আ রা ফা ত হো সা ই ন
স্যুট-টাই পরিহিত হালকা গড়নে টুপি মাথায় শান্ত সৌম্য চেহারায় যাকে দেখা যায়, যার ক্লান্তিহীন যুক্তিশীল বক্তৃতা শোনার জন্য পৃথিবীর কৌতূহলী মানুষ টিভি সেটের সামনে বসে থাকে, যার তাত্ত্বিক বক্তব্যের কারণে পুরো একটা টেলিভিশন চ্যানেল পরিচিত হয়ে উঠেছে বিশ্বে, অকুণ্ঠচিত্তে যিনি কোরআন-হাদিসের আলোকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বারবার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন ইসলাম সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না, হ্যাঁ, তিনি ডা. জাকির আবদুল করিম নাইক ওরফে ডা. জাকির নাইক।
খোলা মাঠ, অডিটরিয়াম কিংবা যেখানেই তিনি বক্তৃতা দেন সেটা কোন না কোন টিভি অনুষ্ঠান হয়ে যায়, মাত্র ৪৩ বছর বয়সী ডা. জাকির নাইক তাত্ত্বিক একটা বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে টিভি ব্যক্তিত্ব হিসেবে বর্তমানে গ্লামারনির্ভর মিডিয়াতে অনবদ্য স্থান দখল করে আছেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ইসলামী চিন্তাবিদ তার অর্জিত শিক্ষা ও মেধার সমন্বয়ে ইসলামের অপব্যাখ্যাকারীদের ধারণাকে বারবার ভুল প্রমাণ করে চলেছেন। চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ডা. জাকির নাইক ১৯৬৫ সালের ১৮ অক্টোবর ভারতের মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন। মুম্বাই সেন্ট পিটার্স হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক, কিসিচাঁদ চেলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় শেষ করেন।
ভর্তি হন টপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি সম্পন্ন করেন। ডাক্তারি বিদ্যায় ডিগ্রিপ্রাপ্ত ডা. জাকির নাইক মুম্বাই ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট, এছাড়া আইআরএফ এডুকেশনাল ট্রাস্ট ও ইসলামিক ডাইমেনশন্স মুম্বাইয়ের প্রেসিডেন্টও তিনি। ধর্মীয় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিপ্রাপ্ত না হয়েও ধর্ম সম্পর্কে অর্জন করেছেন বিশাল জ্ঞান। অত্যন্ত বিজ্ঞ এই ধর্ম তত্ত্ববিধ ও দার্শনিক যেকারণে আজ বিশ্বব্যাপী আলোচিত তা হচ্ছে জটিল ইসলামী তত্ত্বের সুখ্যাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং জনসভায় সাবলীলভাবে দর্শকদের প্রশ্নের খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রামাণিক দলিলসহ ধর্মীয় গ্রন্থের আলোকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারার কারণে।
এ পর্যন্ত ডা. জাকির নাইক অন্য ধর্মাবলম্বী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও অনেক সফল আলোচনা ও বিতর্ক করেছেন। তার বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ইসলাম ধর্মের আলোকিত দিক যা অন্য ধর্মাবলম্বীরা জানে না। আর এই না জানা বা না বোঝার কারণে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মনের উৎসুক প্রশ্নের সব উত্তর সাবলীলভাবে দিতে পারদর্শী জাকির নাইক। তিনি ভিন্ন মতাবলম্বীদের কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর দিতেই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন। ডা. জাকির মনে করেন, অনেক অমুসলিম আছে যারা ইসলাম সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা পোষণ করে আছেন, যারা ইসলামের সুন্দর ও শান্তির রূপটি সম্পর্কে অবগত নন।
মূলত খুবই নগণ্য প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে তাদের মনে, এ স্বল্পসংখ্যক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলেই তাদের মনের ভ্রান্তি কেটে যাবে আশা করি। বিভিন্ন সভা সেমিনারে উপস্থিত দর্শকরা যখন ইসলামী জঙ্গিদের উদাহরণ টেনে ইসলাম ধর্মকে কৌশলে পরোক্ষভাবে হেয় করেন তখন তিনি বেশ ধীরে-সুস্থে কোরআন হাদিসের আলোকে জিহাদের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা তুলে ধরেন এবং যে কোন ধর্মে ব্যক্তির অপরাধ ধর্মের উপর না দেয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন_ একজন খ্রিস্টান হয়ে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছিল হিটলার। তারমানে কি এই যে খ্রিস্টান ধর্ম এর জন্য দায়ী? ডা. জাকির নাইক ধমর্ীয় আলোচনা বিতর্কে প্রায়ই বলে থাকেন_ 'নিজেকে জানার, সত্যকে উপলব্ধি করার সহজতম উপায় হচ্ছে ইসলাম, এ সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন থাকলে আমি উত্তর দেয়ার জন্য অধীর হয়ে বসে থাকি। আমি তাদের বলি আপনারা প্লিজ বলুন ইসলামের কোন্ জিনিসটি আপনাদের ভুল বা মিথ্যা মনে হয়।
