মুজিব নামের অর্থ
দিলু নাসের
বাংলা ও বাঙালীর কাছে
মুজিব নামের অর্থ আছে।
তাহার কাছে অনেক কিছু যুক্ত
মুজিব ছাড়া বাংলানামের
দেশ না হতো মুক্ত।
ফরিদপুরের শান্ত শ্যামল
টুঙ্গিপাড়া গ্রামে
একটি ছেলের জন্ম হলো
শেখ মুজিবুর নামে।
উনিশ'শ বিশখ্রিষ্টাব্দে
১৭ই মার্চ রাতে
শেখ মুজিবুর জন্ম নিলেন
প্রদীপ নিয়ে হাতে।
সেই প্রদীপ রাঙিয়ে দিলেন
বাংলা মায়ের মুখ
তার সুবাদে ঘুচলো দেশে
শত বছরের দুখ।
জন্ম থেকে মৃত্যুবদি
সেই মানুষের চেষ্টায়
স্বাধীনতার ফুল ফুটেছে
বাংলা নামের দেশটায়
বাংলাদেশের পাখপাখালি
নদীর কথকতা
সবাই জানে জাতির জনক
শেখ মুজিবের কথা
ছেলেবেলার মুজিব যেমন
দুরন্ত চঞ্চল
তেমনি ছিলো শক্তি সাহস
চিত্তভরা বল।
তাই জীবনের শুরেতেই
স্বর্ণালী শৈশবে
বুঝলো সবাই এই ছেলেটা
ব্যাতিক্রমী হবে।
তখন থেকে তার মনেতে
মানবতার টান
নির্যাতিত মানুষ দেখে
কাঁদতো সদা প্রাণ।
বয়স যখন আটারো তার
ছিপছিপে এক ছেলে
প্রতিবাদের অপরাধে
ঢুকতে হলো জেলে।
এটাই ছিলো তার জীবনে
প্রথম কারাবাস
তখন থেকে দেশের লাগি
উথলা নিঃশ্বাস।
দিনে দিনে বয়স তাহার
বাড়তে থাকে যতো
মুজিব নিলেন আরো বেশী
দেশপ্রেমেতে ব্রত।
তখন থেকে ব্রিটিশ শাসন
প্রতিবাদের ঝড়
এসব দেখে উত্তেজিত
হলেন মুজিবর।
ভীনদেশীদের কবল থেকে
করতে স্বদেশ মুক্ত
ধীরে ধীরে হলেন তিনি
রাজনীতিতে যুক্ত।
বড় বড় রাজনীতিবিদ
ছিলেন যারা বঙ্গে
শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠতা
বাড়লো তাদের সঙ্গে।
সুভাষবসু শেরেবাংলা
সোহরাওয়ার্দির সাথে
শেখ মুজিবের লোনাদেনা
বাড়লো দিনে রাতে।
তাদের থেকে রাজনীতির
শিক্ষা নিয়ে শেষে
মুজিবে দেন জ্বালাময়ি
ভাষণ সমাবেশে।
রাজনীতি আর পড়ালেখার
সঙ্গে মুজিবরে
তখন থেকে সারাটা দেশ
বেড়ান ঘুরে ঘুরে।
দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়ে
তার সুনাম ও খ্যাতি
জনগণের সঙ্গে বাড়ে
হদ্যতা ও প্রীতি।
সাতচল্লিশ সালে ব্রিটিশ
আসলো ভারত ছেড়ে
কিন্ত তাহার কর্তব্য
অনেক গেল বেড়ে
ব্রিটিশ গেলো সত্যি ঠিকই
ভারত হলো ধ্বংস
বাংলা নামের দেশটা হলো
পাকিস্তানের অংশ।
পাকিস্তানের নেতারা সব
হাজারো কৌশলে
করতে এলো বাঙালিদের
পিষ্ঠ যাতাকলে।
এসব দেখে শেখ মুজিবুর
আক্রোশ নিয়ে বুকে
বাঙালীর হয়ে পশ্চিমাদের
সামনে দাঁড়ান রুখে।
লক্ষ হাজার বাঙালি জাতির
মানবিক অধিকার
আদায় করতে শেখ মুজিবুর
জেলে যান বারবার।
পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশক
দীর্ঘ সময় ধরে
দাবীর মিছিলে মুজিব ঘুরেন
পথে আর প্রান্তরে।
শহর নগর গঞ্জগ্রামে
মুজিবের গর্জনে
কাঁপন ধরায় পশ্চিমাদের
ক্ষমতার আসনে।
ভীতু হয়ে তারা পথঘাটে শত
মানুষের প্রাণ কাড়ে
সবুজ শ্যমল পরিবেশ কাঁপে
অশ্বের ঝংকারে।
তবু বাঙালি পায় নাতো ভয়
হয়নাতো কেউ ভীত
বরং দেশটা দিনে দিনে হয়
প্রতিবাদে মুখরিত।
পাকিস্তানিরা দেখল যখন
হয়না বুলেটে কিছু
তখন তাহারা কৌশলে নিলো
মুজিবের পিছু পিছু।
মামলার পর মামলা সাজিয়ে
মুজিবের নামে তারা
