আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্যের সাক্ষাতকার.................... অর্ক আসিফ শাওন

একাকী নিরালায় কত কথা

আজ একটা নতুন ব্লগ লিখেছিলাম অনেক সময় নিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হঠাত করে নেট কানেকশন বিট্রে করল কি আর করারা। ভেবেছিলাম আজ লেখা দিবই তাই নিজের পুরোনো লেখা আবার ব্লগে ছেড়ে দিলাম। অন্তহীন সমস্যা নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৯ সালে পদার্পণ করেছে ১৭ জানুয়ারি দেশের প্রাচীনতম উচ্চতর বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত গৌরব, দেশের উচ্চশিার নানা দিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি, শিার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের উপায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে যুগান্তর ক্যাম্পাসের প থেকে সম্প্রতি তার মুখোমুখি হয়েছেন অর্ক আসিফ শাওন যু. ক্যাম্পাস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে অভিহিত করা হয়।

কিন্তু সত্য কথা হল, পৃথিবীব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে এটির অবস্থান এখন অনেক পেছনে। এেেত্র শিার গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধনের ল্েয সামনে কী কী পদপে নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? ভিসি : ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় অক্সফোর্ডের আদলেই এর কাঠামো নির্মিত হয়। সে কারণে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিহিত করা হতো এবং এখনও অনেকে করে থাকেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি এই অঞ্চলের শিা-গবেষণার েেত্র প্রভূত অবদান রেখেছে। বিভিন্ন সময় বহু চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সামরিক শাসনামলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বহু চাপ এসেছে। এই সব কিছু নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজকে ২০০৯ সালে পদার্পণ করেছে। আমি গত ১৭ জানুয়ারি উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। এই দায়িত্ব সাময়িকভাবে আমার ওপর ন্যস্ত হয়েছে। উপাচার্য প্যানেল নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আমি দায়িত্ব পালন করে যাব।

এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার কথা যদি বলতে, অন্তহীন সমস্যা। তবে আমি গুরুত্ব দিতে চাই শিার্থীদের সমস্যার প্রতি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের অপ্রতুলতার কথা আমরা সবাই জানি। এই সীমিত সম্পদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। এখানকার শিার্থীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা মেধাবী তরুণ-তরুণীদের একটি গোষ্ঠী।

তারা স্ব-উদ্যোগে এবং শিকদের সংস্পর্শে নিজেদের প্রস্তুত করে। আমরা দেখি এখানকার øাতকরাই দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং বিদেশেও তারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছে। এ নিয়ে আমি সবসময় গর্ববোধ করি। তাই আমাদের শিাব্যবস্থা অতি নিুমানের এটা যদি বলা হয় তবে হীনমন্যতার পরিচয় হবে। তবে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এখন আরও কিছু করার প্রয়োজন আছে।

যু ক্যাম্পাস : উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর কোন কোন বিষয়গুলোর প্রতি আপনি বেশি জোর দিতে চাচ্ছেন? ভিসি : শিার্থীদের চাহিদাটাকেই আমি অগ্রগণ্য মনে করি। কাসরুমের অপ্রতুলতা, গ্রন্থাগারে গ্রন্থের অপর্যাপ্ততা, হলের আবাসিক সমস্যা, হলের খাবারের নিুমান, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধার অভাব এই বিষয়গুলো স্বল্প-মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে মেটাতে চাই। মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন, নতুন বিভাগ চালু করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার এবং গ্রন্থাগারগুলোর মান উন্নয়ন করা। ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটিজ সম্প্রসারিত করা। হলের আবাসিক কে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান এই বিষয়গুলো মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আসা প্রয়োজন।

ফান্ডের অপ্রতুলতার কারণে অনেক সময় অনেক কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আশা করব, বর্তমান সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনা প্রশাসনের কাছে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী। ১৯৯৬-২০০১ সালে দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকল্পে প্রশাসন বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। এবার তারা শিাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবে আশা করি।

যু ক্যাম্পাস : ১৯৫২, ৬৯, ৭১ এবং সর্বশেষ ৯০-এর মত যত বড় বড় অর্জন রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরাই তাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আজকে দেশের প্রায় সব ক্যাম্পাসেই এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনীতির এই প্রচলিত ধারা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সরকারের কাছে কোন প্রত্যাশা অথবা আপনারা নিজেরা কি ভাবছেনঃ ভিসি : আমরা ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মাঝে-মধ্যে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি ল্য করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একটা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের মধ্যে যদি ছাত্রদের রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক চর্চা করতে দেয়া যায় তবে এ ধরনের সংঘাত কমে যাবে। এগুলো কিন্তু বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সামরিক স্বৈরশাসনের কুফল।

