http://joyodrath.blogspot.com/
আমি মেষ রাশির জাতক। সেই সুবাদে আজকে আমার ব্যবসায়ে হিসাবের খাতায় গরমিল ধরা পড়তে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে অন্যের সহযোগিতা পাবো। আকস্মিকভাবে অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে। প্রেমের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পাবো
প্রথম আলো পত্রিকার জ্যোতিষী এসব কথা লিখেছেন।
জ্যোতিষশাস্ত্রে আমার স্ট্র্যাটেজিক আস্থা আছে। সেটা ২০০১ সালের কথা। সরকারি কলেজে চাকরি, এক মফস্বলের কলেজে পোস্টিং। বৌ-এর ঢাকায় চাকরি, বাচ্চা ছোট, ফলে আমাকে ঢাকা-মফস্বল যাওয়া-আসা করতে হয়। চার ঘণ্টার জার্নি, যাওয়া-আসা মিলিয়ে আট ঘণ্টা।
প্রতিদিন দুটা করে ক্লাস থাকে। সপ্তায় চারদিন। বাকি তিনদিন ক্লাস নেই। সেই তিনদিন বাসায় বসে চারদিনের লাগাতার ভ্রমণের ক্ষত সারানোর চেষ্টা করি। ক্ষত কিন্তু বেড়েই চলে, পিঠের নিচের অংশে চিরস্থায়ী এক ব্যথা।
সোজা হয়ে শুতে পারি না।
যাহোক, এমনি সময়ে কলেজে নতুন এক অধ্যক্ষ বদলি হয়ে এলেন। এসেই সমন জারি করলেন, প্রতিদিন ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্মস্থলে থাকতে হবে। এমনকি শুক্রবারও স্ট্যান্ডবাই থাকা আবশ্যক। আমি তাঁকে গিয়ে বিনীতভাবে বললাম, আমার সমস্যার কথা।
তিনি অনড়। সরকারি বিধিবিধান দেখালেন। তাঁর যুক্তি মেনে নেয়া ছাড়া কী করার আছে? আমি তখন ততোধিক বিনীতভাবে আমার বদলির আবেদনটি তাঁর হাতে তুলে দিলাম। অগ্রায়ন করে দেয়ার জন্য। প্রতিদিন ঢাকা থেকে আসা সম্ভব না।
এখানে থেকে-যাওয়াও সম্ভব না, যেহেতু স্ত্রী ঢাকায় অ-বদলিযোগ্য চাকরি করেন। আবার, বাচ্চা ছোট তাই তাকে সময় দেয়ারও মামলা আছে। আমার বদলি হয়ে যাওয়াই ভাল। বদলি করে দিন।
অধ্যক্ষ সেই আবেদনে সাড়া দিলেন না।
বললেন, বদলির আবেদন তিনি রিকমেন্ড করবেন না। আমি তখন বিধিবিধান দেখালাম। বললাম যে, আমার বাস্তবতায় বদলির অধিকার আমি সংরক্ষণ করি রীতিমত। কিন্তু তিনি অনড়।
শেষে কী আর করা।
বললাম, বিধান মানলে সবটা মানেন। আপনি আধা মানলে আমিও আধা মানবো। অর্থাৎ আমার ক্লাশের দিনগুলো ছাড়া আমাকে কলেজে পাবেন না।
প্রমাদ গুণলেন অধ্যক্ষ। জীবনে বহু অবাধ্য প্রভাষককে সোজা করেছেন, এমনটা বললেন সহকর্মীদের।
ফলে আমাকেও "সোজা" করে ছাড়বেন এতে আর সন্দেহ কি?
কিন্তু আমার তো অন্য অপশন নাই।
এমনি সময়ে কলেজে বার্ষিক মিলাদ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য এই মিলাদে দোয়াপ্রার্থনা হয়। সেদিন আমার ক্লাশ নেই। এমনিতেও মিলাদে আমার আগ্রহ নেই।
ফলে গেলাম না। মওকা পেয়ে গেলেন অধ্যক্ষ। তিনি লম্বা একটা শো-কজ দিলেন। রীতিমত লাভ-লেটার! কেন আমি কর্মস্থলে মিলাদের মত একটা ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে অনুপস্থিত? এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইলেন। একে তো অ্যাবসেন্স, তার উপরে মিলাদে অ্যাবসেন্স! চারদলীয় জোট তখন ক্ষমতায়, আমিনী হলেন মন্ত্রী! সেই চিঠির কপি দিলেন শিক্ষা অধিদপ্তরে, এমন কি মন্ত্রণালয়ে পর্যন্ত।
আর অন্যদের বললেন আমাকে তিনি এবার চাকরিশূন্য করে ছাড়বেন।
যথারীতি সেই চিঠির উত্তর আমি দিয়েছিলাম। কপি দিয়েছিলাম অধিদপ্তরে এবং মন্ত্রণালয়ে। চিঠিটা লিখেছিলাম সাধুভাষায়। স্মৃতি থেকে উদ্ধার করি:
"মহাত্মন,
উক্ত দিবসটিতে আমি কর্মস্থল হইতে কিঞ্চিৎ দূরে অবস্থান করিতেছিলাম।
প্রত্যুষে উঠিয়া কর্মস্থলে আসিবার আয়োজন শুরু করিবার প্রাক্কালে অকস্মাৎ পত্রিকায় দেখি আমার রাশিফলে "যাত্রা নাস্তি" লিখিত আছে। আমি রাশিফল বিশ্বাসী হওয়ায় এবং আমার যাত্রা "নাস্তি" থাকায় সেদিন আমার পক্ষে ঐ দূরত্বটুকু অতিক্রম করিয়া কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া সম্ভবপর হইয়া উঠে নাই। "
এই হল আমার রাশিফলে স্ট্র্যাটেজিক আস্থার বৃত্তান্ত। আজকের রাশিফল নিয়ে ভাবছি। মোটামুটিভাবে সারাদিন বাসাতেই থাকবো, ফলে অর্থপ্রাপ্তি কিভাবে ঘটবে বুঝতে পারছি না।
মাঝেমধ্যে বইপত্রের ভাঁজে খোঁজাখুঁজি করছি। একটু আগে ফ্রিজের তলাও দেখে এলাম। বৌ জ্বরাক্রান্ত, ফলে প্রেমের ক্ষেত্রে ভয়ংকর নেতিবাচক সাড়া আসারই সম্ভাবনা।
কিছু একটা মিরাকল ঘটতে পারে এই ভাবনায় অর্ধেক দিন পার করে দিলাম। বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে এখনো আশা ছাড়ি নাই।
জীবনে টাকা দরকার। প্রেমও দরকার। প্রচুর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।