আমেরিকায় ভালোবাস নেই। না কোথাো নেই এই বস্তুটিকে খুজে পাবেন না। যারা স্বামী-স্ত্রী তারা সবাই যার যার তার তার হিসেবে চলতে আভ্যস্থ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যদি হাসব্যান্ড এর চাকরী চলে যায় তাহলে এর তিন মাসের মধ্যে তার ক্রেডিট কার্ডে কেনা গাড়িটা চলে যায় তারপর যায় তার মর্টগেজে কেনা বাড়িটা আর সবশেষে যায় তার বউ। বর্তমানে আমেরিকায় ৫৭% ডিভোর্স হয় শুধুমাত্র এই কারনেই।
কোথাো কোন ভালোবাসা নেই। সবাই চলছে সবার সুবিধা মত। এই কঠিন আবস্থা থেকে মুক্তি কি? মুক্তি একটাই। একটা দিবস চালু হোক। আন্তত: বছরেরর একটা দিন এই ম্যটেরিয়েলিস্টিক কাপলরা প্রান খুলে নিজেদের ভালোবাসুক...দিনটাকে উপভোগ করুক।
তাতে সুবিধা দুদিক থেকেই। সরকার দুটো রেভেন্যুর মুখ দেখলো আর এই যান্ত্রিক মানুষরা একদিনের জন্য হলেো একটু সুখের ঠিকানা পাবেন বৈকি? আর সে কারনেই এই আমেরিকায় বিভিন্ন দিবসের ছড়াছড়ি। বাবা দিবস, মা দিবস, বন্ধু দিবস, নারী দিবস, এই দিবস সেই দিবস.....ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ ধীরে ধীরে যেভাবে আত্বকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে এই উপসর্গ হল তারই লক্ষন!!
কিন্তু কথা হল আমাদের বাংলাদেশের ভালোবাসার সাথে এদের ভালোবাসার কি তুলনা চলে? আমাদের ভালোবাসা মানেই কিন্তু আন্যরকম একটা আনুভুতির ব্যাপার। আমাদের ভালোবাসা মানেই শংকিত হয়ে মা তার পুত্রের জন্য রাত জেগে বসে থাকা, ভালোবাসা মানেই কোন এক কৃষানী তার স্বামীর পথ চেয়ে বাড়ির ছোট্ট পিড়িতে বসে হাতে আঁচল পেচিয়ে আপেক্ষার পথ চেয়ে বসে থাকা..ছেলেবেলায় দেখেছি মা আমার বাবাকে মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিতেন। আমরা ভাইবোনরা যখন সবাই বড় হয়ে গেলাম তখন এটা ঘটত আড়ালে...সেটা আমরা বুঝতাম আর মুখ টিপে হাসতাম।
কিন্তু এখন আমাদের ভালোবাসার এতই কি খরা চলছে যে এর জন্য পশ্চিমের দিকে আমাদের তাকাতে হল! হ্যা, সত্যিই হল। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের গর্বিত সংস্কৃতি থেকে আনেকটুই দুরে সরে যাচ্ছি..এক ভীনদেশি সংস্কৃতিকে নিজের ভেবে হাত বাড়াচ্ছি......
আমি যুক্তরাষ্ট্রে আছি প্রায় এক যুগের চেয়ে বেশি সময় ধরে। বিনয়ের সাথে বলতে চাই আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বচ্চ ডিগ্রীটা আমার আছে। নিজের কথা এভাবে বলার জন্য প্লীস, ভুল বুঝবেন না। আমার এই তথ্যটা দেয়ার পেছনে একটা কারন আছে।
আমি গত বছর যখন বাংলাদেশে ঘুরতে যাই তখন এই ভালোবাসা দিবসে ঢাকাতেই ছিলাম। বিশ্বাস করেন আমেরিকার শিক্ষা এবং দেশটাতে এতদিন থেকে আমি এই পশ্চিমের যা গ্রহন করতে পারি নি আমাদের দেশের কিছু পশ্চিমা আনুকরনকারীদের দেখে আমি আবাক হয়ে গিয়েছিলাম! এদের আনেকেরই কান ফোটা, ঠোট ফোটা..আর মুখে ভুলভাল ইংরেজিতে ভরা কিছু সস্তা বুলি!র ছড়াছড়ি!! সত্যি আমি খুব দু:খ পেয়েছিলাম.....তখন মনে হচ্ছিল আমরা ধীরে ধীরে আমাদের জায়গা থেকে আনেকটুকুই সরে গেছি....বাংলাদেশে বসে থেকে আমেরিকার পতাকা মাথায় পেচিয়ে নিজেদের আন্যরকম ভেবে একটা আত্বতৃপ্তি পাচ্ছি।
আমি ভালোবাসা দিবস এর বিপক্ষে নই, হতে পারি না। শুধু বলতে চাই নিজের হাজার বছরের গর্বিত সংস্কৃতিটাকে ভালোবাসুন, নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের দেশটাকে ভালোবাসুন। আমেরিকার হয়তো টাকা আছে..বিত্ত আছে...মোড়লি করার ক্ষমতা আছে কিন্তু বিশ্বাস করেন আমাদের তাদের চেয়ে আনেক বেশি যা আছে তা হল নি:স্বার্থ ভালোবাসা।
কারন আমাদের ভালোবাসার দিন হল বছেরর ৩৬৫ দিনই। আমাদের মত তারা কি ভালোবাসতে পারে না কখনো পারবে? আপনিই বলুন।
আদনান সৈয়দ
নিউইয়র্ক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।