সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে... শিরোনাম দেখে অনেকেরই হয়তো ভ্রু কুঁচকে গিয়ে থাকবে। শাহবাগের 'প্রজন্ম স্কয়ার' এর সাথে আস্তিক-নাস্তিক এর সম্পর্ক কি? প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। ঠান্ডা মাথায়, একটু কষ্ট করে, ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ। বাকি রাজাকারদেরও ফাঁসির দাবিতে উত্তাল প্রজন্ম চত্বর...সেই সাথে গোটা দেশ।
নতুন প্রজন্ম জেগে উঠেছে আজ। সেই সাথে দেশের আপামর জনসাধারণ। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায়ের অপেক্ষায় গোটা দেশ।
কিন্তু গত কিছুদিন ধরে খেয়াল করছি, ফেসবুকে বা ব্লগে এই ইস্যু নিয়ে আস্তিক আর নাস্তিক দের মধ্যে একটা অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। নাস্তিক যারা, তারা দাবি করছেন, সব ইসলামের দোষ।
ইসলাম সন্ত্রাসবাদের ধর্ম। মুসলমান মানেই রাজাকার, হুজুর দেখলেই জবাই কর----এই ধরণের কথাবার্তা। এগুলো নতুন কিছু নয়। শুধু প্ল্যাটফর্ম টা নতুন।
আস্তিক যারা, তারাও এর প্রতিবাদ করছেন।
কথার পর কথা, কমেন্ট এর পর কমেন্ট।
আমরা কি একটু ভেবে দেখেছি, আমরা আসলে কি করছি?
যারা নাস্তিক, তারা অলরেডি মুসলমান বর্জিত। তারা সংখ্যায়ও খুব নগণ্য। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষকে নাস্তিক বানিয়ে ফেলা আদৌ সম্ভব নয়। কাজেই যারা আস্তিক, তাদের এই ঝগড়ায় এই মুহূর্তে জড়ানো নিতান্তই বোকামি।
খুব খেয়াল করে একবার ভেবে দেখেন, কাদের হটানো আগে জরুরী? নাস্তিকদের কে? নাকি ধর্মব্যাবসায়ীদের?? যারা ইসলাম কে পুঁজি করে রাজনীতি করে, ইসলাম বেঁচে খায়, সহজ সরল মানুষকে ধর্মের নামে মিথ্যা কথা বলে ভুল পথে চালিত করে, মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করে, সন্ত্রাসের জন্ম দেয়, মানুষকে ইসলাম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা দেয়.....অনেক জন্মগত মুসলমানকে 'নাস্তিক' হতে বাধ্য করে, তাদেরকে???
বেশিরভাগ মানুষ (সবাই নন), যারা নাস্তিক হন, দেখা যায় তারা ইসলামের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে ইসলাম ত্যাগ করেন। ২০০১ সালে আমেরিকায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর অনেক মুসলমান নাস্তিক হয়ে যান, সমীক্ষায় দেখা যায়। তাদের মনের মধ্যে বাসা বাঁধে, ইসলাম মানেই সন্ত্রাসবাদ। ইসলাম মানেই মৌলবাদ। তাদের এরকম মনে হওয়ার কারণটা আসলে কি? ওই যে, ধর্মব্যাবসায়ীদের দেখে তাদের মনে ভুল ধারণা জন্মায়।
আর সেই সাথে ইসলামের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে তারা নাস্তিকতায় গা ভাসায়।
তাহলে মূল কালপ্রিট আসলে কারা?
ওইসব জামাত, শিবিরের দোসরেরা। তাদের কারণেই আজ ইসলাম ধর্মের মত একটা শান্তির ধর্ম, বিশ্বজনীন ধর্মের গায়ের উপর সন্ত্রাসবাদের লেবেল। তাদের কারণেই অনেকে নাস্তিক হচ্ছে। ইসলাম সম্বন্ধে অনেকের মনেই নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।
সেই সাথে তারা যুদ্ধাপরাধী। ধর্ষক, খুনী।
আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্বে গিয়ে আন্দোলনের মূল ফোকাস টা নষ্ট করে আসল যে কাজ, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, সেটা থেকে দূরে সরে যাওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? যারা আস্তিক, তারা যদি একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করেন যে আসলে এই মুহূর্তে কোনটা বেশি জরুরী, উত্তর পেয়ে যাওয়ার কথা। ধর্ম নিয়ে যারা ব্যাবসা করছে, ধর্মকে ব্যাবহার করছে, তাদের সমূলে উৎপাটন করাই এখন ইমানদার মুসলমানের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিৎ। নাস্তিকদের নিয়ে এখন না ভাবলেও চলবে।
তাদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যে ইসলাম মানেই সন্ত্রাসবাদ নয়। ইসলাম মানেই রাজাকার নয়। টুপিওয়ালা মানেই শিবির নয়। আমি নিজে আজ শাহবাগে ছিলাম। অনেক দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা মুসল্লীকেও আমি দেখলাম রাস্তায় বসে আছেন, স্লোগান দিচ্ছেন, ফাঁসির দাবিতে চিৎকার করছেন।
এসব দেখেও অনেক কিছু শেখার আছে।
সবাইকে অনুরোধ করবো, আপনারা শাহবাগে আসুন। আমরা আরেকটি "আরব বসন্ত" এর খুব কাছে পৌঁছে গেছি। পরিবর্তন এখন একমাত্র সমাধান। দেশদ্রোহীদের ফাঁসির দাবিতে আমরা আন্দোলন করবো।
সেই সাথে বিশ্বকে এই বার্তা দেওয়াটাও আমাদের জন্য জরুরী, ইসলাম মানে সন্ত্রাস নয়। মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী নয়। সবার ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়ার এখনই সময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।