পাল্টাতে চায় গণদাবী আর
আন্দোলনের ধারা।
কিন্ত এসব তচ্ছ করিয়া
মুজিবুর রহমান
বজ্র কন্ঠে গাইতে থাকেন
মুক্তির জয়গান।
ছেষট্টিতে শেখ মুজিবের
ছয়টি দফার ডাকে
দেশটা জুড়ে জাগলো মানুষ
লক্ষ লাখে লাখে।
ছয়টি দফা মানে হলো
স্বাধীনতার ডাক
দিকে দিকে উঠল দাবী
আইয়ুব নিপাত যাক।
এসব দেখে আইয়ুবশাহীর
বক্ষ দুরুদুরু
করলো আবার নতুন করে
চক্রান্ত শুরু।
অবশেষে তারা আটষট্টিতে
করে নয়া এক ফন্দি
আগরতলা ষড়যন্ত্রে
মুজিবকে করে বন্দি।
মুজিবের নামে পশ্চিমাদের
ফরমান হয় জারি
দেশ বিদেশে রটায় তিনি
ষড়যন্ত্রকারি।
এসব শুনে দেশের মানুষ
সবাই কলো ক্রুদ্ধ
কৃষাণ মজুর রাজপথে এলো
হাতুরি শাবাল শুদ্ধ।
শ্রমজীবি আর ছাত্র জনতা
করলো সকলে যুক্তি
দরকার হলো প্রাণের বদলে
চাই মুজিবের মুক্তি।
"জেলের তালা ভাঙবো
শেখ মুজিবকে আনবো"
বজ্র কঠিন শ্লোগান এবং
লাখ মানুষের জোয়ারে
অবশেষে আনে চরম আঘাত
পশ্চিমাদের দোয়ারে।
জনতার রোষে শেখ মুজিবুর
জেল থেকে পেয়ে ছাড়া
কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়ে
হলেন আত্মহারা। ।
অনেক লোকের জীবন এবং
অনেক রক্ত দামে
মুজিব তখন ভূষিত হলেন
বঙ্গবন্ধু নামে।
এই ভালোবাসা করলো তাহাকে
আরো বেশী নির্ভয়
মুজিব বুঝতে পারলেন জয়
আর বেশী দুর নয়।
উনসত্তর শুরু হয় দেশে
বিশাল আন্দোলন
এতে যোগ দেয় সারা বাঙলার
আপাময় জনগণ
তখন প্রতিটি মানুষের কাছে
মুজিব চোখের মনি
আকাশে বাতাসে কম্পিত হয়
মুজিব নামের ধ্বনি।
মজিবের নাম জাগলো সারাটা দেশ
সকলে চায় এ পরিণতির শেষ।
মানুষের চাপে পড়ে শাসকেরা শেষে
আবার নিবাচন দিলো যে শেষে।
সত্তর সালের এই নির্বাচনে
মুজিব হলেন জয়ী প্রতি আসনে।
তবুঢ শাসকেরা ছাড়তে চায় না মতা
বঙ্গবন্ধু মনেন না কোন সমতা।
তখন তাহার একটি শুধুই দাবী।
এই দেশ ছেড়ে বল তোরা কবে যাবি?
দিকে দিকে দাবী উঠলো স্বাধীনতার
গড়ে তোলা হলো প্রতিরোধ দুর্বার।
একাত্তরের সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে
বঙ্গবন্ধু মন্ত্র দিলেন লক্ষ কোটি প্রাণে।
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
মুজিবের ডাকে মানুষেরা সব
ভয় দ্বিধা যায় ভুলে
ঘরে ঘরে সবে দূর্গ গড়ে তোলে।
পচিঁশে মার্চ রাত্রি গভীর ঘুমে অচেতন
এমন সময় চারিদিকে উঠে বুলেটর গর্জন
পাকিস্তানের দানবেরা হেসে হেসে
লাগলো আগুন সারাটা বাংলাদেশে।
বাঙালি জাতিকে করে দিতে নিঃশেষ
মুজিবকে নিয়ে যায় যে নিরুদ্দেশ।
তবু মুজিবের সুকঠিন নির্দেশে
যুদ্ধে নামলো বাঙালিরা হেসে হেসে।
যুদ্ধের মাঠে মুজিবের গর্জনে
দিয়েছে প্রেরনা প্রতি যোদ্ধার মনে।
দেশটা যখন কাঁপছে দারুন ত্রাসে
মুজিব তখন পশ্চিমা কারাবাসে।
পাকিস্তানের দানবেরা মিলে তার
শরীরে করলো অনেক অত্যাচার।
দেখালো তাহাকে প্রাণে মারবার ভয়
তবুও মুজিব মানেননি পরাজয়।
যুদ্ধে যুদ্ধে কেটে গেল নয় মাস
শোকে ভারী হলো স্বদেশের নিঃশ্বাস।
অবশেষে এলো নতুন সূর্যদয়
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হইল
