শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
শিহান ছোট বেলা থেকেই ডানপিটে। চাপে পড়ে স্কুলে যেতে হয়েছে মাঝে মাঝে, কিন্তু পড়াশোনা ভালো লাগেনি কোনো কালে। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াত, মার্বেল ডাংগুলি খেলেই পার করে দিত সারা দিন। পড়ার কথা উঠলেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আসত।
তারপরও অনেকে বলত, স্কুল পালালেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না হে! তাদের দিকে করুণার হাসি হাসত শিহান। বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তার খুব ঝোঁক, কিন্তু স্কুলে পঠিত বিজ্ঞান না। স্কুলেই যদি বিজ্ঞান হত, তাহলে কি নিউটন আপেল গাছের নীচে বসে থাকতেন আর এডিসন গোলাবাড়িতে ডিমে তা দিতেন? তো শিহানকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত। কিন্তু সেই শিহানই যে এত যুগ অন্তকারী আবিষ্কার করে ফেলবে আর সবার মুখ স্তব্ধ করে দিবে, কে জানত! নীচে শিহানের ৩টি মহা আবিষ্কার তুলে ধরা হলো:
১। একদিন শিহান তাদের পুকুরে মাছের পোনার ঝাঁকের দিকে তাকিয়ে ছিল।
এমন সময় দেখল, তার খালাতো বোন শাহানা পুকুর পাড় ধরে হেঁটে বাড়ির ভেতর যাচ্ছে। শাহানা কিছু দিন আগে চুলে বব কাট দিয়েছে। খোলা চুলে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল তাকে, শিহান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। এরপর শাহানা যতবারই বাড়িতে আসত, পুকুর পাড়ে পোনাকে খাবার দিতে দিতে তার চুলের দিকে তাকিয়ে থাকত শিহান। কয়েক মাস পর শিহান তার প্রথম মহা আবিষ্কারটি করল: মেয়েদের মাথার চুলের সাইজ বৃদ্ধি পুকুরে তেলাপিয়া মাছের সাইজ বৃদ্ধির সমানুপাতিক (directly proportional), একটা বাড়লে আরেকটা বাড়ে।
গাণিতিকভাবে, h=k*t, যেখানে
h = মেয়েদের চুলের সাইজ
t = তেলাপিয়া মাছের সাইজ
k = সমানুপাতিক ধ্রুবক।
২। আরেক দিন গভীর রাতে বাইরে বের হয়ে শিহান দেখল গাঁয়ের পাশের নদীতে সাদা ধোঁয়া উঠছে। ভূত ভেবে ভয় পেয়ে দৌড়ে ঘরে চলে আসল সে। দিনের আলোতে মনে হল তার মত বিজ্ঞানীর ভূতে ভয় পাওয়া মানায় না।
তারপর বেশ অনেকদিন এ নিয়ে ভাবল সে, বিষয়টা কী!
হঠাৎ একদিন নিউটনের আপেল পড়ার মত অবস্থা হল তার। খুব চমকে গেল সে। এও কি সম্ভব, এও কি হতে পারে! তারপরও অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষার করল সে। সন্তুষ্ট হল তার দ্বিতীয় আবিষ্কারের ব্যাপারে। আমি বিজ্ঞান ভালো বুঝি না দেখে শিহান প্রযুক্তিগত জটিলতা বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের ভাষায় (layperson language) আমাকে বুঝাল।
ঘটনা হল, আমরা জানি পানি (H2O) হাইড্রোজেন (H2) ও অক্সিজেন (O2) দিয়ে তৈরি। হাইড্রোজেন দহন (combustion) প্রক্রিয়ায় জ্বলে; অক্সিজেন নিজে জ্বলেনা কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। সুতরাং পানিকে সহজভাবে ভেঙে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনে ভাগ করতে পারলে, তারপর হাইড্রোজেনকে সহজে পোড়াতে পারলে আর দেখতে হবে না, সারা পৃথিবীর জ্বালানী সমস্যা মুহূর্তে মিটে যাবে। তো শিহান একটা জংলী লতা থেকে এমন একটা রাসায়নিক পদার্থ আবিষ্কার করেছে যা পানিতে দিলে পানি সাথে সাথে ভেঙে যাবে। পদার্থটির নাকি কোন পরিবর্তন হবে না কারণ এর নাম প্রভাবক (catalyst)।
আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, শিহান আমাকে বলল, হাইড্রোজেনকে অক্সিজেনকে দিয়ে পোড়ালে আবার পানিই পাওয়া যায়। তার মানে শিহানের আবিষ্কারটা নবায়নযোগ্য (renewable)। কিছু পদ্ধতিগত অপচয় (system loss) বাদ দিলে ৪০ কেজি পানি দিয়েই নাকি একটি জাহাজ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় বেশ কয়েকবার যাতায়ত করতে পারবে। শিহান অবশ্য আমাকে পদার্থটি দেখায় নাই, কিছুটা আমি বুঝব না দেখে, আর কিছুটা গোপনীয়তার স্বার্থে।
সবশেষে শিহান বলল সমরাস্ত্র (armament) হিসেবেও তার আবিষ্কার যুগান্তকারী, বিশেষ করে জলপথের যুদ্ধে (naval warfare)।
যেমন বাংলাদেশে যদি জলপথে বহিঃশত্রুর আগমন ঘটে, তাহলে পদার্থটি দূর হতে পানিতে নিক্ষেপ করে সেখানে কোনো স্নাইপার একটি গুলি করলেই হবে, বিরামহীনভাবে আগুন জ্বলতে থাকবে।
৩। একদিন শিহানের বড় ভাই ও ভাবি খুব ঝগড়া করছিল। মুরুব্বিরা ভাইকে বলল, রক্ত গরম করিস না। সাথে সাথে শিহান পেয়ে গেল ধারণা।
ঝগড়ার সময় মানুষের যে রক্ত গরম হয়ে যায়, এই তাপ শক্তিকে (heat energy) কোন মতে যদি তড়িৎ শক্তিতে (electrical) রূপান্তরিত (transform) করা যায়! এর জন্য শিহান ইতোমধ্যে প্রাথমিক একটা বর্তনী (electrical circuit) তৈরি করেছে যার মাধ্যমে সে ২০ ওয়াটের (20 watt) দু'টি সাশ্রয়ী বাতি জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে। এখন চেষ্টা করছে এর কার্যক্ষমতা (efficiency) বাড়ানোর। ইসস, ভাবুন তো একবার, ঢাকায় লোডশেডিং (load-shedding), কিন্তু আর ভয় নেই, বাসায় একটু ঝগড়া করে নেবেন মাত্র।
তথ্যসূত্র: শিহানের সাক্ষাতকার। লেখক যেহেতু বিজ্ঞান ভালো বুঝেন না, অতএব এইসব আবিষ্কারসংক্রান্ত তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতার জন্য লেখক দায়ী থাকবেন না।
এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আগ্রহীদের সরাসরি শিহানের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।