বুদ্ধিমত্তা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। আপনি তখনই বুদ্ধিমান যখন আপনার পাশের লোক বোকা !!
টাইটানিক মুভিতে দেখানো জ্যাক রোজের মিলনের সেই গাড়ীর কথা মনে আছে নিশ্চই! হ্যাঁ, টাইটানিক জাহাজের সেই বিখ্যাত গাড়ী আরো একটি কারণে কারণে বিখ্যাত। অথব বলতে পারেন তৎকালীন একটি গুঞ্জনের কারণে বিখ্যাত। টাইটানিক ছাড়ার আগে এমন একটি গুঞ্জন শোনা যায় যে, তৎকালীন ব্রিটিশ রাজতন্ত্র বিরোধী বিতর্কিত অনুসন্ধানী পত্রিকা পলমল গেজেট এর সম্পাদক উইলিয়াম থমাসের হাত ধরে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত মমি বোর্ডটি টাইটানিকে চড়ছে। আর ৫ফুট ৪ইঞ্চি লম্বা মমির বোর্ডটি লুকিয়ে নেয়ার জন্যই টাইটানিকে গাড়িটি তোলা হয়েছে।
যাইহোক, টাইটানিক ডুবির পরবর্তীতে সন্দেহকারীরা এব্যাপারে আর কোন সুরাহা করতে পারেনি গাড়ীর মালিকানা খুঁজে না না পাওয়ার কারণে। যদিও সন্দেহকারীরা ধারণা করেছিল গাড়ীটি উইলিয়াম কার্টার নামে একজন আমেরিকান আরোহীর নামে টাইটানিকে উঠেছিল কিন্তু টাইটানিক থেকে বেঁচে ফিরে আসা এই আমেরিকান ধনকুবের সে গাড়ীর মালিকানা অস্বীকার করেন। আবার এদিকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামও সরাসরি বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে প্রবেশের পর সেই অশুভ মমি বোর্ডটি আর ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বাইরে যায়নি। এবং অবশেষে ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মত বের করে সেটা অষ্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের জন্য নেয়া হয়। মমি বোর্ডটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ওয়েব সাইটে
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত সেই অশুভ মমি বোর্ড
কিন্তু সন্দেহকারী অনেকে আজো বিশ্বাস করে, শুধুমাত্র এই মমি বোর্ডের দখলের জন্য এবং এই মমি বোর্ড থেকে সবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার জন্য দখলদাররা টাইটানিককে ডুবিয়ে দিয়েছে এবং তার আগে নিরাপদের তারা মমি বোর্ডটি সরিয়ে নিয়েছে।
আর তার বদলে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রেখে গেছে সেই আসল মমি বোর্ডের একটি রেপ্লিকা। এখানে উল্লেখ্যা, প্রাচীন মিশরের প্রচুর মমি পাওয়া গেলেও অভিজাত বা রাজকীয় মমি বা মমি কফিন এসব অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য এবং বলা যায় কোন প্রত্নতাত্ত্বিক সৌভাগ্যবান হলেই শুধু একটি রাজকীয় সমাধির সন্ধান পেতে পারে।
আর এগুলো সব অলীক কল্পনাও হতে পারে। কোন এক আমেরিকান ধনকুবের চাইতেই পারে ইউরোপিয়ান একটি গাড়ী কিনে নিয়ে যাওয়ার। কেননা সে সময় আমেরিকাতেও ইউরোপিয়ান গাড়ী ছিল আভিজাত্যের প্রতীক।
যাইহোক, টাইটানিক ডুবির ১০ বছর পর ১৯২২ সনে প্রখ্যাত ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার খুঁজে পান বিখ্যাত ফারাও সম্রাট তুতেনখামেনের সমাধি। দুর্লভ এবং যুগান্তকারী আবিষ্কার তো বটেই। কিন্তু তারপরই ঘটতে থাকে একেকটি অদ্ভুত ঘটনা। খননকাজে বিনিয়োগকারী এবং সমগ্র প্রত্নসম্পদের মালিক লর্ড কারনাভানকে মিঃ কার্টার মিশরে আসতে নিষেধ করেন। কেননা সেখানে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।
মিঃ কার্টার লর্ড কারনাভানকে জানান, একটি গোখরা সাপ এসে তার ক্যানারী পাখিকে খেয়ে ফেলেছে। কারনাভান কার্টারের অনুরোধ উপেক্ষা করে মিশর পৌঁছান। ২৯ নভেম্বর মিঃ কার্টার, লর্ড কারনাভান সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে তুতেনখামেনের সমাধিক্ষেত্রটি প্রথমবারের মত খোলা হয়।
তুতেনখামেনের সমাধিতে লর্ড কারনাভান(বাঁয়ে) এবং হাওয়ার্ড কার্টার(ডানে)
তুতেনখামেনের মমি পরীক্ষা করছেন হাওয়ার্ড কার্টার
কিংস ভ্যালিতে তুতেনখামেনের সমাধির প্রবেশপথ
সমাধির মানচিত্র
তুতেনখামেনের সমাধির ভেতরের কিছু চিত্র এবং সমাধিতে প্রাপ্ত কিছু প্রত্নসম্পদের ছবি।
