ধন্যবাদ
পাকিস্তানে সোয়াত গ্রামে বালিকাকে বেত্রাঘাতের উপখ্যানের রহস্য উন্মোচন
ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। ঘটনা নয়, বলুন দুর্ঘটনা। সোয়াতের একটি গ্রামে ১৭ বছরের একটি মেয়েকে উপুড় করে শোয়ায়ে প্রকাশ্যভাবে দোররা মারা হচ্ছে এবং মেয়েটি পশতু ভাষায় আর্তনাদ করছে আর মা চাইছে। পুরুষরা ঘিরে রয়েছে এবং এ দৃশ্য দেখছে। এটা সোয়াতের সংস্কৃতি ও প্রথার পরিপন্থী।
এটাকে ‘ইসলামি শরিয়াহ বাস্তবায়ন’ কিছুতেই বলা যায় না। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, মেয়েটি মাহরাম (শরীয়া অনুযায়ী যে পুরুষের সাথে পর্দা করতে হয় না) ছাড়া কিংবা না-মাহরাম পুরুষের সাথে বাড়ির বাইরে যাওয়ার দায়ে তাকে এ শাস্তি দেয়া হয়। শাস্তি দিচ্ছিল তিনজন পুরুষ। একজন মেয়েটির পা চেপে ধরে রেখেছিল। অন্যজন তার মাথার দিকটি ধরে রেখেছিল।
আর তৃতীয়জন তার কোমরে দোররা মারছিল। তাকে এক নাগাড়ে ৩২ বার দোররা মারা হয়। কিন্ত– যে পুরুষটি তাকে চেপে ধরে রেখেছিল, তার শরীরে হাত দিয়ে রেখেছিল, সে কি তার মাহরাম ছিল? নিশ্চয়ই তা ছিল না। তাহলে তারাই তো আরো বড় অপরাধ করেছে। তাদের তো শত দোররা মারা উচিত।
বলা হচ্ছে, এটা ছিল তালেবানদের কর্ম। কিন্ত– তালেবানের এক মুখপাত্র মুসলিম খান বলেছেন মেয়েটিকে পর্দার মধ্যে বাড়ির অন্দর মহলে নিয়ে শাস্তি দেয়া উচিত ছিল। কিন্ত– কেন? শরিয়ত তা-ই, যার ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন মজিদে কি কোনো না-মাহরামের সাথে বা মাহরাম ছাড়া বাইরে যাওয়ার জন্য দোররার শাস্তির বিধান রয়েছে? মহানবী সাঃ-এর সময়ে কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল? খোলাফায়ে রাশেদিনের ব্যাপারে কি এমন কোনো ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়? তখন তো ব্যভিচারের দায়ে অভিযুক্ত নারীর সাথেও নমনীয় আচরণ করা হয়েছিল। অথচ ওই নারী নিজের অপরাধ ¯¦ীকার করেছিল।
তাহলে এটা কেমন শরিয়ত, আর কেমন ইসলাম? এ মর্মেও কোনো প্রমাণ নেই যে, কোনো কাজির আদালত থেকে এই শাস্তির রায় দেয়া হয়েছিল। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে সেই কাজিও শাস্তিযোগ্য হবেন।
৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সব ক’টি টিভি চ্যানেলে এ দৃশ্য দেখানো হয়। কয়েকটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেটেও তা দেখা গেছে। বিবিসিও খবরটি প্রচার করেছে এবং সব জায়গা থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে এটা কেমন ইসলাম? এটা কেমন শরিয়ত? তালেবান এসব করছে।
এসব মন্তব্য থেকেই ¯পষ্ট, আসল মতলব কী?
নিঃসন্দেহে এটা মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শেষ করা যাবে না। কিন্ত– এ প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্নও উঠছে। প্রথমত, প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ঘটনাটি ঘটেছে ৩ জানুয়ারি। ঠিক তিন মাস পরে তা প্রচারের উদ্দেশ্য কী? ঘটনাটি এত দিন প্রকাশ পেল না কেন? এ সন্দেহ এখন উপো করা হচ্ছে যে, দৃশ্যটি পাকিস্তানের কোনো এলাকার, না আফগানিস্তানের? কেন না, ঘটনা যেখানেরই হোক, এতে মুসলমানরা জড়িত এবং এমন মুসলমান যারা দৃশ্যত শরিয়াহ পালনকারী ও শ্মশ্র“মণ্ডিত।
যদি তারা আফগান হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্ত– ভিডিওটি ধারণ করল কে? সেই দণ্ডদাতারা কি এ জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিল যাতে অন্যরা ভয় পায়? নাকি কেউ নিজ ক্যামেরায় তা নিজ দায়িতে¦ ধারণ করে রেখেছিল? তারপর সোয়াতে নেফাজে শরিয়াহ চুক্তির অপোয় এত দিন তা প্রকাশ করা হয়নি? উলেখ্য, মাওলানা সুফি মুহা¤মদের সাথে চুক্তি হয় ২৬ জানুয়ারি, তার আগেই এ ঘটনা ঘটেছিল। এখন এই ভিডিও দেখে নারীবাদী সংগঠনগুলো ও তথাকথিত কিছু মানবাধিকার সংগঠন হইচই শুরু করেছে যে, মাওলানা সুফি মুহা¤মদের সাথে চুক্তি বাতিল এবং সোয়াতে আবার অভিযান শুরু করা হোক। ঘটনার তিন মাস পরে ভিডিও প্রকাশের মতলব এটাই, আসলে যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানে ঢুকে পড়ার জন্য প্রস্ত–ত হয়ে বসে আছে। পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং এ ধরনের ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এমন মনোভাব সৃষ্টি করা উদ্দেশ্য যে, যুক্তরাষ্ট্র যা কিছু করছে, ঠিকই করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রই এখন এসব রক্তপিপাসু পশুদের থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।
