আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্কার, স্লামডগ মিলেনিয়ার এবং রেসিজম

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আবার চলে এলো সেই প্রহর। অস্কার, অফিসিয়ালী যার নাম এ্যাকাডেমী এ্যাওয়ার্ড। অনুষ্ঠিত হবে আগামী কাল হলিউডের কোডাক থিয়েটারে। অস্কার এমন এক খেতাব যার জন্য তীর্থের কাকের মত প্রতিক্ষায় থাকে নামীদামী শিল্পীরা। বিশ্বের অনেক নাম করা শিল্পীকে অস্কার নিতে গিয়ে কেঁদেকেটে একাকার হতে দেখা গিয়েছে।

এ যেন নোবেল পুরষ্কারের থেকে কোন অংশে কম নয় চলচিত্র জগতে। এমন কি যে কেবল নমিনেশন পেয়েছে একবার, সেও সারা জীবন সেটাই লিখতে থাকে নামের পাশে। অস্কার এতটাই গুরুত্ব রাখে এই জগতে। এবারের অস্কার মানুষের মাঝে অন্য একটা বিশেষ কারনে আরো বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ব্রিটিশ চলচিত্র স্লাম ডগ মিলেনিয়ারের বাফটা এবং গোল্ডেন গ্লোবের সাফল্যের পর উপমহাদেশের মানুষ আশা করছে অস্কারেও সমান সফলতা দেখাবে ছবিটি।

আশার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে অবাক করা কিছু মন্তব্যও বিভিন্ন ব্লগে দেখতে পেলাম। কেউ কেউ বলছেন স্লাম ডগ মিলেনিয়ার বলিউডের ছবি! আসলে যারা নিয়মিত ছবি দেখেন না, তাদের কাছে যেন প্রেক্ষাপটটাই ছবির ধরন নির্ধারন করে দেয়। হলিউড বা ব্রিটিশ ছবি হতে হলে যে সেটা যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যেই হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। এবারের সেরা অস্কারের নমিনেশনটা দেখলেই দেখা যাবে তাতে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের আরো দুটো ছবি রয়েছে - রিডার, জার্মানীর প্রেক্ষাপটে তৈরী এবং ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সিলোনা স্পেনের প্রেক্ষাপটে। তাই বলে সেই ছবিগুলো কি জার্মান বা স্পেনিশ? কিম্বা ট্রান্সপোর্টার থ্রি? যেটা শুধু ফ্রান্সের প্রেক্ষাপটেই তৈরী নয়, ফ্রান্সেরই ছবি।

আর বডি অব লাইসতো পুরোই আরব বিশ্বের ছবি বলা যায়! এতগুলো ছবি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও কেন স্লামডগ মিলেনিয়ার শুধু আমাদের দৃষ্টিতে অন্য ভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে? বিশেষত নেতিবাচক দিক দিয়ে। অনেকে এটাও ভয় পাচ্ছেন এবার বুঝি অস্কারের জাত যায়! কারনটা সম্ভবত এটাই যে ঐ ছবির পাত্র-পাত্রীর গায়ের রং সাদা নয় বরং বাদামী। নিজেদের অজান্তেই অস্কারকে আমরা সাদাদের খেতাব বানিয়ে দিয়েছে! একজন উপমহাদেশীয় অস্কার নেবে, সেটা যেন আমাদের চোখেই দৃষ্টি কটু লাগছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি যে ইংরেজী ছবির গল্প, অভিনয় এবং অন্যান্য দিকের উপর ভিত্তি করে অস্কার দেয়া হয়, গায়ের রং না। গল্প বা প্রেক্ষাপট আমাদের দেশেরও হতে পারে।

সেটার সাথে অস্কারের নমিনেশন পাওয়ায় বাড়াবাড়ির কিছু নেই। অস্কারের জন্য একটাই বিশেষ ক্রাইটেরিয়া, ছবিটা মূখ্যত ইংরেজী ভাষার কি না। মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে আমার মনে হচ্ছিল নিজের গায়ের রংকে যত দিন আমরা সাধারন ভাবে নিতে পারবো না, ততদিন রেসিজম শব্দটা উচ্চারন করা মানায় না আমাদের। আজও আমাদের মাঝে আমরাই সবচেয়ে বড় রেসিস্ট। ২১ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।

অস্কার নিয়ে আমার মূল পোস্টগুলো আজ রাত থেকে আসতে শুরু করবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।