আসুন সব ধর্ম নিয়ে আলোচনা করি, বুঝি, সত্য-মিথ্যা নিজেরাই নির্ণয় করি। ডা. জাকির নাইক অমুসলিমদের প্রশ্ন সম্পর্কে তার বক্তব্যে বলেন_ যে কোন একজন অমুসলিমকে ইসলামের ত্রুটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি সর্বোচ্চ ৬/৭টি প্রশ্ন করতে পারেন যা তার ইসলাম সম্পর্কে সীমিত জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। সর্বোচ্চ ২০টি সাধারণ প্রশ্ন তাদের মনে থাকতে পারে যার সমাধান কোরআন হাদিসের মাধ্যমেই দেয়া সম্ভব। ডা. জাকির নাইক মনে করেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা ২০টি সাধারণ প্রশ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যা তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছেন। এই বিশটি প্রশ্নের যুক্তিযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য উত্তর কোরআন হাদিসের আলোকে দেয়া শতভাগ সম্ভব এবং বেশিরভাগই তাতে সন্তুষ্ট হতে বাধ্য।
একজন অমুসলিম যদি সেটা সহজে বিশ্বাস করতে পারেন সেটা তার সাফল্য। আর বিশটি প্রশ্নের উত্তরেও যিনি সন্তুষ্ট নন তবে তাকে ইসলাম সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা ঝেড়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে।
ডা. জাকির নাইক শুধু ইসলামী চিন্তাবিদই নন, তিনি সবগুলো ধর্মের একনিষ্ঠ গবেষক তথা ধর্মতত্ত্ববিদ, কোরআন, বাইবেল, গীতা, তাওরাতসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে রয়েছে যার অগাধ পাণ্ডিত্য। শুধু ধর্মগ্রন্থ নয় বিজ্ঞানের সবক'টি ক্ষেত্রেই রয়েছে তার প্রচুর পড়ালেখা ও জানা শোনা, ছোটকাল থেকেই জাকির নাইক বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও বিজ্ঞানবইয়ের তুখোড় পাঠক ছিলেন। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি ব্যয় করতেন লাইব্রেরি আর পড়ার টেবিলে।
হিন্দু প্রধান ভারতে জন্ম নেয়ার কারণে বহু ধর্মের লোকের পাশাপাশি থাকার কারণেও তিনি ইসলাম ধর্ম ও পাশাপাশি অন্যধর্ম নিয়ে চিন্তা করার একটা উপযুক্ত প্লাটফর্ম পেয়েছিলেন। বর্তমানে তথাকথিত আলেমদের সঙ্গে জাকির নাইকের পার্থক্য এখানেই যে, বর্তমান সময়ের আলেম নামধারীরা শুধু নিজ ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন আর জাকির নাইক সব ধর্ম সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সবগুলো শাখায় রয়েছে তার অধ্যয়ন ও জানাশোনা। ফলে যে কারও সঙ্গে সাবলীলভাবে বিতর্ক-আলোচনায় অংশ নেন, টেলিভিশনের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শকদের বসিয়ে রাখার ক্ষমতা রয়েছে তার। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার একশ' ত্রিশটির বেশি দেশে সম্প্রচারিত পিস টিভি তার কারণেই অনেকের কাছে পরিচিত।
মাত্র ক'বছরের মধ্যে তিনি বারো শ'র বেশি বড় জনসভায় সারাবিশ্বে ইসলামের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। ইসলাম সম্পর্কে ভিন্ন মতাবলম্বীদের অনেক ভুল ধারণা কাটিয়েছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হল তিনি অমুসলিমদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এমনকি ভিন্ন ধর্মের পণ্ডিতদেরও। এপর্যন্ত তিনি আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, সাউথ আফ্রিকা, মরিশাস, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং, অস্ট্রেলিয়া সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়াসহ অসংখ্য দেশে ইসলামী জনসভা ও বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। তার লেখা 'ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব' বিষয়ের বইও বর্তমানে অন্যতম সর্বাধিক প্রচারিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইসলাম বিষয়ক যে কোন কৌতূহল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বইটিতে।
ডাক্তারি বিদ্যায় ডিগ্রিপ্রাপ্ত ডা. জাকির নাইক শুধু বিশ্বে একজন প্রথম শ্রেণীর বক্তা হিসেবেই পরিচিত নন, তিনি একজন ধর্মতত্ত্ববিধ, গবেষক, দার্শনিক, লেখক এবং জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ধমর্ীয় বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেও বর্তমানে গ্লামারনির্ভর মিডিয়াতে মেধা ও যোগ্যতার কারণে টিভি তারকা হওয়া যায় তা-ই দেখিয়েছেন ডা. জাকির নাইক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।