কি জানি কিসের ও লাগি প্রান করে হায় হায় ...
আগেই বলে রাখি আমার জন্ম এক হিন্দু পরিবারে। ছোট বেলা থেকেই আমি হিন্দু ধর্মের রীতি নীতির প্রতি বিশ্বাসী। আমার বাবা খুব একটা ধর্ম কর্ম করতেন না, এমনকি তিনি প্রধান প্রধান পুজা গুলোতেও অঞ্জলী দিতেন না। এবং আমাদেরকেও কখনো জোর করতেন না। কিন্তু আমার মা ধর্মে কর্মে খুব বিশ্বাসী।
উনি মাঝে মাঝে কিছুটা জোর করতেন। তবে সেটা অনেক কম সময়েই । ছোটবেলায় বাবাকে খুব ভয় পেতাম, মাকে একদম ই ভয় পেতাম না। সুতরাং ধর্ম কর্ম সম্মন্ধে বাবার আদর্শ পাওয়াটাই আমার জন্যে খুব স্বাভাবিক।
আমরা বাবা, চাচা, আর ফুফু’রা পাশাপাশি বাসায় থাকতাম, এখনও থাকি।
আমরা কাজিন রা মিলেই অনেকজন। তাই খেলাধুলার জন্যে বাসার বাইরে যাবার প্রয়োজন পড়ত না। বাইরের ছেলেপেলেদের সাথে খুব কম ই মেশা হয়েছে ছোট বেলায়। কিন্তু একটা জিনিষ খেয়াল করতাম। হিন্দু বলে বাইরের ছেলেপেলেরা মাঝে মাঝেই কটুক্তি করত।
বিভিন্ন ধরনের ছড়া ছিল। সেগুলো আজো মনে আছে। ‘মালু’, ‘মালু’ যখন শুনতাম তখন কেন জানি একটা অসহায় বোধ তৈরী হত ভিতরে ভিতরে। কিন্তু কিছু বলার কোন উপায় ছিল না। সবাই যে বলত এরকম না, আমার এখনও মনে আছে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত দের মধ্যেই এই জিনিসটা বেশী।
সেটা ভেবে নিজের মনে স্বান্তনা পেতাম যে এরা অশিক্ষিত, এদের বলায় কিছু যায় আসে না। কিন্তু অনেক শিক্ষিত লোক ও এই মানসিকতার অধিকারী, সেটা এখন বুঝতে পারি, সেকথা আরেকদিন বলা যাবে।
এভাবেই বড় হতে লাগলাম। ধর্মের নিয়ম কানুন, বিধি নিষেধ মানা হয় না, কিন্তু পুজা পার্বন আসলে খুব মজা লাগে। তখন মনে করতাম এটাই হয়ত ধর্মের একটা বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু এখন বড় হয়ে বুঝতে পারি যে সেটা ছিল শুধু নিয়মিত পড়ালেখা, স্কুল এইসব থেকে অন্তত কিছুদিন এর জন্যে মুক্তি পাবার আনন্দ।
মা খুব আচার মানতেন। আচার মানে হল কিছু বিধি নিষেধ। যেমন, বিছানায় উঠে ভাত খাওয়া যাবে না, অপবিত্র হয়ে ঠাকুর ঘরে যাওয়া যাবে না, ঠাকুর এর মন্দির স্পর্শ করা যাবে না, চামচ দিয়ে খেলেও হাত ধুতে হবে, খাওয়ার পরে খাবারের যায়গাটা ভালো করে ধুতে হবে, এইসব। তার কাছে এইসব হচ্ছে ধর্মের অঙ্গ।
বাবাকে কখনও এইসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখিনি। আবার বিরোধীতা ও করতেন না। খুব সম্ভবত পারিবারিক কলহ এড়াতেই উনি এই কাজটা করতেন। আমরা মাঝে মাঝেই এইসব নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে মা’কে পালটা যুক্তি দেখাতে যেতাম। যেমন, চামচ দিয়ে খেলে যদি হাত ধুতে হয় তাহলে তো খাওয়ার পরে পুরো ঘর , এমনকি ঠাকুরের আসন পর্যন্ত ধোয়া উচিৎ।
কিন্তু মা এইসব শুনবেন না, উনার কাছে উনার বিশ্বাস টাই বড়। শেষে আমরাও এসব মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ধর্মের অঙ্গ হিসাবে কখনই মানি নি, মেনে নিয়েছিলাম পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অঙ্গ হিসাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।