ডা: শাহরিয়ারের পোষ্ট
ক্যান্সার বর্তমান সময়ের সবচাইতে ভয়াবহ শব্দ। বিশ্বের প্রতি তিনজন রোগীর ভেতর একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে সনাক্ত হয়। এটি একটি ভয়াবহ পরিসংখ্যান। আশার কথা এই যে ক্যান্সার চিকিৎসায় যথেষ্ঠ উন্নতি ঘটেছে। ক্যান্সার হলে নো এনসার, এই অবস্থা পাল্টে গেছে।
ক্যান্সার কি - আমাদের দেহ যে অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরী সেই কোষগুলির অনিয়মিত এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হচ্ছে ক্যান্সার।
সাধারন ক্যান্সারগুলো কি কি ?
মুত্রথলির ক্যান্সার ( Bladder cancer ) - মূলত মূত্রথলির ভেতরের আবরন যে কোষ কলা দিয়ে তৈরী সেই কোষে ক্যান্সার হয়।
প্রশ্রাবের সাথে রক্তপাত, ব্যাথা, প্রশ্রাব কমে যাওয়া ইত্যাদি মুত্রথলির ক্যান্সারের লক্ষন।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে মূত্রথলির আপারেশন ( ট্রান্সইউরেথ্রাল রিসেকশন) করা হয়। রোগ আরো বেশী পর্যায়ে থাকলে মূত্রথলি কেটে ফেলা হয়।
প্রয়োজনে রেডিও বা কিমোথেরাপি দেয়া হয়।
পরিপাক তন্ত্রের ক্যান্সার ( Bowel Cancer ) - প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সার ধরা পড়ে না তাই এর লক্ষনগুলো মনে রাখা জরুরী এবং লক্ষন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরার্মশ গ্রহন করা উচিত।
মলদ্বার দিয়ে রক্তপড়া, পেট ভার থাকা, মলত্যাগের পরও বেগ থাকা ইত্যাদি সাধারন লক্ষনগুলি যদি দীর্ঘদিন ( ১ মাসের বেশী) তবে চিকিৎসকের পরার্মশ গ্রহন করুন।
আতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এবং কম আশযুক্ত খাবার পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভবনা বাড়ায়। তাই কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহন করুন এবং আঁশযুক্ত খাবার খান।
আপারেশনই পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারের চিকিৎসা।
স্তন ক্যান্সার - মেয়েদের কমন ক্যান্সার যদিও এটি হঠাৎ ছেলেদের হতে পারে।
হঠাৎ স্তনের আকৃতি পরিবর্তন, স্তনের ত্বকে ভাজ বা কুচকানো, স্তনে গোটা বা চাকা, স্তনবৃন্ত থেকে ক্ষরন এবং স্তনে ব্যাথা স্তন ক্যানাসারের লক্ষন।
জেনিটিক কারন, হরমোন গ্রহন এবং দেরীতে সন্তান গ্রহন স্তন ক্যানাসারের ঝুকি বাড়ায়। প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়লে পুরো স্তন কেটে না ফেললেও রোগমুক্তি ঘটে।
কোন কারনে পুরো কেটে ফেললেও কসমেটিক আপারেশনের মাধ্যমে স্তন পুনরায় গঠন করা যায়।
লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা - এটি রক্ত কোষ এবং রক্তের লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সার। রক্তস্বল্পতা, ইনফেক্সন, ওজন কমে যাওয়া, সহজেই রক্তপাত, রাত্রে জ্বর, গ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়া এ ক্যান্সারের লক্ষন।
প্রাথমিক ভাবে কিমোথেরাপি এবং বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এই ক্যান্সারের চিকিৎসা। আমাদের প্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন এই ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন এখন সুস্থ আছেন।
ফুসফুসের ক্যান্সার - পৃথিবীব্যাপি এটির প্রকোপ সবচাইতে বেশী। ধুমপান এর প্রধান কারন।
শ্বাস গ্রহনে সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি বুকে ব্যাথা, দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কাশির সাথে রক্ত যাওয়া ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষন। কিমোথেরাপি এবং রোডিওথেরাপি এই রোগের চিকিৎসা।
প্রস্টেট ক্যান্সার - পুরুষদের ক্যান্সার।
প্রশ্রাবের সাথে রক্তপাত, ব্যাথা, প্রশ্রাব কমে যাওয়া ইত্যাদি প্রষ্টেট ক্যান্সারের লক্ষন। প্রষ্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগের প্রকোপের উপর নির্ভর করে। প্রথমিক এবং সাধারন ক্যান্সার হলে এ রোগে কেবলমাত্র মুখে খাবার ওষুধ দেয়া হয়।
এছাড়া আরো কিছু ক্যান্সার গুরুত্বপূর্ন যেমন ত্বকের ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার, মেয়েদের ওভারী বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, পুরুষদের টেষ্টিস বা অন্ডকোষের ক্যান্সার ইত্যাদি।
কিমোথেরাপি কি - এটি ক্যান্সারের একপ্রকার চিকিৎসা।
শুনতে যন্ত্রপাতি দিয়ে থেরাপী দেবার মত শোনালেও এতে কিছু ওষুধ শিরাপথে ইন্জেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়। ওষুধগুলি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে।
রেডিওথেরাপি কি - এটি রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার পদ্ধতি। মূলত আপারেশনের পর রয়ে যাওয়া ক্যান্সারকোষ ধ্বংস করতে রোডিওথেরাপি দেয়া হয়। চিকিৎসাকালীন বা থেরাপি দেয়ার সময় রোগী ব্যাথা পায় না।
দীর্ঘ এই লেখায় ক্যান্সার সম্পর্কে কিছুটা বলার চেষ্টা করেছি। ধর্য্য ধরে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।