দেশের বাইরে থেকে যতোটা সম্ভব বিভিন্ন সোর্স থেকে আপডেট হয়ে যা বুঝতে পারছি যে, ঘটনা যেটাই ঘটেছে সেটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই লজ্জাজনক। বিডিআর, সেনাবাহিনী উভয়েই দেশের সন্তান। এ মুহূর্তে কে দোষী কার পক্ষ নেব সেই কথা ভাবার আগে ভাবতে হবে এমন ঘটনা কেন ঘটল।
জনৈক বল্গারের মামার কাহিনী ও তার সাক্ষাতকার শুনে যা মনে হল যে সত্য লুকানো হচ্ছে। তার সাক্ষাতকারে কোন কিছু পরিষ্কার নয়।
সেনাবাহিনী সদস্য তিনি সুতরাং ধারনা করা যায় সত্যটা এখন প্রকৃত ভাবে আসছে না যতটা আসা উচিত ছিল, শত হলেও একটা কথা মনে রাখতে হবে সে সেনাবাহিনীর সদস্য বিডিআর এর নয়। ভুক্তভোগী ব্যতীত পৃথিবীতে কোন কিছুর ব্যাথা বোঝা সম্ভব নয়। একটা জিনিস সবাইকে বুঝতে হবে হাতে বন্দুক থাকলেই বিডিআর কোন কারন বা উস্কানি ছাড়া কাউকে গুলি করবে না। এমন কোন কিছু ঘটেছে যে তারা গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। আর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা যে দুর্নীতিগ্রস্থ সেটা ওপেন সিক্রেট।
আর যাই ২০ হাজার টাকায় ছেলে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় বিদেশে প্রেরন, কিংবা ঢাকা শহরের প্রাইম লোকেশনে ফ্লাট কেনা সম্ভব নয়।
ঘটনার শুরু আরো আগেই, অনেক দিনের কষ্ট, না পাওয়া থেকে এসেছে আজকের অবস্থা। তাদের দাবী দাওয়ার দিকে নজর দিলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটত না। এটা সত্যিযে তাদের সার্ভিস অনুযায়ী তাদের বেতন তেমন নয়। প্রতিপদে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে যে দ্বায়িত্ব পালন করবে তার কিছু দাবী দাওয়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
দাবী হয়ত তারা করেছিল কিন্তু কিছু লোকের যাচ্ছেতাই ব্যাবহার, অবহেলা তাদের নিরাশ করেছে, হয়তো নিয়ে গিয়েছিল সহ্যের শেষ সীমানায়। গুরুত্বপূর্ন আরেকটা বিষয় হচ্ছে বিডিআর এর প্রধান কখনো বিডিআর থেকে হয়না নেয়া হয় আর্মি থেকে। একটি সংসারে যদি কেউ ছোট থেকে বড় হয় ছোট বেলা থেকে যদি সে কোন কিছু না পেয়ে আসে, তাহলে তাকে ক্ষমতা দেয়া হলে সে যা করবে তা হচ্ছে সে পায়নি কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন তা পায় তা নিশ্চিত করা। যা আমরা প্রত্যেকেই করি আমাদের সন্তানদের জন্য, সর্বদা ভাবি যে আমি হয়তো পেলাম না কিন্তু আমার সন্তান যেন পায় আমি সেই ব্যবস্থা করব। সবকিছুর মত বিডিআর ও তাই যদি তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচিত করা হত তাহলে তাদের সমস্যা সে যতটা বুঝত বাইরের কেউ ঠিক ততটা বুঝত না বা ততটা হৃদয় দিয়ে অনুভব করত না।
কেউ হয়তো বলবেন যে এরা অল্প শিক্ষিত এরা নেতৃত্বের যোগ্য নয়। দোষটা তাহলে নিয়োগকর্তাদের তারা কেন এমন ভাবে নিয়োগ দিল। কেনবা তারা বিসিএস ক্যাডারদের থেকে সরাসরি নিয়োগ দিলনা।
আমরা হয়ত পিতাহারা সেই সন্তানদের সমবেদনা জানাতে পারব কিন্তু কোনদিন বুঝতে পারব না পিতা হারানোটা যে কতটা কষ্টের বা কতটা বেদনার। সবাই কেবল গননা করছে কয়জন আর্মি অফিসার মারা গেছে ? কারো মুখেই দেখলাম না যে কয়জন বিডিআর মারা গেছে ? কারন তাদের জীবন খুব সস্তা যে, মাত্র ৮/৯ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী কটা মরল তাতে কার কি আসে যায়।
কিন্তু তারাওতো কারো বাবা, সন্তান, স্বামী !!