এখন দেখে নেয়া যাক কারা সেদিন উপস্থিত ছিল আর তারা কে কিভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন।
Lord Carnarvon - মশার কামড়ের ইনফেকশন থেকে মারা যান। মৃত্যু দিন- ৫ এপ্রিল ১৯২৩
George Jay Gould I - ১৬ই মে ১৯২৩এ ফ্রিঞ্চ নদীতে ডুবে মারা যান।
প্রিন্স আলী কামাল ফাহামি - স্ত্রীর হাতে গুলিতে নিহত হন ১০ই জুলাই ১৯২৩এ
Aubrey Herbert, MP - লর্ড কারনাভানের সৎ ভাই। ভুল চিকিৎসায় অন্ধ হয়ে এবং ব্লাড পয়জনিং এর শিকার হয় মারা যান সেপ্টেম্বর ১৯২৩এর ২৬ তারিখে।
Woolf Joel - দক্ষিণ আফ্রিকার ধনকুবের।
কার্ল ফ্রেডরিখ নামে এক ব্ল্যাকমেইলারের গুলিতে নিহত হন ১৩ই নভেম্বর ১৯২৩এ
Sir Archibald Douglas-Reid - প্রখ্যাত রেডিওলজিস্ট। এক রহস্যময় রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৫ই জানুয়ারী ১৯২৪এ
Sir Lee Stack - সুদানের গভর্নর জেনারেল। কায়রোতে আঁতাতায়ীর হাতে নিহত হন ১৯শে নভেম্বর ১৯২৪এ
বিভিন্ন সময়ে আরো অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। হাওয়ার্ড কার্টারের সহযোগী এসি ম্যাক, লর্ড কারনাভানের আরেক সৎ ভাই মারভিন হার্বার্ট, হাওয়ার্ড কার্টারের ব্যাক্তিগত দেহরক্ষী ক্যাপ্টেন রিচার্ড প্রমুখ।
সমাধি খোলার সময় উপস্থিতজনদের মধ্যে একমাত্র স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন হাওয়ার্ড কার্টার।
১৯৩৯ সনে ২রা মার্চ ৬৪ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে হাওয়ার্ড কার্টারের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
এখন কথা হচ্ছে, খননকাজে বিনিয়োগ করার অপরাধে লর্ড কারনাভানের মৃত্যু হলো কিন্তু খননকাজ যার নেতৃত্বে ঘটল সেই হাওয়ার্ড কার্টার রয়ে গেল বহাল তবিয়তে এমনকি তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের পরের বছর কার্টার আমেরিকাও ভ্রমণ করে আসলেন। যদিও তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের সময়কার অতিপ্রাকৃত ঘটনা সমূল মিঃ কার্টারকেই ঘিরে হয়েছে বা মিঃ কার্টার বর্ণনা করেছেন। যেমন, সাপের ক্যানারী পাখি খেয়ে ফেলা, তার ঘরে অতিপ্রাকৃত কান্নার শব্দ বা সমাধিতে পাওয়া শেয়ালের মত শেয়াল দেখা এর সব।
যুগে যুগে প্রত্নসম্পদ নিয়ে হানাহানির ইতিহাস কম নয়।
তারমধ্যে প্রাচীন মিশরের মত একটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় একজন রাজার সমাধি শুধু সমাধিই নয় বরং প্রচুর রত্নসম্পদের ভান্ডার। আর একই সাথে রয়েছে প্রাচীন মিশর নিয়ে কিছু মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি।
আবার এদিকে আধুনিক বিজ্ঞান বিভিন্ন প্রাচীন সমাধিতে কিছু দুর্লভ ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ের সন্ধান পেয়েছে যেগুলো প্রাণঘাতি হতে পারে। সুদীর্ঘ দীর্ঘ বছর ধরে বদ্ধ থাকা সমাধিতে ক্ষতিকর জীবাণু থাকা মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
পাদটীকাঃ এটা কোন সিরিয়াস পোষ্ট নয়।
সেভাবে এই পোষ্ট হাওয়ার্ড কার্টারকে ফারাও বাঁ মমির অভিশাপের সাথে সাথে একজন ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা এবং অবশ্যই পুর্ণাঙ্গ কোন ব্যাক্ষা নয়। যদি কেউ আগ্রহী হোন তাহলে পোষ্টে দেয়া বিভিন্ন লিংক ধরে আরো নতুন কিছু বের করতে পারেন বা কার্টারকে দায়মুক্তি দিতে পারেন। তবে খুঁজতে গিয়ে আপনিও যদি মমির অভিশাপে অভিশপ্ত হোন তাহলে একমাত্র বিরোধী পক্ষীয় *কুনোব্যাঙ* সেটার দায় গ্রহন করবে না তবে ফলাফল যাই হোক ট্রেজার হান্টার বা ইন্ডিয়ানা জোন্সের মত একটা এডভেঞ্চার কিন্তু শুধুমাত্র কিছু বই পড়ে আর ইন্টারনেট সার্ফিং এর মাধ্যমেই হতে পারে। যে অনুসন্ধানের নায়ক আপনিই এবং যার পাতায় পাতায় আগ্রহ আর রোমাঞ্চ, নতুন কিছু জানার আনন্দ সাথে বিভিন্ন তথ্যের যোগসুত্র মেলানোর উত্তোজনা
সব শেষে তুতেনখামেনের মমি এবং বিজ্ঞানী ও শিল্পীর সম্মিলিত কল্পনায় তুতেনখামেনের একটি ছবি।
** ছবি ও তথ্যসুত্র ইন্টারনেট।
**ওয়েব লিংক- উইকিপিডিয়া ও ব্রিটিশ মিউজিয়াম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।