আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন প্রযুক্তি ? আটকাও, বসাও টেক্স

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

অনেক পুরোনো একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। ১৯৮০ সালের ঘটনা। আমার মামাতো ভাই সৌদি আরব থাকতেন। ভালো আয় করতেন। সেই সময় এক মাসের ছুটি পেয়ে বিদেশ থেকে ফেরার সময় তিনি শখ করে একটি ভিসিআর কিনে এনেছিলেন।

তখন বাংলাদেশে ভিসিআর নিষিদ্ধ। যুব সমাজের চরিত্র নষ্ট হবে বলে সরকার এই যন্ত্রটি দেশে আনা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। আমার মামাতো ভাই মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে ভিসিআরটি বিমান বন্দর থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন। ঘুষ দিয়ে আনতে সেই যন্ত্রটির দাম তখন পড়ে গিয়েছিল প্রায় দেড় লাখ টাকা। দেশে আনতে পারলে সেই যন্ত্রটি তিনি বাসায় নিতে পারলেন না।

আমার মামা ভয়ে তার ঘরে এই যন্ত্র রাখলেন না। বাধ্য হয়ে আমার মামাতো ভাই ভিসিআরটি আমাদের বাসায় রাখলেন। আমরা গোপনে লুকিয়ে ক্যাসেট এনে দেখি। তবে কিছুদিনের মধ্যে এই অবস্থা কেটে গেল। হঠাৎ করে ভিসিআর এবং পরবর্তীতে ভিসিপি বৈধ হয়ে গেল।

এখন এই যন্ত্র কেউ কেনে না। অনেকের ঘরে বা টেকনিশিয়ানদের দোকানে এখন পুরোনো অব্যবহৃত ভিসিআর দেখতে পাওয়া যায়। আমরা এখন ডিভিডি ব্যবহার করি। যে কারণে এত কাহিনী - প্রথম অবস্থায় অবৈধ থাকলেও পরবর্তীতে বিদেশ থেকে একটা ভিসিআর আনলে ১ লক্ষ টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিতে হত। আর এখন এই ভিসিআর পরিত্যক্ত।

নতুন প্রজন্মের অনেকে হয়তো এই যন্ত্রটি চালিয়েও দেখেন নি। যাই হোক, মূল কথায় আসি। আমাদের দেশের সরকারগুলো সব সময় নতুন প্রযুক্তি আটকায়। আমাদের সরকার বা বেসরকারী খাত কারোই গবেষণায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা বা সামর্থ নাই। আমরা সাধারণত নতুন প্রযুক্তি কিনে আনি।

যে কোন নতুন প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে, তেমনি প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। কয়েকটা উদাহরণ দেই। আমাদের দেশে ইন্টারনেট দীর্ঘকাল নিষিদ্ধ ছিল। সরকার মনে করেছিল এর ফলে দেশের সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। ভিস্যাট বসাতে মোটা টাকার ট্যাক্স বসানো ছিল।

এখন সরকার এই খাতকে উৎসাহিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। মোবাইল ফোন বা ফোন এক সময় বিলাস দ্রব্য বলে ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এমনকি কারো ফোন থাকলে তাকে বাধ্যতামূলক ইনকাম টেক্স দিতে হবে বলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বিধানও জারি করেছিল। অথচ বর্তমানে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। বর্তমানেও ইন্টারনেট প্রযুক্তি এলেও নতুন প্রযুক্তিকে ঠেকানোর প্রয়াস থেমে নেই।

এখনও বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে টাকা গ্রহণ করা যায় না। সেই পুরোনো প্রযুক্তিভীতি - দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাবে। আমাদের সরকারগুলো সব সময় নতুন প্রযুক্তি ঠেকায়। আরও অনেক উদাহরণ আছে আমাদের আশেপাশেই। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।

অথচ বর্তমান সেন্সর বোর্ড ডিজিটাল সিনেমা গ্রহণ করে না। ৩৫ মিলিমিটারে শুট না করলে নাকি সেটা সিনেমাই না। হলিউড বা বলিউড যেখানে ডিজিটাল সিনেমা বানাচ্ছে, সেখানে আমাদের সেন্সর বোর্ড কেবল প্রযুক্তিভীতির জন্য এই গো ধরে বসে আছে। মোট কথা হল, আমরা প্রযুক্তি গ্রহণ করতে করতে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো সেই প্রযুক্তিভিত্তিক সকল ব্যবসা বাণিজ্য ও সুযোগ সুবিধা করায়ত্ত করে ফেলে। যেমন ইন্টারনেটে মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন বা কলসেন্টার ব্যবসা করে ভারত ইতিমধ্যেই বিলিয়ন ডলার কামিয়ে নিয়েছে।

আমাদের সরকারের এই প্রযুক্তি ভীতি দূর করা দরকার। পলিসি উল্টে দেয়া দরকার। যে কোন নতুন প্রযুক্তি স্বাগত জানানো দরকার। টেক্স ফ্রি করে দেয়া দরকার। এমনকি যে প্রযুক্তি এখনও দেশে আসেনি, আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেই প্রযুক্তিকে আগাম টেক্স ফ্রি ঘোষণা করা যেতে পারে।

এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। সেই নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠবে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। নচেৎ কেবল ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগান দিয়ে কোন লাভ হবে না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.