আবার এটাও মনে রাখতে হবে যে জরুরি অবস্থার বহু নিষেধের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিকরাই প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে এবং তাদের বন্দি শিক এবং ছাত্রদের মুক্ত করে এনেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সেই নৈতিক বলটা এখনও আছে। ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিলে তারা অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে। এজন্য আমি সবসময় তরুণ প্রজšে§র ওপর আশা রাখি। কিন্তু পরিবেশটাকে সহায়ক পরিবেশে রূপদান করতে হবে এবং সেই কারণে ডাকসু এবং হল সংসদ সক্রিয়করণ, তাদের নির্বাচনগুলো প্রতিবছর অনুষ্ঠিত করা, এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমি সবসময় বলি যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রত্যেকের সম্ভাবনাকে শাণিত করার জায়গা। কিন্তু এখন কাসরুমের বাইরে এসে যখন শিার্থীরা দেখে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নেই, তখন তাদের মধ্যে হল দখল বা প্রাধান্য বিস্তার করা কিংবা নিজের সংগঠনকে জোরদার করাÑ এ ধরনের কিছু অশুদ্ধ প্রতিযোগিতার মধ্যে তারা নেমে পড়ে। যু. ক্যাম্পাস : তরুণ প্রজš§ ডিজিটাল বাংলাদেশের প। ে এেেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি বিভাগে, প্রশাসনিক স্থলে আপনারা প্রযুক্তির ছোঁয়া কিভাবে দিতে চাচ্ছেন? ভিসি : এখনই আমার এ নিয়ে কোন মন্তব্য করা সমীচীন হবে মনে হয় না। তবে আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারনেট একসেস বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।

সেই কারণে লাইব্রেরিতে, টিএসসিতে, তাদের হলে প্রত্যেকটি জায়গায় ইন্টারনেট সুবিধা থাকার দরকার আছে। এ বিষয়গুলো সময়সাপে। তার চেয়ে বেশি অর্থসাপে। সময় লাগে, কিন্তু সময়টা অত লাগবে না যদি আমরা অর্থটা পেতাম। আমরা যে চেষ্টাটা করব সরকার থেকে যদি আমরা সে সুযোগ-সুবিধা পাই।

যু. ক্যাম্পাস : পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিউনিটি রেডিও বা কমিউনিটি টেলিভিশন রয়েছে। আমরা জানি যে, আপনি নিজেও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর। আপনার কি মনে হয় না বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম কমিউনিটি রেডিও বা কমিউনিটি টিভি থাকলে এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা সম্ভব? ভিসি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৃহৎ পরিবার। এখানে প্রায় ৩৫ হাজার ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি পরিবার। ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী, ১ হাজার ৫০০ শিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস।

তার সঙ্গে যদি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীদের অভিভাবকদের কথা বলি, এক বিশাল পরিবার। তো সেই পরিবারের তথ্য চাহিদা মেটানোর জন্য যদি কোন রেডিও বা টেলিভিশন নেটওয়ার্ক থাকে এটা আশ্চর্যের কিছু নয়। আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত আছে টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও নেটওয়ার্ক। কমিউনিটি রেডিও বাংলাদেশ সরকার দেবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। আশা করতে পারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে সাংবাদিকতা বিভাগ একটি কমিউনিটি রেডিও পরিচালনার দায়িত্বভার নিতে পারে; একটি মিনি টেলিভিশন চ্যানেল থাকতে পারে।

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে এগুলো যে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন তাও কিন্তু নয়। শুধু দরকার নীতিনির্ধারণের। যু. ক্যাম্পাস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর খাবারের মান নিয়ে অনেক অভিযোগ। এ বিষয়ে আপনার মতামত? ভিসি : হলে দুই ধরনের বন্দোবস্ত আছে; হল মেস এবং হল ক্যান্টিন। দুই স্থানে খরচের আনুপাতিক পার্থক্য আছে।

কিন্তু যাই হোক, খাবারের যে ন্যূনতম মান সেটুকু রা করার প্রয়োজন আছে। আমি এ বিষয়ে অচিরেই হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে আরও কি কি করা যায় তার চেষ্টা করব। যু. ক্যাম্পাস : আবাসিক হলের আরেকটা সমস্যা হল হলের সিট বরাদ্দের সমস্যা। অনেক ছেলে বা মেয়েই থার্ড ইয়ার বা ফোর্থ ইয়ারে উঠেও আবাসিক হতে পারে না। ছেলেদের হলে এ সমস্যা আরও প্রকট।

যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তারা ফার্স্ট ইয়ার থেকেই থাকতে পারে। হলে তিন ধরনের কার্ড থাকলেও এ কার্ডের কোন মূল্যায়ন হলে করা হয় না। হলের সিটের সমস্যার সমাধানে সামনে কি করণীয় বলে আপনার মনে হয়? ভিসি : আমরা হলের বৈধ ছাত্রদের ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত। বুঝতে পারি যে, অনেক ছাত্রছাত্রী ঢাকা শহরে থাকার জায়গা নেই বলে হলে অবৈধভাবে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু একই সঙ্গে যারা বৈধভাবে আছে তাদের স্বার্থ যে ুণœ হয় সে বিষয়টাও আমাদের দেখতে হবে।

সেই কারণে যা কিছু করণীয় আমরা করার চেষ্টা করব। যু. ক্যাম্পাস : আমরা দুটি মেগাহল হওয়ার কথা শুনছি। একটা ছেলেদের, অন্যটা মেয়েদেরঃ ভিসি : এ বিষয়টা আমি এখনও নিশ্চিত নই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের অপ্রতুলতা, আবাসিক সমস্যা সর্বজনবিদিত। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

যু. ক্যাম্পাস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা বড় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, গর্ব এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের যে সুনাম এবং মর্যাদা এর অনেকখানি নির্ভর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। এর উপাচার্য হিসেবে আপনি কতটুকু আশাবাদী? ভিসি : উপাচার্যের একার পে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। উপাচার্যকে অভিভাবক হিসেবে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা এবং গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে পরিবারের সব সদস্যের সহযোগিতা সমর্থন এবং সক্রিয় পরামর্শ এগুলো একজন উপাচার্যের কার্যক্রমকে জোরদার করে।

আমরা সেটা আশা করব যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্মিলিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, শিার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক এবং বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.