...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
এক.
ছেলেটার সাথে তিতলির পরিচয় ইন্টারনেটে। ছেলেটাই তাকে মেসেঞ্জারে এড রিকোয়েষ্ট পাঠায়। প্রথমদিকে ছেলেটাই তিতলির সাথে বার বার চ্যাট করতে চাইতো। এমনতো কতোজনই করে। মেয়ে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়ে চ্যাট করার জন্য।
তাই তিতলি তেমন একটা পাত্তা দিত না। কিন্তু কিছুদিন পর অবাক হলো ছেলেটার লেগে থাকার চেষ্টা দেখে। সকালে, দুপুরে, এমনকি মাঝরাতেও যখনই সে লগ ইন করে ছেলেটাকে নেটে উপস্থিত দেখে। আর সে ঢোকা মাত্রই ছেলেটা তাকে নক করে। তিতলি প্রায়ই ভাবে,ছেলেটা কি ঘুমায় না? বা তার কি আর কোন কাজ নেই? সারাদিন ইন্টারনেটে বসে থাকে?
একদিন, তখন তিতলির কিছুই ভালো লাগছিলো না।
ইন্টারনেটে এসে দেখলো তেমন কেউ নেই ওই ছেলেটি ছাড়া। তাই ছেলেটি দু'বার তাকে হ্যালো বলতেই সে উত্তর দিলো। তারপর এই কথা, সেই কথায় তিতলি বলে ফেললো তার মন খারাপের কথা। ছেলেটা সাথে সাথে এতো সুন্দর একটা কবিতা তাকে পাঠিয়ে দিলো, যে তিতলির খুবই অবাক হলো। কবিতাটা পরে তার মন অসম্ভব ভালো হয়ে গেলো।
এরপর অনেকদিন আর তিতলি নেটে বসে নি। সপ্তাহ তিনেক পর যখন সে আবার নেটে বসলো, অবাক হয়ে দেখলো ছেলেটা তাকে খুব দারুন একটা গান পাঠিয়েছে। ছেলেটার নাম শুভ। শুভর পাঠানো গানটা শুনে তিতলির খুবই ভালো লাগলো। তাই ধন্যবাদ টা না দিয়ে পারলো না।
তারপর অনেক কথা। অবশ্যই চ্যাট এ। কখন যে দু'ঘন্টা কথা বলা হয়ে গেছে তাদের খেয়ালই নেই। ঘুমুতে যাবার আগে দু'জন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলো।
এরপর যখনই তিতলির মন খারাপ থাকতো, সে নেটে শুভর সাথে চ্যাট করতো।
একদিন শুভ তার ছবি পাঠালো। খুব সুন্দর এলোমেলো চুলের লম্বা একটা ছেলে। রাজপুত্রের মতো দেখতে। তিতলি কি ভেবে যেন তার ছবিটাও পাঠিয়ে দিলো। একসময় এমন অবস্থা দাড়ালো যে শুভর সাথে চ্যাট না করলে তিতলির ঘুমই হতো না।
কতো কথা। তিতলি অবাক হয়ে দেখলো, শুভর সবকিছুই তার ভালো লাগে। শুভই তাকে সবচেয়ে বেশী বুঝতে পারে। শুভ যেন ঠিক তারই একটা প্রতিচ্ছবি। সে যখন খুব রাগ করে বলে যে আর কোন দিন সে শুভর সাথে চ্যাট করবে না, শুভ একটুও রাগ করে না।
সোজাসুজি বলে আচ্ছা করতে হবে না। একসময় তিতলিই নিজে থেকে আবারো শুভর সাথে চ্যাট করে। সে যখন চায় তাকে কেউ বিরক্ত না করুক, শুভ ঠিকই বুঝতে পারে। তাকে বিরক্ত করে না। আবার যখন তিতলির মনে হয় এখন কেউ তাকে খুব সুন্দর একটা গান শোনাক, শুভ তাও বুঝে ফেলে আর হয়তো সেই গানটাই শুনিয়ে দেয়, যেটা তিতলি শুনতে চাচ্ছে।
কখনো কথনো দারুন দারুন কবিতা পাঠিয়ে চমকে দেয় তাকে। আবার যখন দরকার ঠিক তখনি হয়তো কোন একটা জোকস বলে তিতলির মনটা ভালো করে দেয়। ইন্টারনেটের ওপাশের এই অসম্ভব দারুন ছেলেটাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে তিতলি।