একহাতে যেমন তালি বাজেনা তেমন এই গোলাগুলি যে একপাক্ষিক হয়েছে তা কেউ দিব্যি দিয়ে বললেও বিশ্বাস করব না। দোষ উভয় পক্ষেরই রয়েছে বেশী কিংবা কম। গুলি উভয়দিক থেকেই চালানো হয়েছে তা অল্প কিংবা বেশী। তবে বিডিআর এর মারার ধরন দেখে তাদের উপর সমবেদনা যতটুকু ছিল তাও চলে গেছে। কিছু কিছু অফিসার মারা গেছে স্রেফ ব্যক্তিগত আক্রোশের কারনে এটা নির্দিধায় বলে দেয়া যায়।
আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে যে বিডিআর এর কোন চেইন অফ কমান্ড ছিল না। তারা নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে কাকে তারা নেতা হিসেবে ঠিক করবে। যার ফলে প্রথমদিকে তাদের গোছাল মনে হলেও পরে বিচ্ছিন্ন দিকটা পরিস্কার ধরা পড়েছে। তবে তাদের নেতা শাকিলের প্রতি ক্ষোভটা যে খুব বেশী ছিল তা পরিস্কার বোঝা যায় তাকে মারার ধরন দেখে।
বিডিআর এর সবাই যে অস্ত্রধারী বিদ্রোহী এটা স্বীকার করে নিতেও বাধছে।
অনেকের কিছু করারও ছিলনা। তবে ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে যে এটা কিছুটা হলেও পূর্বপরিকল্পিত।
প্রকৃত সত্য লুকানো হচ্ছে। প্রকৃত সত্য হয়তো এখন প্রকাশ করাও হবেনা। কাউকে খুশী করার জন্য সরকার কিছু করুক তা আমরা চাইনা।
আমরা চাই যে কারনে এ বিদ্রোহ তার দিকে সরকার নজর দিক। সঠিক কারন খুজে বের করে তার প্রতিকার করা হোক। বিডিআরদের প্রাপ্য সম্মান তাদের কে দেয়া হোক আর কেউ যদি অযথাই সুযোগের সৎব্যবহার করে এই রক্তপাত ঘটায় তবে তার প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচারের ব্যবস্থা হোক। সেনাবাহিনীর খরচ পত্রের হিসাব নেয়া হোক সেই সাথে জবাবদিহিতা চালু করা হোক।
আরেকটা কথা না বললেই নয় চ্যানেলগুলোর কথা।
যারা এখন ঘটনাটাকে বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে একটা খাতে এখন প্রবাহিত করতে চাচ্ছে এবং এমন নির্লজ্জভাবে এটা প্রদর্শন করছে যে সেনাবাহিনী ধোয়া তুলসী পাতা, তারা কিছুই জানেনা। তাদের প্রতি অনুরোধ যেসব অফিসারদের সাক্ষাতকার নেন তাদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন আপনারা কিছুই বলেননি বিডিআর জওয়ানরা শুধু শুধু গুলি করা শুরু করে দিল আপনাদের উপর কোন কথাবার্তা ছাড়াই। বেশী কিছু বলতে চাইনা শুধু এটুকু বলব সত্য প্রকাশ করুন শ্রদ্ধা পাবেন। সত্যের মৃত্যু নাই। মিথ্যা কথায় আজ হয়ত পার পেয়ে যাবেন কিন্তু নিজের সত্বাকে কি জবাব দিবেন ?
আমরা সাধারন মানুষ চাই সেনাবাহিনী ও বিডিআর এর সহ বন্ধন।
সেনাবাহিনীর সাহায্য ছাড়া যেমন বিডিআর চলতে পারবে না তেমনি সীমান্ত রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর প্রয়োজন বিডিআর এর। আমদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দুটি হতেরই প্রয়োজন সমান।
আর রক্তপাত নয় আসুন একটি রক্তপাতহীন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখী আর বলি '' হে আমার মাতৃভূমি বাংলা আমরা তোমায় ভালবাসি''
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।