে এই জরাজীর্ণ দেহটাকে ঠেলে নিয়ে যাই একটি লোকাল বাসের দিকে।
ওরিব্বাস!ওটা তো বাস নয়,ওটা যেন একটা ডাস্টবিন। সেখানে ময়লাগুলো আমরা,একজন আরেকজনের গায়ে গতরে ধাক্কা দিয়ে স্ট্যান্ড ধরে অসংখ্য যানবাহনের জটলা পেড়িয়ে ঝুলতে ঝুলতে একসময় হয়তো কাঙ্খিত স্থানে পৌছিয়ে যাই। নাহ আমার কোন অভিযোগ নেই তাতে। আমার দেশটা গরীব দেশ,কিন্তু মানুষের মনটা বড়। তাই জনসংখ্যাটা একটু বড়ই নাহয় হয়ে গেলো,তাতে কি?বিশ্বাস করেন তাতে আমার কষ্ট নেই।
আমি সহ্য করে নেই,আমি ভেবে নেই এইটাই আমার দেশ,সোনার বাংলাদেশ।
আমি যখন সারাদিন খাটাখাটনি করে বাসায় এসে মায়ের কাছে একগ্লাস ঠান্ডা জল চাই আর মা বলেন লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় পানি ঠান্ডা হয়নি তখন আমি আর আমার ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহটা একটু শুধু হাহাকার করে উঠে। আমি তবুও চুপ করে উত্তপ্ত মনের উত্তপ্ততা উত্তপ্ত বারিতেই প্রশমন করি। বাসায় এসে বেশিরভাগ দিন যখন অন্ধকার গুহায় গুমোট ঘরে প্রবেশ করে অদম্য রক্তপিপাসু মশার কামড় খাই তখনো,হ্যা তখনো আমি চুপ করে বসে থাকি। একটা প্রতিবাদ করিনা।
মাঝে মাঝে শুধু হাঁক দিয়ে উঠি,এই দেশে আর থাকা যাবেনা। এরা দেশটা ধ্বংস করে দিলো। আমি বুঝতে পারি যে এর থেকে বেশি আর কিছুই বলার নাই।
গত কয়েকদিন ধরে আমি যখন অসভ্য লোডশেডিং এর শত যন্ত্রণায় নিজ কাজ সেরে রাতে ঘুমাতে যাই,তখন আবার সেই যন্ত্রণা। আবারো সেই অন্ধকার রাজ্যে পাখার ছনছন আওয়াজে ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টা।
আমি ক্লান্ত হই এবার,আমি বিরক্ত হই। আমি স্তব্ধ হয়ে যাই আর শুধু ভাবি আর ভাবি যার কোন সীমা নেই,পরিসীমা নেই। আমি ভাবি আমরা এই বাংলার মানুষেরা ৬০ ভাগ ভোট দিয়ে যাকে ক্ষমতায় আনলাম সে একী খেলা শুরু করলো??নাহ,আমার মত একজন সাধারণ ক্ষমতাহীন নাগরিক আর কী বলবে বলুন?আছে কি ভাই কিছু বলার?
