আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবাই যখন পরিতৃপ্ত 'জিলাপির কাস্টমার'।



নিলক্ষেতের জিলাপীর দোকানটার চোহারা যাই হোক, জিলাপিগুলো মজার। প্রতি পিস মাত্র ৪ টাকা করে জিলাপিগুলো ভালোই চলছিল। এমনকি পিক আওয়ারে কাড়াকাড়ি অবস্থা। আমিও এক নিয়মিত কাস্টমার। হঠাৎ একদিন . . . দোকানে কাস্টমার নেই।

দোকানদার আছে, জিলাপী আছে, কাস্টমার নেই। রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে উঠে দোকনের কাছে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমিও ক্ষুদ্ধ হয়ে দোকান ত্যাগ করলাম। বিষয়টি কিছুই নয়, ছোট্ট একটি নোটিশ ঝুলানো, "চিনির দাম বৃদ্ধিহেতু জিলাপির দাম এখন থেকে ১ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মাত্র ৫ টাকা। " আমি অভিমানে কেটে পড়লাম। "এত দাম" দিয়ে একটা জিলাপি! খাবনা।

কদিন পর হঠাৎ দেখি জিলাপির দোকানে যথারীতি ভীড়। ঘটনা কি? - "সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। পূর্বের দাম বহাল, সম্মানিত ক্রেতাদের দাবীর প্রেক্ষিতে পূর্বের দাম ৪ টাকায়ই জিলাপি বিক্রি হবে। " আমিও অন্যদের মত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে যথারীতি মাত্র ৪ টাকায় একটা জিলাপির গর্বিত কাস্টমার। দিনগুলো চলে যাচ্ছিল।

হঠাৎ একদিন দেখি নোটিশ- "জিলাপির দাম ৫ টাকা। " . . . . কিন্তু পাবলিকের তেমন কোন ভাবান্তর নেই। কাস্টমারও কমেনা। আমি রাগ করিনা। ভাবি, লোকটা নিশ্চয়ই সত্যিই সমস্যায়, নইলে আবারও কেন বৃদ্ধি করলো।

সহানুভূতি জাগ্রত হলো। ভাবলাম, 'মোটেতো একটাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অসুবিধা কি?' অতপর সবাই আমার মত, আমি সবার মত। জিলাপির দোকান আগের মতই চলছে- কারোই মনে নেই- ২৫% বেশি দামে আমরা জিলাপি খাচ্ছি। গত সরকারের চেয়ে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট মোটেই কম নেই।

সরকারের খাস ভক্তও কেউ এ দাবী করতে পারবেনা। কিন্তু গত সরকার যদি এখনও ক্ষমতায় থাকতো তবে কি দশা হতো? শুষ্ক মওসুম আসামাত্র নির্ঘাত সারাদেশে বিদ্যুত অফিসে হামলা হতো, মিছিল, সমাবেশ, মানব বন্ধন, আলটিমেটাম, ঘেরাও- কিছু বাদ থাকতো না। সরকার পরিবর্তন হলো, শুকনো মওসুম আসলো এবং বিদ্যৎ যথারীতি তার খেল দেখাতে শুরু করলো। কিন্তু জিলাপীর কাস্টমারের মত এবার আর পাবলিক কিছু বলেনা, আন্দোলন বিক্ষোভে সকলেই শ্রান্ত। ভাবে, এটাই আমাদের কপাল, সরকারের দোষ দিয়ে কি লাভ।

বলাই বাহুল্য যে একটি সরকারের তিন মাস তার মূল্যায়নের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। আর বিদ্যুত সমস্যার সমাধান বললেই হয়ে যায়না। মানলাম। সকলেই মানে। মানুষ যে একটু আশাবাদি হবে, তেমন কোন উদ্যোগ কি দেখা যায়? মাটির তলা থেকে জঙ্গি খুঁজে বের করা, (অথচ নিজের ঘরের জঙ্গিরা মাঠ তছনছ করে ফেললো), ট্রানজিট-করিডোর, দক্ষিণ এশিয় টাক্সফোর্স, খালেদার বাড়ি বাতিল, ইত্যাদি দূরবর্তী বিষয়গুলো একের পর এক সামনে আনা হচ্ছে।

কোথায় দ্রব্যমূল্য, কোথায় বিদ্যুত, কোথায় ক্রমবর্ধমান ছিনতাই-চুরি। কোথায় বিশ্ব মন্দার আগ্রাসী থাবা মোকাবেলা। কোন যথার্থ উদ্যোগই অন্তত আমাদের চোখে পড়ছেনা। প্রতিটি পাঁচ বছরের প্রান্তে এসে জনগণ আশায় বুক বাধে, এবার বুঝি পরিবর্তন। মিষ্টি মিষ্টি আশ্বাস প্রতিশ্রুতিতে তারা আরো উদ্বেলিত হয়।

কিন্তু সিংহাসন আরোহন পরবর্তী সেই একই চিত্র। বাধ্য হয়ে সবাই ৫ টাকা দরেই জিলাপি কিনতে থাকে। জনগণের প্রতারিত হবার এ ইতিহাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘই হচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.