আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গঃ শাহবাগের আন্দোলন ও তার নেপথ্যের কথা

শুরুতে বলে নেই যে আমি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে না, আমি মনে-প্রাণে চাই যে এই অপরাধের বিচার হোক এবং এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড যেন সকল অপরাধীর ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়। এখন মূল কথায় আসি। যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং এর ২টি রায় ও ইতিমধ্যে আদালত প্রদান করেছে। প্রথম রায়ে পলাতক বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসী প্রদান করা হয় যা ছিল সকলের কাছে প্রত্যাশিত। জনগণও খুশি মনে এই রায় মেনে নিয়েছিল।

তবে এখানে একটি প্রশ্ন থেকে গিয়েছিল আর তা হল যে সকল অপরাধী দেশে আছে তাদের বিচার না করে কেন যে পলাতক তার রায় আগে প্রদান করা হল। এখানে হয়ত আমরা একটা উত্তর-ই খুঁজে পাই। তা হল, যেহেতু বাচ্চু রাজাকার পলাতক তাই সরকারের পক্ষে বা আদালতের পক্ষে এই রায় প্রদান করতে তুলনামূলক ভাবে কম ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সরকার/আদালত খুব সহজেই এই ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছাতে পেরেছে। অনেকে আবার এই প্রশ্ন তুললেই বলেছে যে তাও তো বিচার শুরু হয়ে গেছে, সেটা হোক পলাতক।

অনেকেই এই উত্তর শুনে চুপ করে থেকেছেন কারন আগামী বিচারের রায় গুলো কি হবে তা দেখার জন্য বা আদৌ হবে কিনা। এইবার আসি ২য় রায় প্রদানের পূর্বের কিছু দৃশ্যের ব্যাপারে। প্রথম রায় প্রদানের কিছুদিন পর শোনা গেল যে আদালত কাদের মোল্লার ব্যাপারে রায় প্রদান করতে যাচ্ছে। জনগণ ও সাথে সাথে প্রত্যাশিত ভাবেই ধরে নিল যে এই রায়ও হতে যাচ্ছে পূর্বের রায়ের মতই ফাঁসী। আর তাই যথারীতি জামায়াত-শিবির এই রায়কে ঠেকানোর ঘোষনা দিল এবং দেশে নৈরাজ্জ সৃষ্টি করল।

তারা দফায় দফায় সারাদেশে হরতাল আহ্বান করল। সরকারও যথারীতি তাদেরকে দমন করতে লাগল। এই সবকিছুই প্রত্যাশিত। কিন্তু, তখনই হঠাত করে সবকিছু যেন বদলে যেতে লাগলো। সরকার হঠাত করেই জামায়ত-শিবিরের প্রতি নমনীয় আচরণ করতে শুরু করলো, জামায়াতও পুলিশের এই আচারণকে ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানালো।

যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়া আরম্ভ করলো। সরকারের এই নমনীয় আচরনের ব্যাখ্যা উদ্ঘাটন করার আগেই কাদের মোল্লার রায় বের হল। নাটক জমে ওঠেোতখন যখন দেখা গেল এত জঘন্য অপরাধের পরও রায়ে কাদের মোল্লার শাস্তি হয়েছে যাবজ্জীবন বা ৩০ বছরের জেল। তা ও আবার কথিত আছে যে জেলে ৯ মাসে বছর ধরা হয় এবং সেই হিসাবে সাজা হবে ২৩ বছর। সাথে সাথে দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যায় প্রতিবাদ এবং ব্লগাররা একত্রিত হয়ে জমা হতে থাকেন শাহবাগ চত্বরে।

তারপর কি হল বা হচ্ছে তা সবার ই জানা। কেউ গিয়ে দেখেছেন আবার যারা যেতে পারেননি তারা টিভিতে দেখেছে। আর এই বিশাল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে 'ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট' নামের একটি সংগঠন এবং যার মূলে রয়েছেন 'ইমরান এইচ সরকার নামক এক ব্যক্তি যিনি 'Youth for Peace and Democracy, Bangladesh (YPD)' নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। এখন আসুন আমরা দেখি কে এই ইমরান, যার নেতৃত্বে আমরা সবাই দলে দলে কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে শাহবাগে জড়ো হলাম? আমি আগেই বলেছি যে, এই ইমরান হলেন 'ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট' নামের একটি সংগঠন এবং 'Youth for Peace and Democracy, Bangladesh (YPD)' নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু এর বাহিরেও এই ইমরানের আরো একটি পরিচয় আছে।

তা হল তিনি পেশায় একজন ডাক্তার এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) সঙ্গে জড়িত। তার বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন, সে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কতটা জড়িত এবং আওয়ামী লীগের একজন গোড়া সমর্থক। এই হল তার ফেসবুক আইডি। https://www.facebook.com/dr.imran.bd আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন যে শুরুতে কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে আন্দোলন শুরু হলেও তা গিয়ে ঠেকেছে জামায়ত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবীতে। অনেকে এই দাবীর প্রতি সমর্থন জানালেও এটা কিন্তু কোন জাতীয় দাবী না।

এটা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। আমার কথা যদি বলেন তবে আমি বলব, জামায়াতকে রাজনীতি করার অধিকার সংবিধান দিয়েছে। সংবিধানই জামায়াতকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। এখন যদি বলেন জামায়াতের তো সব বড় বড় নেতারাই যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত, তবে আমার উত্তর হল তাদের কে গ্রেফতার করুক সরকার, তাহলেই তো জামায়াতের মধ্যে আর কোন যুদ্ধাপরাধী থাকবেনা। এভাবে একটি দলকে কখনোই বন্ধ করে দেয়া যায়না।