জয় বাংলার জয়
জয় মুজিবুর জয়।
নীড়ের পাখিরা ফিরে এলো সব ঘরে
মুজিব তখনো পশ্চিমা করাগারে।
বাহাত্তরের দশই জানুয়ারী শেষে
অশ্রু নয়নে জনক এলেন দেশে
তাকে কাছে পেয়ে সাত কোটি সন্তান
কন্ঠ মিলিয়ে গায় মুক্তির গান।
অবাক নয়নে বিশ্বের সারা দেশ
দেখলো মুজিব এবং বাংলাদেশ।
বাঙালি বল্ল এই মুজিবের জন্য
বিশ্বের কাছে আমরা হলাম ধন্য।
যুদ্ধের পর দেশ ছিল এলোমেলো
তবুও মানুষ স্বাধীনতা ফিরে পেলো।
জাতির জনক হয়ে নিজ উদ্যোগী
দেশটা গড়তে হলেন যে মনোযোগী।
বাহাত্তর আর তেহাত্তরের এরপর
দুর্যোগ নিয়ে এলো যে চুয়াত্তর
দেশে দেখা দিল দুর্ভিক্ষ ও খরা
বঙ্গবন্ধু হলেন দিশেহারা।
সেই সুযোগকে লাগালো তখন কাজে
এদেশের কিছু লোক ছিলা যারা বাজে
যারা ছিলো পশ্চিমাদের ইস্টি
বংলায় আবার পড়লো তাদের দৃষ্টি।
পঁচাত্তর ঘন কালো এক রাতে
কেঁপে উঠে দেশ বুলেপ বৃষ্টিপাতে।
সে বুলেট কাড়ে জনকের তাজা প্রাণ
চিরতরে থেমে গেলো শান্তির গান।
মুশতাক নামে একেটা মীরজাফর
স্তব্ধ কররেঅ জাতির কন্ঠস্বর।
করতে কুলষ মুজিবের এই দেশটা
করেছে তাহারা অনেক রকম চেষ্টা।
কিন্তু পারেনি পারবে না কোনদিন
মানুষের মনে মুজিব যে অমলিন।
মুজিব মানেই বাংলা বাঙালি জাতি
আঁধারের মাজে মুজিব আলোকবাতি।
আবার জ্বলব, জ্বালাব আবর্জনা
যে দেশে তোমার জন্ম হয়েছিল
হাসতে কাঁদতে সুখে আর বেদনাতে
যে দেশের মাটি গায়ে ও গতরে মেখে
জ্বলে উঠেছিলো বিপ্লবী চেতনাতে।
ভালোবেসে তুমি দিয়েছিলে যার নাম
সবুজ শ্যামল সোনার বাংলাদেশ
সে দেশে তোমার স্মৃতিতে পড়েছে ভাঁজ
জ্বলে পুড়ে আজ অমলিন দৈন্য বেশ।
যে নদীর জলে যে গাছের তলে তুমি
একদিন নিতে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস
তুমি বিনে সেই প্রান্তর প্রাণহীন
প্রতিদিন গ্রাস করে যে সর্বনাশ।
তুমি নেই তাই তোমার স্বদেশ জুড়ে
শকুনিরা দেয় ঝাপটা যে বারবার
আমরা ভীত কেউ খুব উদাসীন
তোমার মতন নেই কারো হুংকার।
নপুংশকের বীর্যে এই মাটি
একদিন যারা করেছিল কুলষিত
আমরা সকলে হয়েছি বীর্যহীন
তাই আমরা ফের দারুণ উল্লাসিত।
তোমার স্বপ্ন হয়ে গেছে লুন্ঠিত
নিজের ঘরেতে ছলে আর কৌশলে
সাপের ঝাঁপি নিজেরা দিয়েছি খুলে
স্বাধীনতা তাই শকুনের পদতলে।
তুমি একদিন যে আগুন জ্বেলেছিলে
ণক্ষ হাজার মানুষের মন জুড়ে
এক ঝাপটায় সে আগুন নিভে গেল
বুঝলো না কেউ কী করে পাঁচ্ত্তরে
পঁচাত্তরের কালো রাত্রির পর
দুর্যোগ এসে দিল এই দেশে উঁকি
সেই থেকে এই সুপ্রাচীন জনপদ
প্রতিদিন হয় ধ্বংসের মুখোমুখি।
এই ধ্বংসের দায়ভাগে আমরা
কমবেশি করে সকলে অংশীদার
যে করেই হোক আনতেই হবে দিন
তোমার সকল খণ শোধ করবার।
তোমার ছবি তোমার কন্ঠ আজ
নাড়া দিয়ে যায় তাড়া দিয়ে যায় মনে
আবার জ্বলব জ্বালাব আবর্জনা
তোমার তপ্ত রক্তের আকর্ষণে।
প্রয়োজনে প্রাণ দিতে হয় যদি দেব
মরতে যখন শিখেছি আবার মরব
তোমার ছবি তোমার পতাকা হাতে
আবার না হয় প্রাণপণে সবে লড়ব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।