সকল অন্ধকারের হোক অবসান
বৃদ্ধ এ্যাডামস হায়হায় করে ওঠে। ভোল্টের নব ধরে টানাটানি করে। ‘না এ দরজা খোলা যাবে না। কারণ এখনো ভোল্টের টাইম-লক সেট করা হয়নি আর কম্বিনেশনও ঠিক করা হয়নি। ’ এ্যাডামসের গলা কেপে ওঠে।
আগাথার মা পাগলের মতো কান্না শুরু করে।
‘চুপ,’ এ্যাডামস সবাইকে থামাতে চায়, ‘তোমরা সবাই চুপ করো। আগাথা!’ জোড়ে চিৎকার করে এ্যাডামস। ‘আমাকে শুনতে পাচ্ছো?’ এ্যাডামসের কথার উত্তরে সবাই শুনতে পায় অস্পষ্ট চিৎকারের আওয়াজ। অন্ধকার ভোল্টের ভেতরে ভয়ে কান্নাকাটি করছে আগাথা।
আগাথার মা অস্থির হয়ে ওঠে, ‘আমার মেয়েটা ভয়ে মারা যাবে। ভোল্টটা ভেঙে ফেলো। তোমরা কিছু করছো না কেন?’
‘লিটল রকে গিয়ে তো এমন লোক পাওয়া যাবে না- যে ভোল্টটা খুলতে পারে। ’ এ্যাডামসও অধৈর্য্য হয়ে ওঠে- ‘ওহ খোদা, কী করবো স্পেনসার? বাচ্চাটা বেশীণ ওখানে থাকতে পারবে না। দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।
ভয়ে না জানি কী করছে মেয়েটা!’
আগাথার মা পাগলের মতো ভোল্টের দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করতে থাকে। কেউ কেউ ডিনামাইটের কথা বলে। আন্নাবেল জিমির দিকে তাকায়, আন্নাবেলের চোখে প্রচন্ড উদ্বেগ। নারী যাকে ভালোবাসে তার পে অসাধ্য সাধন সম্ভব বলেই মনে করে ওরা। আন্নাবেল বলে, ‘রালফ, তুমি কিছু করো।
কিছু একটা করো!’
জিমি আন্নাবেলের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। চোখে মুখে হাল্কা হাসি। জিমি বলে, ‘আন্নাবেল, তোমার জামায় লাগানো কাটা- ওটা দাও তো। ’
কী শুনছে ঠিক বুঝতে পারছে না আন্নাবেল। তারপরও নির্দেশ মতো সে তার জামা থেকে ধাতব গোলাপ-কাটা তুলে দেয় জিমির হাতে।
জিমি সেটা জামার পকেটে রেখে গায়ের কোটটা খুলে ফেলে, গুটিয়ে ফেলে শার্টের হাতা। রালফ ডি স্পেনসার এবার বদলে হয়ে যায় আগের জিমি ভ্যালেন্টাইন।
‘সবাই ভোল্টের সামনে থেকে সরে যান। ’ জিমি আদেশের সুরে বলে।
জিমি ভোল্টের সামনে গিয়ে স্যুটকেসটা হাট করে খোলে।
উপস্থিত সবার কথা ভুলে যায় সে। ধীরে ধীরে সে বের করে আনতে থাকে চকচকে ধাতব যন্ত্রপাতি, মুখে বাজতে থাকে হাল্কা শিস। এই কাজে সে সবসময়ই তাই করে। সকলে নড়াচড়া বন্ধ করে জিমির কাজ দেখতে থাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো।
কয়েক মিনিটের মধ্যে জিমির নিজের তৈরী করা ড্রিল বিনা বাধায় ভোল্টের ইস্পাত দরজা ভেদ করে।
দশ মিনিটের মাথায়- চুরি জীবনের রেকর্ড- জিমি নাটবল্টুগুলো বের করে ফেলে। আর মুক্ত করে আগাথাকে। মেয়েটা ভয়ে গুটিসুটি মেরে মায়ের বুকে যায়।
জিমি ভ্যালেন্টাইন বেরুবার জন্য কোট গায়ে দিয়ে দরজার দিকে এগোয়। জিমির কাছে মনে হয় সে দূর থেকে শুনছে ‘রালফ!’
বেরুবার দরজা আগলে এক বড়সর লোক এসে দাঁড়ায়।
জিমি চিনতে পারে তাকে। ‘কী খবর বেন?’
জিমির মুখে সেই অদ্ভুত হাসি। ‘শেষ পর্যন্ত আমাকে খুঁজে পেলে? চলো তাহলে যাওয়া যাক। এখন কী আর যায় আসে। ’
বেন খুব অদ্ভুত আচরণ করে।
‘না স্পেনসার, সেটার আর প্রয়োজন নেই,’ বেন বলে, ‘মনে করো না আমি তোমাকে চিনতে পারিনি। যাইহোক, বাইরে তোমার ঘোড়ার গাড়ি অপেক্ষা করছে। তাই না?’
এটা বলে বেন প্রাইস ঘুরে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যায়। জিমি দেখে বেন প্রাইস রাস্তা ধরে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
(শেষ)
লেখক পরিচিতি:
ও হেনরির আসল নাম উইলিয়াম সিডনি পোর্টার।
ব্যাংকে চাকুরিরত অবস্থায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁকে ভোগ করতে হয় কারাভোগ। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় বৃদ্ধ কয়েদী ওরিন হেনরির সঙ্গে। ওরিন তাঁকে সবসময় লেখার অনুপ্রেরণা যোগাতো। সেখান থেকেই পোর্টার নাম বদলে হয়ে যান ও হেনরি। পাঁচ বছরের সাজা হলেও ভালো ব্যবহারের জন্য ও হেনরিকে দুই বছর আগেই জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৬২ সালে ক্যারোলিনার এক অখ্যাত গ্রামে। নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে তাঁর লেখাপড়া হয়নি। কিন্তু স্বশিতি হয়ে ওঠেন তিনি। যক্ষ্মা ও অর্থকষ্টের কারণে ১৯১০ সালে মহান এই লেখক মারা যান। মাত্র ৪৮ বছরের জীবনে তিনি রচনা করেন- ‘দ্য ফোর মিলিয়ন’, ‘দ্য ভয়েস অব দ্য সিটি’ ও ‘অপশনস’-এর মতো বহু হৃদয় ছোঁয়া গল্পগ্রন্থ।
(অনুবাদটি পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চের পত্রিকা ডিটেকটিভে প্রকাশিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।