আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউশনি কাব্য এবং কিছু চর্বিত চর্বণ-(পর্ব ১)

এবার বিদায়ের পালা ...

"ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ",বোধকরি শুধুমাত্র আমার নয়,সকল ছাত্রছাত্রীর শৈশবকাল কেটেছে এই বেদবাক্য শুনতে শুনতে। অন্তত উচ্চমাধ্যমিকের চৌকাঠ ডিঙ্গানোর আগে এটিই ধ্রুব সত্য বলে জেনে এসেহিলাম। কিন্তু কে জানত এই কথাটি একদিন এত বড় পরিহাসে পরিণত হবে। আসলেই ,ছাত্রজীবনে যদি একবার অর্থোপার্জনের চিন্তা মাথায় ঢোকে,তখন পড়াশোনা যে কোন চুলোয় যায় তা সম্ভবত বিদ্যাসাগর মশায়ও বলতে পারতেন কিনা সন্দেহ। "আর কাঁহাতক বাপের কষ্টার্জিত টাকার শ্রাদ্ধ করব ,"এমন ধারণা থেকেই হোক বা "পড়াশোনা তো অনেক হল,এবার খানিকটা পাঠ্যপুস্তক বহির্ভূত বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া যাক ",এই চিন্তা থেকেই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর থেকেই অনেক ছাত্রই ঘোর বৈষয়িক হয়ে ওঠে।

যাই হোক,এত গৌরিচন্দ্রিকার শেষে এখন যদি প্রশ্ন রাখি ছাত্রাবস্থায় অর্থোপার্জনের সবচেয়ে সৎ(!!),সর্বোৎকৃষ্ট এবং সহজতম পন্থা কোনটি তখন সবাই একবাক্যে বলবেন এটি হল প্রাইভেট টিউশনি। তবে একথা অস্বীকার করার জো নেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেই যে সবাই একেবারে আয়োজন করে পড়ালেখার ইস্তফা দেয় এমনটা ভাবা ভুল। অনেক ছাত্রই আছে যারা নানা কারণে এই মহৎ(!!!) পেশটির প্রতি নিতান্তই বিমাতাসুলভ দৃষ্টি প্রদর্শন করে । তাদের সাথে আমার এই লেখার কোন রকম সম্পর্ক(তা কাকতালীয়ই হোক বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিতই হোক) নেই। কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা নিয়েই আমার আজকের এই লেখা।

এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার একেবারে শুরুর দিকের ঘটনা। বুয়েটের ছাত্র হিসেবে টিউশনির বাজারে আমাদের যে ভালই নামডাক তা আমার অজানা ছিলনা । এমনকি ঢাকায় আসার পর এও শুনেছিলাম এখানে টিউশনি নাকি একেবারেই সহজলভ্য। তবে প্রথম সেমিস্টারে ওপথে পা বাড়ানোর দিকে পিতৃদেবের চরম নিষেধ ছিল। যাই হোক, একদিন এক বন্ধু এসে বলল সে নাকি এক সুন্দরী,স্মার্ট ছাত্রীকে পড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছে।

তো সেই ছাত্রী নাকি প্রথম দিন তার কাছে ক্যালকুলাস শব্দের অর্থ জানতে চেয়েছে। আমি শুধালাম,"তুই কি বলেছিস?" সে নাকি বলল,"আসলে এই প্রশ্ন তোমাদের সিলেবাস বহির্ভূত । তারপরও শুধুমাত্র তোমার কৌতুহলের খাতিরে আমি পরেরদিন এই প্রশ্নের জবাব দেব । " বলাই বাহুল্য,আমার এই বন্ধুটিকে খুব বেশিদিন এইসব জ্ঞানগর্ভ(!) প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ব্যতিব্যস্ত হতে হয়নি। তো আমার আরেক বন্ধুর ঘটনা।

এই বন্ধুটি আবার আরেক ধাপ ওপরে। বুয়েটে ভর্তি হতে না হতেই সে তখন "পেশাদার গৃহশিক্ষকে"পরিণত হয়েছে। ক্যারিয়ারের(!)প্রতি আন্তরিক যত্নবান এই বন্ধুটি একদিন ক্লাসে গভীর মনোযোগ দিয়ে হারুনুর রশিদ লিখিত উচ মাধ্যমিক বলবিদ্যা বইটি পড়ছিল। বিধিবাম স্যার তখনই তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। অবাক ব্যাপার,স্যার কোথায় অগ্নিশর্মা হয়ে উঠবেন,উল্টে বললেন ,"তোমার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ,তাইনা ? ঠিক আছে,এতটুকু কষ্ট তখন তোমার তো করতেই হবে।

"স্যার তো ঘুণাক্ষ্ররেও ভাবতেও পারেননি আর্র্থিক অনটন তো দিল্লী দূর অস্ত,বরং সুন্দরী ছাত্রী পড়ায় বলেই তার এত আটঘাঁট। সবাই তো হাসি চাপবার প্রাণপাত চেষ্টা করছে। এদিকে স্যার বলেই চলেছেন," দেখ, পড়ানোর আগে সঠিক প্রস্তুতি খুবই জরুরী। এই যে আমাকে দেখ,আমি যদি বাসা থেকে প্রিপারেশন নিয়ে আসতাম তাহলে তোমাদের আরও ভাল পড়াতে পারতাম" । স্যারের এই মন্তব্য রসিকতা নাকি নিতান্তই স্বগোতক্তি,তা আমরা আজো বুঝে উঠতে পারিনি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।