আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মমির অভিশাপ



কোনদিনও ডুববে না এমন দাবি করে ১৯১২ সালে প্রথম বিহারেই ১৫০০ যাত্রী নিয়ে বিলাসবহুল টাইটানিক আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাবার পর যে সকল কাহিনী প্রচারিত হয়েছিল তাদেরই একটি এক অভিশপ্ত মমির অভিশাপ। আর এই মমিটি ইজিপ্টের রাজকুমারী আমেন রা এর। বলা হয় মমির অভিশাপের কারনেই ভাসমান বরফদ্বীপের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল টাইটানিক। গল্পটি বহু বছর ধরে প্রচারিত হলেও এর পালে হাওয়া লাগে অস্কার বিজয়ী টাইটানিক ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবার পর। গল্পটি এরকম - ১৮৯০ সালের শেষার্ধে এক ধনী ইংরেজ লুক্সরের কাছে এক প্রত্নতাত্নিক খননকাজ দেখতে যান।

তিনি সেখান থেকেই কেনেন কফিনশুদ্ধ রাজকুমারীর এই মমিটি। এরপর তিনি জাহাজে করে মমিটি দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন কিন্তু বন্দরে মমিটি গ্রহণ করার জন্য আর উপস্থিত থাকতে পারলেন না। তিনি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। বাস্তবিকই তাকে আর কোনদিনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গী অপর তিন জনের একজন কিছুদিন পরেই মারা যান, দুর্ঘটনায় একজনের হাত কাটা পড়ে আর অপরজন ব্যাংক ফেল করায় সর্বসান্ত হন।

কফিনটি ইংল্যান্ডে পৌছলে একজন ব্যবসায়ী তা কিনে নেন। এর ফলে সেই ব্যবসায়ীর পরিবারের তিনজন মোটর দুর্ঘটনায় আহত হন এবং তার বাড়ীতে আগুন লাগে। মমিটিকে অভিশপ্ত মনে করে সেই ব্যক্তি এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে দান করে দেন। মিউজিয়াম এটিকে সাদরে গ্রহণ করলো। কিন্তু মিউজিয়ামের কর্মচারীরা রাত্রিবেলা শুনতে পেল কফিনের ভেতর থেকে তীব্র কান্নাস্বর।

প্রদর্শনী কক্ষের জিনিসপত্রগুলো সব এলোমেলোভাবে পড়ে থাকতে দেখা গেল। মারা গেল এক প্রহরী। এ কথা জানতে পেরে এক ফটোগ্রাফার কফিনের ছবি তুলে আনলেন। ছবি ডেভেলপ করার পর ছবিতে যে বীভৎস রূপ তিনি দেখলেন তাতে আত্নহত্যা করেই তিনি মুক্তির পথ খুঁজলেন। ব্রিটিশ মিউজিয়ামও আর এসব সহ্য করতে পারছিল না।

কিন্তু মমিটির কুখ্যাতি এতটাই ছড়িয়েছিল যে এ থেকে তারা সহজে মুক্তি পাননি। অবশেষে একজন আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ এসব কিছুকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে কিনে নিলেন মমিটি আর টাইটানিকে চড়িয়ে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। আর এরপরের ঘটনা তো সবারই জানা। তবে এই গল্পের আরেকটি ভার্সনে বলা হয় সেই প্রত্নতত্ত্ববিদ টাইটানিকের এক নাবিককে ঘুষ দিয়ে মমিটি লাইফবোটে তোলেন এবং এটি আমেরিকা পৌছায়। এরপর মমিটি আবার হাতবদল হয়ে আরো কয়েকবার সমুদ্রবিহার করে অবশেষে সাগরতলে আশ্রয় নেয়।

এটি কি সত্যি? না কোন ফালতু কাহিনী? তবে শিপিং রেকর্ডে খোঁজ করে টাইটানিকে কোন মমি তোলার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে এর বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বলা হয় যে সেই প্রত্নতত্ত্ববিদ নাকি এটি গোপনে বিদেশে পাচার করছিলেন। আবার দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কোন যাত্রীও লাইফবোটে মমি ওঠানোর কথা উল্লেখ করেননি। তাছাড়া কোন উদ্ধারকারীও মমির কথা তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেননি। সম্ভবত এই গল্পের সূচনা হয় ডগলাস মুরে ও টি. ডব্লিউ. স্টিড নামক দুই ইংরেজের কাছ থেকে।

তারা দাবি করেন যে তাদের এক সহযোগী ইজিপ্ট থেকে একটি মমি কিনে তার বাসার বসার ঘরে এটি সাজিয়ে রাখে। পরদিন সকালে দেখা গেল ঘরের সব ভঙ্গুর বস্তুগুলো হয়েছে ভেঙ্গে চুড়মাড়। এবার ঘর পাল্টে দেয়া হল। কিন্তু পরের সকালে দেখা গেল ফল সে একই। দুজনেই ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মমির কফিনটি দেখতে গিয়েছিলেন।

শুধুই কফিন, আসলে সেখানে কোনদিনই কোন মমি ছিল না। তাদের মনে হল কফিনের ডালার গায়ের ছবিটি ভীতিকর। এরপর ভাংচুর আর ভয়ংকর ডালার গল্প দুটি জোড়া দিয়ে নতুন গল্পটি বিক্রি করে দিলেন পত্রিকার কাছে। পরে এই কাহিনীতে ঘটে টাইটানিকের অর্ন্তভুক্তি। এই খবর প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ আরো অনেক পত্রিকায়।

সম্ভবত এই গল্পে টাইটানিকের অংশটুকু ঢোকানোর প্রেরণা দিয়েছিল ১৮৩৮ সালে মেনকরের কফিন হারিয়ে যাওয়া। প্রাচীন রাজত্বকালের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হওয়া এই কফিনটি আনা হচ্ছিল ইজিপ্ট থেকে ইংল্যান্ডে। দ্য বিট্রাইস নামের জাহাজটির কার্টাগিনার কাছে কোথাও সলিল সমাধি হলে এটিও সাগরতলে নিমজ্জিত হয়। তবে ব্রিটিশ মিউজিয়াম এ সকল কাহিনী সবসময়ই অস্বীকার করে আসছে। আর রাজকুমারী আমের রা-এর কফিনটি এখনো ব্রিটিশ মিউজিয়ামে শান্তিতেই আছে।

প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শক আসে শুধু এই অভিশপ্ত মমির কফিনটি দেখতে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।