আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যি উদ্ধার (১ম কিস্তি) মূল: ও. হেনরি ভাষান্তর: বিধান রিবেরু

সকল অন্ধকারের হোক অবসান

জেলখানা। বন্দীরা এখানে জুতোও তৈরী করে বিক্রির জন্য। জিমি ভ্যালেন্টাইন খুব মনযোগ দিয়ে জুতো সেলাই করছে। গার্ড এসে দাঁড়ায় জেলখানার জুতো কারখানার সামনে। জিমিকে উঠতে বলে সে।

এরপর নিয়ে যায় অফিস ঘরে। সকালেই জিমির মুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেছে গভর্নর। সেটাই তার হাতে তুলে দেয় কারাপ্রধান। জিমি খুব ক্লান্ত ভঙ্গিতে কাগজটা হাতে নেয়। চার বছর সশ্রম সাজার মধ্যে সে ভোগ করেছে প্রায় দশ মাস।

তার ধারণা ছিলো- বেশী হলে তিন মাস জেলের ভেতর থাকতে হবে, এর বেশী একদিনও না। কারণ জিমির মতো মানুষ, যার বাইরে এতো ক্ষমতাবান বন্ধু-বান্ধব আছে তাকে এতোদিন আটকে রাখার প্রশ্নই আসে না। ‘তো ভ্যালেন্টাইন,’ কারাপ্রধান বলে, ‘কাল সকালে তুমি মুক্তি পাচ্ছো। নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নাও। তুমি এমনিতে লোক খারাপ না।

মানুষের সিন্দুক ভাঙা বন্ধ করে ভালো করে বাঁচতে শেখো। ’ ‘আমি?’ জিমি উত্তর দেয়, ‘কেন? আমি তো কখনো কারো সিন্দুক ভাঙিনি। কারাপ্রধান হেসে ওঠে, ‘আরে না, সেটা আমি জানি। ব্যাপারটা কী হয়েছে দেখো- কীভাবে তুমি ঐ স্প্রিংফিল্ডে কাজ পেয়েছিলে? তাছাড়া বিষয়টা কী এমন- উঁচু শ্রেণীর কেউ ফেসে যাওয়ার ভয়ে প্রমাণ করতে পারোনি- ঘটনার সময় তুমি সেখানে ছিলে না? নাকি এটা মামুলি একটা মামলা- অবিবেচক বিচারক রায় দিয়ে তোমাকে জেলে পুরে দিয়েছে? তোমার মতো নির্দোষ অপরাধীর ক্ষেত্রে একটা না- একটা ঘটনা তো থাকেই। ’ জিমির মুখে নিখাদ ভালোমানুষীর ছাপ।

সে বলে, ‘আমি, আমার জীবনে কখনো স্প্রিংফিল্ডে কাজ করতে যাইনি!’ ‘ক্রোনিন, ওকে নিয়ে যাও। ’ কারাপ্রধান হাসতে হাসতে বলে, ‘কাল যাওয়ার জন্য পোশাক-আশাক ঠিক করে দাও। সকাল সাতটায় ছেড়ে দেবে, যেন “ষাঁড়ের খোঁয়াড়ে” ঢুকতে পারে। আর আমার কথাগুলো ভুলে যেও না ভ্যালেন্টাইন। ’ পরেরদিন, সকাল সোয়া সাতটা।

জিমি কারাপ্রধানের বাইরের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে। গায়ে কম দামের স্যুট, জামা, পায়ে ভাঁজ পড়া জুতো। সে এখন সরকারের বাধ্যতামূলক ছাড়া পাওয়া অতিথি। কারাগারের কেরাণি জিমিকে রেলরোডের টিকিট আর পাঁচ ডলার হাতে ধরিয়ে দেয়। এটাই নিয়ম।

ছাড়া পাওয়া কয়েদীরা ঐ টাকা দিয়ে যেন সুনাগরিক হিসেবে জীবন শুরু করতে পারে। কারাপ্রধান জিমিকে একটি চুরুট দিয়ে হাত মেলায়। এরপর সে খাতায় টুকে রাখে- ভ্যালেন্টাইন, কয়েদী নাম্বার ৯৭৬২, সরকারী মায় মুক্তি পেলো। জেমস ভ্যালেন্টাইন কারাগারের বাইরে পা রাখে। চারিদিকে রোদ ঝলমল করছে।

পাখির কিচিরমিচির, গাছের সবুজ পাতার নড়াচড়া, অচেনা ফুলের গন্ধ। এসবের কোনো কিছুই জিমিকে স্পর্শ করে না। সে সোজা গিয়ে ঢোকে হোটেলে। ঝলসানো মুরগির সঙ্গে সাদা ওয়াইন নেয় জিমি। এরপর একটা চুরুট- কারাপ্রধানের দেয়া চুরুটের থেকে এক কাঠি ওপরের।

