: যদি বলি তোমরা সবাই মিলে আমার শৈশবটাকে ফিরিয়ে দাও। আমি আবার ভালবাসায় বড় হতে চাই। পারবে দিতে ?
নেমী বিযন্ন চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে রইল। নির্বাক দৃস্টির দৃস্টিহীনতার কথা ওকে জানিয়ে দিল ওর অপারগতা, ওর কস্টের গভীরতা। ও জানে কত দু:খে শুভ ওকে এ কথা বলেছে , কি অপরিসীম শুন্যতায় ওর মাকে ও খুন করতে চায়।
- নেমী তোমাকে বলেছি কাল আমার জন্মদিন , এও আমি তোমাদের কাছে চাইব না। অতীতকে আর ঘাটাতে চাই না বরং তোমারা একটা কাজ কর। আমি নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। তুমি এবং খালা দুজনেই কাল সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে চলে যেও , মাকে নিয়ে অন্য কোথায়ও তোমরা রাত কাটাও। আগামীকাল রাতেই তো আমার জন্ম , পরশু ভোর থেকেই আমার নতুন জীবন শুরু , শৈশব তাই নয় কি।
শিশুরা যেমন লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমায় , আমিও ঘুমাব। মা তার সন্তানকে যেভাবে আদর করে ঘুম ভাঙায় - এই খোকা ওঠ , সুর্য্যি উঠে গেছে - ডাকতে ডাকতে আসে। আমার মা আমাকে তেমনি ঘুম ভাঙাবে। আমি মায়ের সেই শৈশবের ভালবাসা বকুনি খেতে চাই। হাঁ খুব ভোরে তোমারা আসবে কিন্ত সুর্য্যি উঠার আগে।
মা থাকবে সবার আগে তারপরে খালা এবং সবশেযে তুমি একসাথে। শুভ হাসতে হাসতে বলল -
বল রাজী কিনা ?
নেমী নিমিযেই বলে ফেলল -
রাজী ।
- সত্যি তো
- সত্যি, সত্যি, সত্যি
আজ রাত সত্যি সত্যি নেমীর হোল। ওর চাওয়া পাওয়ার সবটুকুই নিল ও শুভর কাছ থেকে।
ভোর হতেই নেমী - শুভর মার সাথে ফোনে কথা বলল ও পরিকল্পনার কথা জানাল।
শুভও প্রচন্ড খুশি। শেয পর্যন্ত তাহলে ও মায়ের আদর পেল। বাবার জন্য দু:খ করল- বাবা তুমি আজ থাকলে কি মজা হোত। ভাবল সকালেই মার গলা জড়িয়ে ধরে বলবে- মা তুমি কেন আরো আগে এলে না। একটু লজ্জাও করল ছেলে বেলার মত হবে তো।
নেমী মাকে টেলিফোনে বলল- নির্দিস্ট জায়গায় আসতে। ও এবং খালা সন্ধার আগেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
সন্ধার পরে শুভ গাড়ী নিয়ে বেরুল। শহরের পথে পথে ফুলের দোকানের যতগুলো গোলাপ পেল কিনে নিয়ে এল। সবাইকে উপহার দিবে বলে জন্মদিনের কার্ড কিনল।
ঘরে এসে নিজ হাতেই গোলাপের পাপড়িগুলো দরজা থেকে শুরু করে ড্রইং রুম দিয়ে ওর ঘরের সব জায়গায় ছড়িয়ে দিল। শুভর আজ আনন্দ ধরছে না , সবাইকে ও নতুনভাবে পবিত্রকরে গ্রহন করতে চায়। ঘরের একটা দরজা ও দিল না। চিন্তা করল ও জন্ম সময়ের আগ পর্যন্ত ও ঘুমাবে না। খুব ভোরে ঘুমাবে।
মায়ের ডাকেই ওর ঘুম ভাঙবে।
খুব ভোরেই নেমী সহ ওরা চলে এল। উত্তেজনায় কারোই রাতে ঘুন হয়নি। দরজায় ঢুকেই সবাই তম্নয় হয়ে গেল। পাগলটা করেছে কি।
ওরা কি এতই যোগ্য যে পুস্পদিয়ে ওদের বরন করে নিচ্ছে। উত্তেজনায় শিহরনে তিন জনই আনন্দিত। শুভর ঘরে ঢুকে লক্ষ্য করল সত্যিই শুভ বাচ্চা ছেলেদের মত লেপ মুড়িদিয়ে ঘুমুচ্ছে। সবাই মুখ টিপে হাসল, ওর পাগলামী আর গেল না। মার ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে তার খোকাকে জড়িয়ে ধরে , কাদবে ইচ্ছে মত তার খোকাকে ধরে।
খোকা আমি তোকে আর ফেলে যাব না। মানিক আমার বুকে আয় আমার বুকটা ২২ বছর ফাকা হয়ে আছে। তবুও খোকার কথার অবাধ্যতা করল না।
মাথার কাছে এসে ডাকল - খোকা।
এক ডাকে ও ঘুম ভাঙলো না।
মার আর সহ্য সইছে না। দ্বিতীয় ডাক দিয়ে মা খোকার মাথার থেকে লেপ সরাতেই - খোকা বলে চিৎকার দিয়ে পড়ে গেল। নেমীও চিৎকার করে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
খালা দেখলেন - খোকা আর নেই। ডান হাতটা দিয়ে মাথার ডান পাশে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছে ও।
পিস্তলটা হাতের মধ্যেই ধরা আছে , রক্তে ভেসে গেছে সারা বিছানা। বা হাতে একটা সুন্দর প্যাকেটে ধরা কিছু গোলাপের পাপড়ি। হাতটা বুকের উপরে রাখা। খালা প্যাকেট টা খুলে দেখল মাঝে মাঝে পাপড়িগুলোতে কি যেন লেখা। খালা তার কম্পমান হাতেই নম্বর মিলিয়ে পাপড়িগুলো সাজাল।
শুভ সুন্দর করে লিখেছে-
মা তোমার খোকাকে এত সকালে ডেক না। ওনেকদিন ও ঘুমায়নি । ওকে ঘুমাতে দাও।
নেমী সোনা যদি তোমার সন্তান হয় ওকে তুমি তোমার পরিচয়ে বড়ো কর। তাকে তোমরা আদর ভালবাসা দিয়ে শৈশব কৈশর ভরিয়ে দিও।
আমি ওর মধ্যেই বেচেঁ থাকবো
খালা - তোমার শুভ তোমাকে আর কস্ট দেবে না। ইতি -
মায়ের খোকা । খালার শুভ । নেমী তোমার হ্যাদারাম ..।
সমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।