আজ আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে লেখটি লিখতে বসেছি। আমি ক্যান্সার বা শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে এখানে লিখতে বসি নি। কিছুক্ষণ বাদে আমি মূল প্রসঙ্গে আসছি।
আমি জানি না সিগারেট জিনিসটা কে আবিষ্কার করেছেন, যদি জানতাম তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করতাম "আপনি কি জানেন আপনি মানবজাতির কত বড় একজন শত্রু?"
ধূমপান নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, হচ্ছে। এর অপকারিতা নিয়ে বহু জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ধূমপানে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি থেকে শুরু ফুসফুসে ক্যান্সারসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এটি একজন চেইন স্মোকারও খুব ভালো করে জানেন। একজন এলকোহোলিক ব্যাক্তির থেকেও একজন ধূমপায়ী সবাইকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তিনি রাস্তাঘাটে অনেক মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতিসাধন করছেন।
এবার আমি মূল ঘটনায় আসি। কাল রাত দু'টায় মানুষের "আগুন, আগুন" চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙ্গে।
আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গিয়ে বুঝতে পারি আমাদের এপার্টমেন্ট বিল্ডিংএ আগুন লেগেছে এবং পাশের বাসার মানুষজন তা দেখে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। এরমধ্যে আমার মা বাসার সবাইকে জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছেন এবং আমরা সবাই নিচে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি কোনমতে আমার মোবাইল ফোনটি নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলাম। এদিকে অন্য ফ্লাটের বাসিন্দারাও টের পেয়ে বেরিয়ে আসছেন যার যার ঘর থেকে। আমি আমার জীবনের সবচাইতে ভয়াবহ রাতটির জন্য তখনও প্রস্তুত ছিলাম না।
পরিচিত মানুষগুলোর এমন অসহায়ত্ব দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। নিচে নামার সময় দেখলাম যে তিনতলার একটি ফ্লাটে আগুন লেগেছে। আমাদের বাসার কেয়ারটেকার আর আমার ফুপাতো ভাইয়েরা দেওয়াল থেকে লিকুইড কার্বন ডাই অক্সাইডের সিলিন্ডারের পিন খুলে রেডি করছেন। সব ফ্লাটে ফ্লাটে খবর দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আমি ফায়ার সার্ভিসে ফোন করে তাদেরকে বাসার লোকেশন দিচ্ছি।
সেই সময়ের মধ্যে ঐ বর্ণনা আমার কাছে অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছিল। আমি শ্বাসকষ্টের রোগী তাই আগুনের কাছে যেতে পারছিলাম না। আমার ফুপাতো ভাই, বাবা ও ফ্লাটের এক মেয়ে পাগলের মত অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার দিয়ে স্প্রে করে যাচ্ছে। আমি দমকলের গাড়ির আওয়াজ পেয়ে রাস্তায় গিয়ে হাত নেড়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কে তাদের ধারণা দিলাম। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমাদের প্রত্যেকের মাথা খুবই ভালোভাবে কাজ করেছে সেইসময়ে।
ফায়ার ফাইটাররা উপরে গিয়ে দেখলেন যে আগুন নিভে গিয়েছে প্রায়। তারা ভিতরে গিয়ে পানি দিলেন, ফায়ার ইসটিংগুইসার দিয়ে আরও স্প্রে করলেন,ভিতর থেকে ধোঁয়া বের করলেন এবং বিছানার বিশাল এক তোশক অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বের করলেন। সারা বাড়ি ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। সেই বাসারই ছোট দুই বাচ্চাকে ফায়ার ফাইটারগণ আসার আগেই ভিতর থেকে বের করেছেন। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে ফায়ার ফাইটারগণ করমর্দন করে বাসা ত্যাগ করলেন।
পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমার আজকের লেখার শানে নুযুল ধরতে পেরেছেন। যে ফ্লাটে আগুন লেগেছিল সেই ফ্লাটের এক তরুণ জলন্ত সিগারেট নিয়ে বিছানায় শুয়েছিল বা ঘুমিয়ে পড়েছিল, সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। প্রথমে সে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কাউকে না জানিয়ে নিজে কিছু করতে গিয়েছিল , ফলস্রূতিতে আগুন তার সর্বনাশা রূপ ধারণ করেছিল। তার সিগারেটের আগুন আমাদের অর্ধশত নিরপরাধ মানুষকে রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে শেষ করে ফেলতে পারত। আজকে আমি এখানে ব্লগে হয়তো লিখতে আসতে পারতাম না।
বস্তি এবং গার্মেন্টসগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগুন লাগে এই সিগারেটের আগুন থেকেই। অপকারী সর্বনাশা এই জিনিসটাকে চিরতরে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। একজন ধূমপায়ী যে খারাপ মানুষ তা আমি বলবো না, সে নেশার জগতে গিয়ে আর তা থেকে ফিরে আসতে পারছে না। এই বস্তুটি কোন এই পর্যন্ত কোন মঙ্গল বয়ে আনতে পারে নি, অকালে কতগুলো মানুষের প্রাণ নিতে পেরেছে শুধু আর পেরেছে কতগুলো দূর্ঘটনার জন্ম দিতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।