মুক্তির স্বাদ একেই বলে- ভাবতে ভাবতে জিমি ডিপোর দিকে এগোয়। অন্ধ ভিক্ষুকের টুপিতে একটা সিকি পয়সা ছুঁড়ে দিয়ে ট্রেনে চড়ে সে। তিনঘন্টা পর ছোটো একটা শহরে পৌঁছায় জিমি। এরপর সে মাইক ডোলানের ক্যাফেতে ঢোকে। বারের পেছনে একাই বসে আছে মাইক ডোলান।

জিমি হাত মেলায় তার সঙ্গে। মাইক ডোলান দুঃখ প্রকাশ করে বলে, ‘জিমি ব্যবস্থাটা আরো তাড়াতাড়ি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর প্রতিবাদ ¯স্প্রিংফিল্ড আগেই করেছিলো। গভর্নরও একটু ঝামেলা বাধায়।

যাইহোক, তুমি কেমন আছো?’ ‘ভালো,’ জিমি বলে, ‘আমার চাবি কোথায়? চাবিটা দাও। ’ মাইকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে জিমি ওপরে উঠে যায়। দোতলার পেছন দিককার ঘরের দরজা খোলে জিমি। সবকিছু আগের মতোই আছে। জিমিকে গ্রেপ্তারের সময় ধস্তাধস্তি হয়।

তখন ডাক সাইটে গোয়েন্দা বেন প্রাইসের জামার বোতাম ছিড়ে যায়। সেটাও ঐ একইভাবে পড়ে আছে মেঝেতে। দেয়াল থেকে ভাঁজ করা বিছানা নামায় জিমি। এরপর দেয়ালের কাঠখন্ড ঠেলে বের করে আনে একটা ধূলো পরা স্যুটকেস। ধীর হাতে স্যুটকেস খোলে জিমি।

পলক পরে না তার। স্যুটকেসের ভেতর চুরি করা প্রাচ্যের মহামূল্যবান সব জিনিস। বিশেষ ইস্পাতের তৈরী পুরো একটি সেট- আধুনিক নক্সার ছেনি, বাঁটালি, তুরপূণসহ নানা জিনিস। এরমধ্যে দু’তিনটা জিনিস জিমির নিজের আবিষ্কার করা। সেগুলোর গায়ে হাত বুলিয়ে গর্ববোধ করে সে।

যা তৈরী করাতে খরচ হয় নয়শ ডলারের বেশী। সবগুলোই জিমির কর্মেক্ষেত্রে কাজে লাগে। আধ ঘন্টার মধ্যে জিমি নীচে ক্যাফেতে নেমে আসে। গায়ে এবার রুচিশীল, পরিষ্কার পোশাক। হাতে ধূলোহীন স্যুটকেস।

মাইক ডোলান ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘সবকিছু ঠিক আছে?’ জিমি অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে, ‘আমাকে বলছো? ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি নিউ ইয়র্কের অ্যামাল-গ্যামেটেড বিস্কুট ও গম কোম্পানির প্রতিনিধি। ’ এই উত্তর শুনে মাইকের চোখমুখে হাসির ঝিলিক খেলে যায়। সে এক লাফে জিমিকে টানতে টানতে নিয়ে যায় বারের কাছে। ‘সেলৎজার-এন্ড-মিল্ক’ পানীয় খেতেই হবে।

যদিও জিমি এসব মদ খেয়ে অভ্যস্ত নয়। জেল থেকে ভ্যালেন্টাইন (কয়েদী নম্বর ৯৭৬২) ছাড়া পাওয়ার এক সপ্তাহ পর ইন্ডিয়ানার রিচমন্ড অঞ্চলে সুচারুভাবে সিন্দুক ভেঙে চুরি হয়। চোর বেশ সেয়ানা। কোনো প্রমাণ রেখে যায়নি। তবে সিন্দুকের এক কোনায় আটশ ডলার পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এ ঘটনার দুই সপ্তাহ পর আবারো চুরি হয়। এবার আরো সূক্ষ্মভাবে। লগ্যানসপোর্টের সিন্দুকটা পানির মতো সহজ উপায়ে ভেঙে ১৫শ ডলারের কারেন্সি নোট নিয়ে উধাও হয়েছে চোর। ভেতরের রূপো ও সিকিউরিটি বন্ড ধরেও দেখেনি সে। পরপর দুটি ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়।