আমি সব সহ্য করে নিয়েছি। আমি জানি আমাকে প্রতিদিন ময়লা সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে হবে,চরম গরম বাজারে যেয়ে অন্নদ্রব্য কিনতে হবে,ঘর্মাক্ত শরীরে সারা দিনের ক্লান্তি শেষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে একটি সি.এন.জির জন্য এবং তাকে গন্থব্যের নাম বলার সাথে সাথে চেয়ে বসবে এমন একটা ভাড়া(মাঝে মাঝে মনে হয় শয়তানি করে বলে) যা শুনে আপনার হাতটা চালকের গালে ছুটে যেতে চাইবে। আমি দেখতে পাই পেট্রল,ডিজেলের দাম বেড়েছে বলে সি.এন.জি বাসের ভাড়াও ৩৩% বেড়ে যায়।
আমি দেখি পরিবার নিয়ে বিনোদন পার্কে বেড়াতে গেলে সহজ সরল মানুষের কাছে জোর করে অর্থ আদায় করা হয় এবং প্রতিবাদ করলে বলা হয় এটা তাদের অধিকার। কারণ তারা এই জায়গার ইজারা নিয়ে বহু অর্থ ব্যয় করেছে। একই অবস্থা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। কুলিরা এবার সাধারণ মানুষের যমদূত। টাকা দে নাহলে মাইর খা!সেলুকাস দেশে বাস করছি ভাই।
কই আছি ভাই বলেন তো??নাহ এগুলো শুধু আমার অভিযোগ,সাথে কিঞ্চিত অভিমান বললে ভুল হবেনা। কিন্তু তাও আমার দেশকে আমি ভালোবাসি,কে না বাসে?তাই সব সহ্য করে নিলাম।
কিন্তু আমি সহ্য করতে পারলাম না যা,তাই এখন একটু শেয়ার করতে মন চায়। আমি ব্লগে একজনের মন্তব্য পড়ে জেনেছি সংসদ চালাতে প্রতি মিনিট ব্যয় হয় ১২০০০ টাকা। সেদিন দেখলাম আমাদের সবার প্রিয় চোখের মণি,গনতন্ত্রের আপোষহীন কন্যা শেখ হাসিনা টানা ৩০ মিনিট বা তারো বেশি সময় ধরে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দোষক্রুটির বিশ্লেষণ করছেন।
আমি হতভম্ব। আমি বিস্মিত। আমি ভাবি এটাই কি আমাদের দেশ না?এটাই তো আমাদের বাংলাদেশ যেখানে একটি দশ বছরের মেয়ে আত্নহত্যা করে ভাত না খেতে পাওয়ার অভিমানে। এই সেই দেশ যেখানে মা তার সদ্য জন্মানো শিশুটিকে মাত্র ২ হাজার টাকায় পেটের দায়ে বিক্রি করে দেয়। এই সেই দেশ যেখানে চার বছর থেকে শুরু করে নব্বই বছরের ক্ষুধার্ত ভিখিরীরা দুয়ারে দুয়ারে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
আমাদের সোনার দেশের ডিজিটাল নেত্রী তখন ১২০০০/মিনিট হারে বিরোধীদলের কোন নেতাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করে মহান কাজ করেছিলেন তার ফিরিস্তি গান। সবাই আসেন একবার বলি জয় বাংলা!
আমি সহ্য করতে পারিনাই যখন ওই ৩০ মিনিট ভাষনে জানলাম আগের সরকার ২০০০০ কোটি টাকা খরচ করে দেশের কোনায় কোনায় খাম্বা বসিয়েছে,আর তার সুযোগ্য সন্তান খুনের মামলা ঢাকতে এক খুনীর পিতার নিকট ১০০ কোটি টাকা চাদা দাবী করে। আমি হতভম্ব হয়ে যাই যখন দেখি আমাদের দেশচালকেরা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত,উচ্চ শ্রেণীর কর্পোরেট সাধুদের আমন্ত্রণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আপ্যায়ন ব্যয়ে খরচ করে। পায়জামা খোলা দেলোয়ার ৩৫ কেজি পোলাওর চাল আমাদের টাকায় কিনে খায়। বাসায় হাঁটার জন্য আমি একটা চপ্পল পড়ি,ওদের চেহারা যখন টিভিতে দেখি তখন আপনা আপনি হাতটা চপ্পলজোড়া খুলে আনে।
আমি বুঝতে পারি কতটা বেদনা বুকে থাকলে বুশ ভাইকে জুতা মারে সাধারণ একজন সাংবাদিক।
একটু আবার লোডশেডিং এর কথা বলতে চাই। আমার বি.এস.সি লেভেলে থিসিস ছিলো লোড ফোরকাস্টিং নিয়ে। আমি আন্দাজ করতে পারি দেশে কতটুকু লোড এখন অথবা তার ২-৩ বছরের মধ্যে লাগতে পারে। আগের বছরের থেকে সেটা যে সরকারী হিসাব অনুযায়ী ১০০+ মেগাওয়াট এর বেশী না এটাও জানি।
আমি এটা বুঝতে পারছিনা যে এই বাড়তি চাহিদার জন্য আগের তুলনায় দ্বিগুণ লোডশেডিং হওয়ার কারণ কি?হয়তো এই উত্তর আপনিও জানেন আমিও জানি। আমি শুধু এটাই চাই যে আপনার মনে প্রশ্ন আসুক,চিন্তা করুন ভাবুন।
আমরা মঈন সাহেবের শাসনামলে,এরশাদের আমলে গণতন্ত্রের দাবী জানিয়েছি। আমরা ভোট দিয়েছি খালেদা হাসিনাকে। বুকে হাত দিয়ে বলেন তো,এরা যা করছে সেটা কি গণতন্ত্র???স্বৈরাচার কেন নয় বলতে পারেন?