একদিন তিতলি শুভকে তার ফোন নাম্বারটা দেয়। এরপর শুরু হয় তাদের ফোনে কথা বলা।
রাত হোক, দিন হোক যখনই তিতলি শুভকে ফোন করে অসম্ভব সুন্দর কন্ঠস্বরের একটা ছেলে ফোন ধরে , আর এতো সুন্দর করে কথা বলে, তিতলিকে যেন কোথায় নিয়ে যায় সেই কন্ঠস্বর। কখনোই রাগ নেই ছেলেটার। তিতলি যতই ছেলেমানুষি করে, যতই যন্ত্রনা করে না কেন, সেই একই কন্ঠস্বর। এতো টুকু কাপে না সেটা। একটুকুও বিরক্ত হয় না, অভিমান করে না ।
এতো সুন্দর করে কি করে কথা বলে ছেলেটা। তিতলি মুগ্ধ হয়ে শোনে শুভর কথা। সারাদিন সারা রাত। মনে হয় এই ছেলেটিকে ছাড়া সে কিছুতেই বাঁচবে না। কিছুতেই না।
দুই.
অর্ক তার নতুন তৈরী করা সফটওয়্যারটার রেকর্ডগুলো দেখছে । সে তার এই সফটওয়্যারটির নাম রেখেছে কিউপিড। ভালোবাসার দেবতার নামে নাম। এটা আসলে একটা ইন্টারনেট ভাইরাস প্রোগ্রাম। কিউপিড কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি সফটওয়্যার।
মানুষের আচার আচরন, কথা বলার ভঙ্গি, কন্ঠস্বরের এনালাইসিস করে এটি নিজেই নিজেকে আপডেট করতে পারে । এর সাথে ইন্টারফেসিং এর মাধ্যমে যোগ করা হয়েছে অনেকগুলো ফোন লাইন। প্রোগ্রামটি মূলত বিভিন্ন জায়গা থেকে মেইল এড্রেস সংগ্রহ করে আর বিভিন্ন চ্যাটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করে, চ্যাট করে। ফোন লাইনটি দিয়ে সফটওয়্যারটি নিজে থেকে কল করতে এবং কল রিসিভ করতে পারে। একই সাথে একহাজার সত্তরটা কল করা এবং রিসিভ করার সুবিধা আছে সেখানে।
বিভিন্ন জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কন্ঠস্বরের ম্যপিংও করা আছে। কোনটা ছেলে, কোনটা মেয়ে। আছে নানা রকম প্রোফাইল ফটো। বিভিন্ন ভাষায় চ্যাট করতে এবং কথা বলতে পারে কিউপিড। সবধরনের মানুষের সাথেই এটা যোগাযোগ করে থাকে।
ছেলে, মেয়ে, বুড়ো। সবাই ই ভাইরাসটির প্রেমের ফাঁদে পা ফেলে। অর্ক কিউপিডের লগবুক চেক করে। এ পর্যন্ত মোট চার হাজার ছয়শ চব্বিশজন এই ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কিউপিডের লগবুকে অর্ক দেখলো সর্বশেষ আক্রান্ত হয়েছে যে মেয়েটি, তার নাম তিতলি, যার কাছে কিউপিড নিজেকে পরিচয় দিয়েছে শুভ নামে।
-------------------- -------------------- ------------------- -------------------
রোমান পুরানে ভালোবাসার দেবতার নাম কিউপিড । কিউপিড কে রোমান দেবতা মার্স এবং দেবী ভেনাসের সন্তান ধরা হয়। গ্রীক পুরানে কিউপিডকে এরস নামে উল্লেখ করা হয়েছে। রোমান পুরানে কিউপিডকে দেখনো হয় তীরধনুক হাতে একটি শিশুর প্রতিকৃতি হিসেবে। তার পেছনে দু’টো ডানা।
কিউপিডের এই প্রতিকটিই সবচেয়ে বেশী পরিচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।