আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগে আন্দোলনকারী ভাইদের বলছি……

বিগত কয়েকদিন ধরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে যে হাজার হাজার তরুণ তরুণী শাহবাগ মোড়ে একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছে তাতে নবচেতনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্ববাসীকে এর মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতি আরো একবার দেখিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে যে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা রক্ষা করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে এদেশের মানুষ বদ্ধ পরিকর। শুধু একাত্তর সাল নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় আজও এদেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুণী অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে জেগে আছে, জেগে থাকবে অনন্তকাল। এদেশের মানুষ কোন অভ্যন্তরীণ বা বহিঃশত্রুর কাছে মাথা নত করবে না। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আজকে দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুণীর মাঝে যে প্রাণ স্পন্দন জাগ্রত হয়েছে তা দেখে সত্যিই আনন্দিত, অভিভূত।

এ আন্দোলন রুখবার শক্তি কারো নেই। এখন প্রয়োজন দেশব্যাপী এই আন্দোলন তীব্র গতিতে ছড়িয়ে দেওয়া, দেশের সর্বস্তরের জনগণকে এই্ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা। এই আন্দোলনকে যেকোন প্রকার রাজনীতিকীকরণ হতে মুক্ত রাখতে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এই আন্দোলনের প্রধান ইস্যু হলেও এই স্বতঃস্ফুর্ত গণজাগরণে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ব্যাপক হারে বাড়ানোর জন্য এদেশের মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জাতীয় ইস্যু যেমন পদ্মাসেতুর দুর্ণীতি, শেয়ারবাজার ক্যালেঙ্কারি, হলমার্ক, ডেস্টিনি ক্যালেঙ্কারি, সাগর রুনি হত্যাকান্ড, বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা ইত্যাদি দাবিতে তরুণ সমাজকে জেগে উঠতে হবে। পাশাপাশি যে স্বাধীনতার চেতনায় এদেশের তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে সেই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্ত হত্যা, পানি আগ্রাসন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, এবং এসব ইস্যুতে সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে।

হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির জন্য এটি একটি মারাত্মক জাতীয় দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। হরতালে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এক ধরণের ধ্বংসযজ্ঞের খেলায় মেতে উঠে, তাই আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে এটি বর্তমানে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এক আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে সাধারণ মানুষের দাবি তুলে ধরার যে প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে সেই প্লাটফর্ম থেকে হরতালের মত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি সংসদে আইন করে বন্ধ করার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এদেশের সাধারণ মানুষ আজ রাজনৈতিক দল সমূহের শোষন নিপীড়নে নিষ্পেষিত হলেও তারা তাদের দাবি আদায়ের জন্য দ্বিমুখী রাজনৈতিক ধারার বাইরে কোন বিকল্প কোন প্লাটফর্ম খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই আজ তরুণদের যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে তা হয়ে উঠতে পারে এদেশের গণমানুষের দাবি আদায়ের প্লাটফর্ম।

এদেশের তরুণ সমাজ আর কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা লিপ্সার কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে চায়না। চায় না কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হতে। তারা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়, রাজাকারদের সাথে আঁতাত দেখতে চায় না। এদেশের তরুণ সমাজকে আজ একটি নির্দলীয় প্লাটফর্মে এসে শুধুমাত্র কাদের মোল্লা, গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ নয়, সরকার দলে যেসব চিহ্নিত রাজাকার আছে তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। সরকার দলীয় চিহ্নিত রাজাকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাজেদা চৌধুরী, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান, ড. আনোয়ার হোসেন এমপি (এটিএন বাংলায় রিপোর্টকৃত) এসবের বিরুদ্ধেও তুই রাজাকার, তুই রাজাকার বলে স্লোগান তুলতে হবে।

