আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার অবিশ্বাস (ধর্মবিশ্বাস)

প্রথমেই বলে রাখি আমি এখানে যা লিখেছি তা সবই আমার সম্পূর্ন নিজের বুদ্ধিভিত্তিক চিন্তাভাবনার ফলাফল......... এখন আমার বয়স ১৭ বছর । অনেকের কাছে এটা অল্প কিছু সময় হতেই পারে কিন্তু আমি এই সতেরো বছরেরই ফলাফল । আজকের এই আমি যা তা এই সতেরো বছরেই ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছি । ছোট থেকেই বই পড়ি আমি । তবে সেইটা এখনকার মত গোগ্রাসে গেলার মত মহামারী আকারের না ।

ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত এমনিতে বাড়িতে জন্মদিনে পাওয়া বইগুলো পড়তাম । তারপর যখন ক্লাস সিক্সে হাই স্কুলে গেলাম সেখানে ভর্তি হয়ে পেলাম ব্র্যাক এর একটা লাইব্রেরি । কোনোপ্রকার দ্বিধা না করেই সেই লাইব্রেরির সদস্য হলাম এবং নিয়মিত বই নিতে শুরু করলাম । এমনও হয়েছে আমি বই লাইব্রেরি থেকে নিয়ে ক্লাসে বসে সেটা পড়ে আবার ফেরত দিয়ে অন্য বই নিয়েছি। এরপর শুধুমাত্র লাইব্রেরি না বই নিয়মিত কেনা শুরু করলাম।

এইভাবেই শুরু হল বই পড়া এবং ধীরে ধীরে মুক্তচিন্তা দিকে এগিয়ে যাওয়া!! আমার সবচেয়ে ভালো লাগত বিজ্ঞানের বই। দেবীপ্রসাদ বাবু,ভবেশ রায়,সত্যজিত রায়,আইজ্যাক অ্যাসিমভ,আর্থার সি ক্লার্ক,জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশন গুলো সহ হুমায়ুন আজাদের মহাবিশ্ব কিছুই বাদ দিলাম না । তারপরে হাতে আসলো আরজ আলী মাতুব্বর এবং প্রবীর ঘোষ এর বইগুলো। অন্যভাবে ভাবতে শুরু করলাম। আধুনিক বিজ্ঞানের ইতিহাস জানতে গিয়ে জিওর্দানো ব্রুনো,হাইপেশিয়ার নাম জানলাম।

জানতে পারলাম কিভাবে এনারা ধর্মীয় কুসংস্কারের কাছে নির্মম ভাবে বলি হয়েছেন। জানতে পারলাম কেন বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিলো। ধর্ম টাকে ভালোভাবে জানার জন্য সেই ধর্মীয় বইগুলোও পড়লাম। বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে বুঝলাম---ধর্মীয় নিয়ম নীতির সাথে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে যাওয়াটা নির্বুদ্ধিতার চরম নিদর্শন। প্রশ্নের পর প্রশ্ন জর্জরিত হয়ে গেল মন।

কিন্তু উত্তর পাব কোথায়?? বাবাকে খুব বেশি সময় কাছে পেতাম না। কোনো কোনোদিন ২ বা ৩ ঘন্টা একটানা আলোচনা হত কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর জানা যেতনা সময়ের অভাবে। তাই আবার আশ্রয় নিলাম বই। নীলক্ষেত থেকে প্রচ্চুর বই কিনলাম এবং পড়তে থাকলাম। (ধন্যবাদ দিব বাবাকে কারণ তিনি কখনই আমাকে এই ধরনের চিন্তা ভাবনায় কখনোই কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নাই।

আর যত রকম যুক্তিতর্ক সব সময় বাবার সাথেই চলত। বাম রাজনীতিতে তিনি একসময় সক্রিয় ছিলেন,ফলে অনেক রাজনৈতিক বাক্যালাপও হয়েছে। আবারো ধন্যবাদ বাবা)☺☺ দিনে দিনে চিন্তা চেতনা অনেক পরিষ্কার হল। অনেক প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজেই ভেবে ভেবে বের করলাম। হিন্দু ধর্মের অনুসারী বাবা মা'র সন্তান হওয়ার কারনে দেখতাম বাড়িতে ছুত, অছুত বা ছোট জাত এইসব সাধারন ব্যাপার ছিল।

মা প্রচন্ড এইসবে বিশ্বাস করার করনে কোনো সময়েই মতের মিল হয় নাই। ধর্ম শান্তি ঐক্য আনয়নের বদলে এনেছে বিদ্বেষ এবং ভেদাভেদ। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের শিখিয়েছে হিন্দু ধর্মাবল্মবীদের মালাউন বলা। এইসকল আরো প্রচুর কারনে এখন আমি ধর্মীয় নিয়ম নীতির কিছুই মানি না কিন্তু তাই বলে তাদের অসম্মান ও করিনা। আমার কছে মনে হয় একটি সন্তানের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তার বিচার বুদ্ধির উপর ছেড়ে দেয়া হোক সে কোন ধর্মকে অনুসরন করবে কোন নিয়ম নীতি মেনে চলবে।

মানুষের জ্ঞান যতই বাড়বে ততই সে সত্যির পথে এগিয়ে যাবে। কোন অন্ধ-বিশ্বাসই টিকে থাকতে পারবেনা। এটাই আমার ধর্ম-বিশ্বাস। ☺☺ বিজ্ঞানের কল্যানে আজ আমরা এতদূর তাই অবশ্যই অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে বিজ্ঞান বিশ্বাস টা ত্বরান্বিত করতে হবে তবেই নতুন শৃঙ্খল একটি বুদ্ধিমান প্রানের বিকাশ হবে--- অন্যথায় বেড়ে যাবে মৌলবাদ ধ্বংস হবে মানবতা জাদুঘরে স্থান পাবে মনুষ্যত্ব নামক শব্দটি !! আসলে যতই প্রগতির কথা বলুক দিনশেষে সবাই ছেলে-মেয়ে বা পুরুষ -নারী বা হিন্দু-মুসলিম ,কেউই মানুষ হতে পারলো না কারন সবগুলাই চার অক্ষরের বোকা,পাঁচ অক্ষরের ভাই !!! মৌলবাদ নিপাত যাক, মুক্ত-চিন্তা মুক্তি পাক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।