কেননা তা সংবিধানের পরিপন্থী। আর তাই সরকার বা আওয়ামীলীগ চেষ্টা করলেও জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ করতে পারবেনা। তার উপর আবার রয়েছে জামায়াতের বিশাল জনসমর্থন। তাহলে এখন উপায়??? জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ না করলে তো আওয়ামীলীগের বিপদ, কিন্তু সাংবিধানিক ভাবে তো সেই রাস্তাও খোলা নেই। এখন কি করা যাবে? আর ঠিক এই মুহুর্তে কাদের মোল্লার রায়কে ইস্যুতে পরিণত করে পেছন দিক থেকে জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ করার পাকা কাজটা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়ে গেল।

ইমরান সাহেব এই কাজের ভাঁড়টা খুব সহজেই নিজের উপর তুলে নিলেন। প্রথম দিকে কাদের মোল্লার ফাঁসী চাইলেও এখন তা জামায়াত কে নিষিদ্ধ করার দাবীতে পরিণত হয়েছে। আর ইমরান সাহেবের অতীত কর্মকান্ড তাকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখন প্রশ্ন হল, ১। যুদ্ধাপরাধী কি সব-ই জামায়াত-শিবির বা বি এন পির মধ্যে রয়েছে? ২।

সরকারের মধ্যে বা এর বাহিরে কি কোথাও যুদ্ধাপরাধী নেই? ৩। যার অতীত কর্মকান্ড একটি বিশেষ দলকে ঘিরে, তার নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবীটা কতটা যৌক্তিক এবং এর পেছনে যে সরকার কল-কাঠি নাড়ছে না তা আমরা কিভাবে বিশ্বাস করব? হতেও তো পারে সরকার সোজা পথে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে না পেরে এই পন্থা গ্রহণ করেছে? ৪। জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধই যখন করতে চাচ্ছে সবাই তাহলে সেই দাবী এতদিন পর এসে কেন? এতদিন কেন এই দাবী ওঠেনি? স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এসে কেন? ৫। কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে হঠাত করে সবাই জ্বলে উঠল, কিন্তু এই আন্দোলন তখন কোথায় ছিল যখন সাগর-রুনির হত্যার বিচার হচ্ছিল না, বিশ্বজিতের হত্যার বিচার হলনা, হলমার্ক, রেল কেলেঙ্কারি এই ইস্যুগুলোতে তো কেউ ই এগিয়ে আসেনি, কেন? যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতির দায়, কিন্তু এই ইস্যুগুলোর দায়ভার কে নিবে? ৬। সবাই বলে বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা দেয়া হোক, মাননীয় আদালতের কাছে যে রায় সর্বোচ্চ মনে হয়েছে তা দিয়েছে।

এখন যদি এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে রায় বদলানো হয় তবে তখন কি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেনা? তখন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায় থাকবে? ৭। যারা আইনের ফাঁক-ফোকর রাখল এবং যাদের কারনে কাদের মোল্লার লঘূ শাস্তি হল, তাদের কেন বিচার দাবী করা হচ্ছেনা? ৮। যে জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে, সেখানে ২টি গুরুত্বপূর্ন হাসপাতাল রয়েছে। তারপরও সেখানে আন্দোলন করা কতটুকু যৌত্তিক? ৯। হরতালের সময় যানবাহন চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে বলে সরকার হরতালকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।

এখানে কি যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে না? ১০। এত বিশাল একটা আন্দোলন হচ্ছে, সরকার এই ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নিয়েছে? আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দ্যেশ্যে বলতে চাই, যার অতীত কর্মকান্ড একটি বিশেষ দলকে ঘিরে, তার নেতৃত্বে এইরকম একটি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পেছনে কতটুকু যৌক্তিকতা রয়েছে? এখানে যে জাতির সাথে প্রতারণা করা হচ্ছেনা তার গ্যারান্টি কি? সবশেষে গতকালের প্রথম আলো অনলাইনে করা একজন পাঠকের মন্তব্য তুলে ধরতে চাই, "আওয়ামিলীগ নিজের পায়ে কুড়াল মারার কাজটি সেরে ফেলেছে। জনাব এ বি এম মূসা সাহেবের সাথে একটু যোগ করি। আওয়ামিলীগ আসলে মনে করেছিলো ফাসি না দিলে তারা জনগন কে বলতে পারবে বিচারে সরকারের হাত ছিলো না তাই ফাসি হয়নি এটা আদালতের ব্যাপার । যেমন উপনির্বাচনে বা মেয়র নির্বাচনে পরাজিত হলে আওয়ামিলীগ বলে নির্বাচনে সরকার প্রভাব খাটায়নি তাই বিএন পি জিতেছে।

তবে এবার বিএন পির সাথে নয় আওয়ামিলীগ রাজনৈতিক কূটকৌশল করেছে জনগনের সাথে। " আবারো বলছি, আমি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে নই, আবার আমি জামায়াত-শিবিরের পক্ষেও নই। আমার মনে যে প্রশ্নগুলো এসেছে তা আমি আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করলাম। না জেনে কোন ভুল করে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেবেন। ইনি-ই সেই ইমরান।

মাত্র ১টি ছবি দিলাম। [img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/97116/small/?token_id=17a4ce68442ec10bd10c538d71cd52c9 জাফর ইকবালকে নিয়ে যখন কথা উঠলো তখন এই দেখেন একটা গোপন জিনিস, এটা কিন্তু এডিট করা না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।