দেশের একজন মন্ত্রী তো বলে ফেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৮০ ভাগ ড্রোন হামলা সফল হয়েছে। আরেক ভদ্রলোক কিছু দিন যাবৎ বলে বেড়াচ্ছেন তালেবান সিšধুতেও প্রাধান্য বিস্তার করবে এবং তখন করাচিতেও কোনো নারী মাহরাম ও বোরকা ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না। তিনি এখন ‘প্রমাণ’ পেয়ে গেলেন।
যেমনটি বলা হচ্ছে, ঘটনা যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে, তাহলে তা কোনো পশ্চাৎপদ ও প্রত্যন্ত এলাকায় ঘটেছে। কিন্ত– তিন নারীকে জীবন্ত কবর দেয়ার ঘটনাও কি ‘ফাটা’ বা মালাকান্দ এজে›িসতে হয়েছিল? তাসলিম সোলেঙ্গির ওপর কুকুর লেলিয়ে দিয়েছিল কোন তালেবান? মুখতার মাই এবং এ ধরনের অন্যান্য মহিলার সাথে গণধর্ষণের ঘটনা কোনো তালেবান ঘটিয়েছিল কি? নিশ্চয় একটি খারাপ ঘটনা অন্যান্য অন্যায় কাজের জন্য দলিল হতে পারে না।
কিন্ত– পাকিস্তানের যেসব এলাকায় আইন কার্যকর রয়েছে, সাধারণ আদালত চালু আছে, বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা গেলে অপরাধীকে পাকড়াও করা যাবে। এমন ঘৃণ্য ঘটনায় কেউ বলছে না যে, আইন অকার্যকর হয়ে গেছে। আশ্চর্যের বিষয়! আবু গারিব কারাগারে নারীদের প্রতি কুকুর লেলিয়ে দেয়া হলো, ইরাকে মুসলিম নারীদের গণধর্ষণ করা হলো। কিন্ত– কোনো খ্রিষ্টান এ কথা বলে না যে, খ্রিষ্টধর্ম ঝুঁকির মুখে পড়েছে, বা ক্রুসেডার দস্যুরা ওয়াশিংটন দখল করবে। এখন চারদিক থেকে দাবি তোলা হচ্ছে, সোয়াতে নেফাজে শরিয়াহ চুক্তি বাতিল করা হোক।
ঘটনার তিন মাস পরে ভিডিও রিলিজ করার আসল উদ্দেশ্য এটাই। অবশ্য প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি ঘটনাটি গুরুতে¦র সাথে নিয়েছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
¯¥রণ করা যেতে পারে নাইন-ইলেভেনের ঘটনার কিছু দিন পরে পশ্চিমা টিভি চ্যানেলগুলোতে একটি ছবি বার বার প্রচার করা হতে থাকে আফগানিস্তান স¤পর্কে। তাতে দেখা যায়, এক পুরুষ এক বোরকা পরা নারীকে লাঠিপেটা করছে। কয়েক দিন এক নাগাড়ে ছবিটি প্রচার করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক নিউজ এজে›িসগুলো আফগান নারীদের ওপর নির্যাতনের ছবি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। তাতে পশ্চিমা সমাজে আফগানিস্তানের ব্যাপারে এমন ধারণা তৈরি হয়ে যায় যে, আফগান সমাজ অত্যন্ত পশ্চাৎপদ; যেখানে নারীরা নির্যাতনের শিকার এবং মৌলিক মানবাধিকার বঞ্চিত। ছবিটি তৈরি করেছিলেন আন্তর্জাতিক একটি মিডিয়ার একজন সাংবাদিক। এ জন্য তাকে প্রচুর পুরস্কার দেয়া হয়। কিন্ত– তখন কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে, ছবিটির আড়ালে পাশ্চাত্যের জনগণকে আফগানিস্তানে হামলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্ত–ত করা হচ্ছে।
তা-ই হলো। মার্কিন মিত্ররা আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে মতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করল। মিত্র বাহিনীর গোলাবারুদে হাজার হাজার নিরপরাধ আফগান নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হলো। কিন্ত– পরে পাশ্চাত্যেরই হুঁশ হলো যে, মার্কিন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে তাদেরকে সাথে নেয়া হয়েছে। তারপর পাশ্চাত্যেরই এক প্রচার মাধ্যমে এ তথ্য উদঘাটন করা হয় যে, ছবিটি ছিল সাজানো।
শুটিং করার জন্য ওই পুুরুষ ও নারীকে অর্থের বিনিময়ে রাজি করা হয়েছিল। কিন্ত– তত দিনে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এবারো কি পাকিস্তানে মার্কিন উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে?
স্বপ্নবিলাস
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।