এরপর জেলফারসন শহরের একটি পুরনো ধাঁচের ব্যাংকে চুরি হয় পাঁচ হাজার ডলার মূল্যের ব্যাংক নোট। সব মিলিয়ে তির পরিমাণ এতোটাই যে ঘটনাটি নামকরা গোয়েন্দা বেন প্রাইসের তদন্তের আওতায় চলে আসে। সবগুলো ঘটনাস্থল ঘুরে বেন দেখে চুরির কৌশল সব একই রকম। বেনের মাথায় ঘুরতে থাকে পুরো ঘটনা- ‘ড্যান্ডি জিমি ভ্যালেন্টাইন। সে আবার পুরনো কাজ শুরু করেছে।

তার কম্বিনেশন নব খোলার কায়দা দেখলে মনে হয়- এটা বর্ষাকালে জমি থেকে মূলা তোলার মতোই সহজ কাজ। এমন সূক্ষ্ম কাজের যন্ত্র একমাত্র ভ্যালেন্টাইনের কাছেই আছে। তালায় একটা মাত্র ছিদ্রের বেশী কিছু করতে হয় না তার। অতএব যে কোনো মূল্যেই ভ্যালেন্টাইনকে চাই। নয় তো পরেরবার ভ্যালেন্টাইন আরো কম সময়ে, আরো সূক্ষ্ম উপায়ে বড় তি করতে পারে।

’ ¯স্প্রিংফিল্ডের কেসটা সামলাতে গিয়ে জিমির স্বভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছে বেন। সহকারী ছাড়াই দ্রুত কাজ সারার দতা, তারোচে দ্রুত সটকে পড়ার মতা এবং সমাজের উঁচু শ্রেণীর সঙ্গে আঁতাত- এসব কিছুর কারণেই ভ্যালেন্টাইনকে ধরা মুশকিল শুধু নয় অসম্ভব হয়ে পড়ে। যাইহোক, বাইরে প্রচার হয়ে গেছে- এক শৈল্পিক চোরকে ধরতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বেন। ফলে বাকি ছিচকে চোররা আগের চেয়ে একটু সহজেই ছোটো-খাটো সিন্দুক ভাঙতে লেগে যায়। দুপুরবেলা।

আরকানসাসের এক ছোটো রেল স্টেশনে নামে জিমি ভ্যালেন্টাইন, হাতে স্যুটকেস। এরপর স্টেশন থেকে পাঁচ মাইল দূরের এক অখ্যাত শহরে হাজির হয় সে। জিমিকে দেখে মনে হয় একজন অ্যাথলেট এইমাত্র ট্রেন থেকে নেমে বাড়িতে যাচ্ছে। জিমি হাঁটছে হোটেলের দিকে। এক সুন্দরী তরুণী জিমির পাশ কেটে যায়।

জিমির চোখ পড়ে তার চোখে। মুহুর্তের মধ্যে জিমি ভুলে যায়- সে কে, কী তার পরিচয়- যেন অন্য এক মানুষ। মেয়েটি দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়- বোধহয় ইষৎ রাঙা হয়ে ওঠে তার গাল। জিমির মতো শহুরে ঢঙের যুবক এ অঞ্চলে কমই দেখা যায়। মেয়েটি একটি ভবনে প্রবেশ করে।

ভবনের দরজায় লেখা ‘এলমোর ব্যাংক’। একটা ছেলে ব্যাংকের সিড়িতে ঘোড়াঘুড়ি করছে- ভাবখানা এমন সে স্টক-হোল্ডার। জিমি তার কলার ধরে টেনে একপাশে নিয়ে যায়। হাতে কয়েকটা পয়সা ধরিয়ে দিয়ে জিমি জিজ্ঞেস করে এলমোর শহরটা সম্পর্কে। কথায় কথায় জিমি মেয়েটার কথা উঠায়, জিজ্ঞেস করে- মেয়েটার নাম কি পলি সিম্পসন?’ ‘না,’ ছেলেটি বলে, ‘তার নাম আন্নাবেল এ্যাডামস।

এই ব্যাংকটার মালিক ওর বাবা। তুমি এলমোরে এসেছো কীসের জন্য? তোমার হাতের ঘড়িটা কি স্বর্ণের? আমি একটা বুলডগ আনতে যাচ্ছি। আচ্ছা তোমার কাছে কি আরো কয়েকটা পয়সা হবে?’ জিমি ছেলেটাকে আর পাত্তা না দিয়ে প্ল্যান্টার্স হোটেলে ওঠে। রুম ভাড়া নেয় রালফ ডি স্পেনসার নামে। ডেস্কে কেরাণিকে জিমি বলে, ‘এখানে এসেছি ব্যবসা করতে।

এ শহরে জুতোর ব্যবসা কেমন চলবে?’ (ক্রমশ.......) (এই অনুবাদটি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের পত্রিকা ডিটেকটিভ-এর নভেম্বর সংখ্যায় বেরিয়েছিলো। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.