এক্ষেত্রে রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে কাউকে রেহাই দেওয়ার কোন প্রকার সুযোগ দেওয়া যাবেনা। কারণ, যতক্ষন না পর্যন্ত এদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব না হবে ততক্ষন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিজ দলে ও মন্ত্রীসভায় রাজাকারদের রেখে কাদের মোল্লা, গোলাম আজম, নিজামীদের মত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে তাদের মধ্যে দুর্বলতা কাজ করবে, এক্ষেত্রে সাহসের সাথে তারা সুষ্ঠু ও উপযুক্ত বিচার করতে পারবে না। কারণ, যে দল নিজের দলের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের স্থান দেয় তারা অন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতেও সংকোচ বোধ করবেই। রাজনৈতিক কারণে বিচারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও বিচারের ক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য আঁতাতেরও আশ্রয় নিতে পারে। আর একটি কথা, আন্দোলনকারীদের কারো কোন বক্তব্য যেন কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তা না হলে সেরকম কোন বক্তব্য প্রদান করা হলে আন্দোলনের বিরোধিতাকারীরা আস্তিকতা নাস্তিকতার ধুয়া তুলে আন্দোলনকে ভুন্ডুল করার চেষ্টা চালাবে। তাছাড়া যারা আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে নানা অপকর্ম চালিয়েছিল সেটা তাদের দোষ, ধর্ম তাদেরকে কোন প্রকার হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও অগ্নিকান্ডের মত ঘটনার অনুমতি দেয়নি। কিছু দুর্বৃত্তের অপকর্মের জন্য এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তাই আজ শাহবাগের ময়দানে উপস্থিত হাজার হাজার তরুণ তরুণীর প্রতি আহবান জানাবো, কাদের মোল্লা, গোলাম আজম, নিজামী প্রভৃতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির পাশাপাশি সরকারদলীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেও তারা যেন মুহুর্মুহু স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। উপরোল্লিখিত অন্যান্য জাতীয় ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর ব্যাপারেও তারা যেন সোচ্চার হয়।

তাহলে এই আন্দোলন অবিলম্বে গণআন্দোলন গণঅভ্যুথানে পরিণত হবে। এতে করে সরকার আন্দোলনকারীদের উপর খড়গহস্ত হলেও দলমত নির্বিশেষে সারাদেশের সাধারণ মানুষ আন্দোলনকারীদের পাশে এসে দাঁড়াবে এবং গণমানুষের প্রতিবাদে এই আন্দোলনের বিজয় নিশ্চিত হবে। অন্যথায় সরকারের আনুগত্য হারানোর ভয়ে সরকারের পুলিশ বাহিনী ও সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকারীরা যদি এদেশের জাতীয় ইস্যু ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট গণমানুষের দাবিগুলোকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত ছকে সরকারের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যায় তাহলে এই আন্দোলন অচিরেই গণসম্পৃক্ততা হারাবে এবং দেশের সাধারণ জনগণ এটাকে সরকারদলীয় নাটক হিসাবে চিহ্নিত করবে। আমরা যদি মিশরের তাহরীর স্কয়ারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি, তাহলে দেখা যাবে সেখানে যারা আন্দোলন করেছিল তারা অদম্য সাহস বুকে নিয়ে সেনাবাহিনীর ট্যাংকের সামনে বুক চিতিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেনি, মাথার উপর সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বার বার করে টহল দিলেও তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আন্দোলন থেকে পিছপা হয়নি। রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারী বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা গণমানুষের মুক্তির দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে বিজয় অর্জন করেছেন।

আবার আমাদের পবিত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে তাকালেও আমরা দেখতে পাই যে, সেখানে পাক হানাদার বাহিনীর বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছেন। এদেশের তরুণ প্রজন্ম তাদেরই উত্তরসূরি। তাদের অর্জিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দ্বায়িত্ব এখন আমাদের। এদেশের লক্ষ্ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর কোন আঘাত এলে এদেশের তরুণ প্রজন্ম অতীতের মত প্রয়োজনে আবারো তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আগ্রাসী শক্তিগুলোর যে কোন অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, অভ্যন্তরীন ও প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী শক্তি এবং সমগ্র বিশ্বকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। পরিশেষে শাহবাগে আন্দোলনরত ভাইবোনদের সুস্থতা ও আন্দোলনের সফলতা কামনা করে এবং আন্দোলনটি থেকে কোন পক্ষ যেন কোন প্রকার রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পারে এমন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয়ভাবে পরিচালিত হয়ে যেন তা গণমানুষের দাবি আদায়ে ভূমিকা রাখতে পারে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে এখানে শেষ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।