সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা প্রকৃতিতে জন্ম নেয় মানুষ। ছোট থেকে বড় হয়, কত আশা কত স্বপ্ন থাকে মনে। কত সুখ যে কামনা করে, তার কোনও সীমা থাকে না। জীবনে চলার পথে মানুষ কত কিছু পায়, আমার কত কিছু হারায়। ঠিক তেমনি মহান আল্লাহ মানুষকে নিয়ে যান এই সুন্দর পৃথিবী থেকে।
কেউ এক্সিডেন্টে মারা যায়, কেউ রোগের কারণে অকালে মারা যায়, কারো বা বয়সের কারণে মৃত্যুর ডাক এসে যায়। যদিও প্রত্যেক মানুষ-ই মরণশীল। সুখের সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার এবং ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মায়া ছেড়ে অকালে চলে যেতে হয় অন্ধকার মাটির ঘরে, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমার শ্রদ্ধেয় বাবা গলায় ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। বাবাকে অপারেশনের মাধ্যমে গলায় ছিদ্র করে নল ফিট করে দেয়া হয়েছিলো।
তিনি কোনও শব্দ করতে পারতেন না। মুখ দিয়ে হা করে বোবার মতো মানুষের দিকে চেয়ে থাকতেন। দুইটি বছর ভাত জিনিষটা মুখেই তুলতে পারেননি। শুধু তরল খাবার খেয়ে এতদিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত আমার বাবা ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কেঁদে কেঁদে পেট কেটে ভাত দিতে বলেছিলেন।
অবশেষে এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাবা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নিলেন। আমি ছোটকালে মুখ ভরে বাবা নামক শব্দটি ডাকতে পারিনি, নয়ন ভরে বাবার চেহারাটা দেখতে পারিনি। আজও ভুলতে পারিনা আমি ক্যান্সার রোগের কথা, প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসে ক্যান্সার নামক শব্দটি আমাকে আজও কাঁদায়। ঐ রোগটি আমার কণ্ঠ দিয়ে 'বাবা' ডাকার শব্দটি বন্ধ করে দিয়েছে আজীবনের জন্য। মারাত্মক এই ক্যান্সার রোগ মৃত্যুকালে আমার বাবাকে দু মুঠো ভাতও খেতে দেয়নি, মুখ দিয়ে কথাও বলতে দেয়নি।
হৃদয়ের ভিতরে প্রাণ পাখি জেগে থেকে বাবাকে করে রেখেছিলো বোবা।
এই রোগটি আমার মতো কত ছেলেকে কাঁদায়। কত হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। কত স্বপ্নকে সিডরের মতো তছনছ করে দেয়। এলোমেলো করে দেয় সুখের সংসার।
বাবাকে হারানোর পর কতকিছু ডাইরিতে লিখছি। কিন্তু কারো সামনে জীবনের স্মরণীয় হিসেবে তুলে ধরতে পারিনি, তাই আজ ব্লগে লিখাটা শেয়ার করলাম। ক্যান্সারে প্রান হারানো সকল মানুষের প্রতি আমার এই লেখাটা উৎসর্গ করলাম। সবাই আমার বাবার রূহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।