আমি সবার কাছে একটা জিনিস জানতে চাই,আমরা কি নপুংশক?আমরা কি কিছুই করতে পারিনা?আমরা কি এভাবেই ওই অমানুষ,লোভী,নরকের কীট নেতা নেত্রীর অত্যাচারের স্বীকার হয়ে এত কষ্ট করে অর্জিত হওয়া দেশটাকে ধ্বংস করে দেব??
আমরা আমাদের অভিযোগ লিখবো ব্লগে পত্রিকায়,আলোচনার ঝড় তুলবো প্রতি কাপ চায়ে।
আমরা নিরুপায় হয়ে এদের বিলাসীতা দেখবো আর ট্যাক্স দিয়ে দিয়ে এদের আভিজাত্য আর স্ট্যাটাস বাড়িয়ে চলবো এই কি আমাদের কাজ?আমি নিজেকে প্রশ্ন করে এভাবে এত মিথ্যাচার দেখে কি করে চুপ হয়ে বসে থাকি?কেন আমাদের কিছুই বলার নাই?আমরা কি তবে আমাদের বিবেক,বিচারবোধ সব বিসর্জন দিয়ে ফেলেছি???
গত কিছুদিন ধরে না রাতে না দুপুরে একটুও ঘুমাতে পারছিনা। ক্লান্ত হয়ে গেছি এদেশের রাজনীতি দেখে। দেশ যখন অন্ধকারে ডুবে আছে তখন এরা উচ্ছেদ কর্মে ব্যস্ত। আমি জানি আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। থাকলে বিশ্বাস করেন নিজের চটিজোড়া খুলে দুই নেত্রীর আর তাদের অসাধু অনুসারীদের গালে ছাপ ফেলে আসতাম।
কিন্তু ওইযে অসহায় সাধারণ বাংগাল আমরা। কিচ্ছু করতে পারবো না। প্রিয় নেতারা তাদের ছেলে মেয়ে বিদেশে পড়তে পাঠাবে,সরকারী কর্মকর্তা এক বছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা(প্রথম আলো অনুযায়ী) শুধু ঘুষ খাবে,মন্ত্রীর ছেলে ২৩০০ টাকা বেতনের ট্রাফিক পুলিশকে জনসমক্ষে পিটিয়ে হত্যা করবে,অর্ধভুক জনগোষ্টীর কাতর চোখ অবহেলা করে বড় বড় শপিং মল বানানোর প্রতিযোগিতা চলবে,যে নেতা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে জলজ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারবে তাকে গদিতে আদর করে বসানো হবে,আলবদর প্রধান মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে.....আর আমরা তাকিয়ে দেখবো......
ভাই ছোট্ট একটা প্রশ্ন এতো কিছু দেখে বুকে একটু আগুন জ্বলেনা,কিছু করতে ইচ্ছা হয়না??পারিনা আমরা একটুখানি দেশটাকে সুন্দর করতে????পারিনা ওই অবংশধারীদের কানে ধরে গদি থেকে নামিয়ে জিজ্ঞেস করতে “"কার টাকায় খায়া ফুর্তি করো আন্টি"?”
কেউ আমার লেখা পড়ে রাগ করবেন না। জানিনা বুঝবেন কিনা আমার মনের কথাগুলো। অনেকদিন ধরে বলতে ইচ্ছা করছিলো অনেক কিছু।
নির্ঘুম হয়ে প্লাস্টিকের পাখায় গরম বাতাস খেতে খেতে এইসব কথা মনে আসে,কিন্তু বলা হয়নি। আজ বললাম। আমি জানি সবাই একই দুর্ভোগের শিকার। অনেকেই তাদের যন্ত্রণা জানিয়েছেন। আমিও তাই একগাদা প্রশ্ন করে গেলাম সবাইকে।
আবারো কেউ লিখা পড়ে দুঃখিত হলে,তার থেকে দ্বিগুণ দুঃখিত হবো জানিয়ে রাখলাম।
শুধু একটি প্রশ্ন এত অন্যায় অনাচার দেখে আমরা কি এখনো বেঁচে আছি আর থাকলে সেটা কি মানুষের মত???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।