সমুদ্র গুপ্তের অগ্রন্থিত কবিতা
বাতাসের উল্টো দিকে বসে আছো তুমি
হাত থেকে খুব বেশি দূরে নয় হাত
ঠোঁট থেকে ওষ্ঠ
তবু হাত পায়ে না খুঁজে আঙুল বেহাত
চুমুগুলো পাখি হয়ে উড়ে ওঠে শূন্যে
তোমার ও আমার চাওয়া সার্বভৌম
তবু দেখো
আরেক নিরীহ পরাধীনতা
আমাদের দুইশত ভাগ স্বাধীনতাকে গ্রাস করে রাখে
হাত থেকে উড়ে যাওয়া পাখি
ওষ্ঠ থেকে ঝরে যাওয়া চুমু
প্রেম থেকে খসে যাওয়া লবণ
চেকপোস্ট থেকে খসে যাওয়া তুমি
পুনরায় ফিরে পাওয়া সোজা কথা নয়
এখন আমাদের কাজ হচ্ছে
অনির্ধারিত অদৃশ্য অপেক্ষা ধরে বসে থাকা
কথা
পাখিদের সাথে কথা বলা
খুব একটা নিরাপদ নয়,
বার বার একই ভঙ্গিতে
ঠোঁট উল্টে পালক দুলিয়ে
একথাটাই বোঝাতে চায় তারা
ভেতরে যতোই গ্লানি
ফাঁক ও ফাঁকি থাক
ঠোঁট ও পালক আমার
কোমল কোমল
পাখিদের সাথে কথা বলা
খুব একটা নিরাপদ নয়।
ঝরে যাওয়া দিনের পাতা
গাছের পাতা যেমন গাছে হয়
লেগে থাকে গাছের সাথে
অবিভক্ত অংশ ভাগ হয়ে
ঝরে যায় দায়িত্ব ফুরালে
দিনগুলো জীবনে সংলগ্ন হয়
লেগে থাকে জীবনের সাথে
অবিভক্ত অংশ ভাগ হয়ে
ঝরে যায় কর্তব্য ফুরালে
ঝরে যাওয়া পাতার জন্য
গাছ খুব কষ্ট পায় কিনা
স্মৃতির ভিতরে পুরনো পাতার কথা
গাছেদের মনে পড়ে কিনা
জীবনের ঝরে যাওয়া দিন
আনন্দ বেদনা হয়ে
জীবনের স্মৃতিতে যেমন ফিরে ফিরে আসে
এ রকম পাতার স্মৃতি বৃক্ষে ফেরে কিনা
এ খবর কোন তথ্যে
গবেষণা উপাত্তে প্রতিবেদনে
এখনো লেখেনি কেউ
চিঠি
ভালবাসি না বলে তাকাতেই দেখলাম
তোমার চোখে আগুন
ভালবাসি বলে তাকাতেও দেখলাম
তোমার চোখে আগুন
তুমিও কি দু'বারই আমার চোখে
আগুন দেখনি।
সাজেদুল ইসলাম
কবিতার মতো কিছু কথা
এরকম বলা হয়ে থাকে
বিবর্ণ উদ্যানে আমি একা
শুকিয়েছে গাছ, ঝরে গেছে পাতা
গোপন বারুদমালা বেদনার কোলাহলে
কী রকম স্যাঁতস্যাঁত-ভেজা
আমি তো অন্য রকম জানি
সাইকেল চালিয়ে আমি কত কতদিন
চলে গেছি বহুদূরে...।
তোমাদের বানোয়াট গল্পগুলো
তবুও জাগেনি বোধে।
ব্যথা আর ক্ষোভে
তবুও ভাঙেনি কোনো জড়তার বেদি
তাই আজো আমি
পুরনো কেতাব, লালবই, বেদ
জন্মে জন্মে পাওয়া কথা
এইসব পড়ি নিবিড় উৎসাহে
আর ধীরে ধীরে
বুঝে উঠি তত্ত্বকথার মানে।
ইতিহাস বন্ধুর মতো অবিকল
বলে দেয় কারা কারা পলাশির মাঠ, আরো
কতো কতো যুদ্ধ ছেড়ে
ফিরে গেছে নিজেদের ঘরে।
তত্ত্বের কথকতা আর
এ মাটির ইতিহাস
এদুটো ছুঁয়েছি বলে
আজো যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছো
চারিপাশে, নানা সাজে, রঙে-ঢঙে
আমার কাছে
তোমাদের শ্রেণি আর যোনি
জলবৎ তরলং
ঠিক এরকম হয়ে ওঠে
সুতরাং অকপটে বলে দিই,
এইসব ছলা-কলা, লুকোচুরি খেলা
বাদ দাও।
ফিরে যাও নিজেদের ঘরে,
ছুঁয়ে থাকো লক্ষ্মীর পা।
আর শোনো
সবটুকু পড়ে
রাগে কিংবা ক্ষোভে যদি
তোমাদের পিত্ত জ্বলে ওঠে,
তবে ছিঁড়ে ফেলো
আমার এইসব গালাগালি
ক-বি-তা
আর কিছু না হোক
পুরনো প্রশান্তি পাবে।
নুরে আলম দুর্জয়
কামুক শিল্পী
একদিন শিল্পী ছিলাম
কাদামাটির ঘর আর অক্ষর বানাতাম
এখন আমি পরচর্চায় ব্যস্ত
সংস্কৃতি বানাই
আমি বরং ভয়ানক শিল্পী।
জ্যোতি আহমদ
কবির জনপ্রিয়তায় আপত্তি
কবির জনপ্রিয়তা ভালো নয়
তিনি থাকুন ঘষা কাচের আড়ালে
তার লেখা কবিতাগুলি ঘুরে বেড়াক
প্রেতাত্মার মতো...
গিলে খাক জনপদ, খুশী আপার ড্রেসিং টেবিল
কন্টিকারির বন।
ভয় পেয়ে সাপ-খোপ ঢুকে পড়–ক
হাজার বছরের মন্দিরের ফাঁটায়।
নদীতে গোসল করে ফিরে আসা
তাবৎ নর-নারীর হৃদপিণ্ড
আক্রমণ করুক কবিতা।
আহা, প্রচন্ড বাতাসে সওয়ার হয়ে
জাদুলিপি ভেসে ভেসে যাবে
কুড়িগ্রাম থেকে কর্ণাটকে।
কবির জীবন নিরুপদ্রবÑ
এই কথা মিথ্যা হোক।
তার উচিৎ
ঘর-সংসার করা
বৌ-বাচ্চায় ভরপুর কবি বুঝুন
জগৎ কতটা কঠিন এবং
সমর্থ মানুষ তার মধ্যেই কীভাবে
চাষ করে চলে যতিচিহ্নহীন অমর কবিতা।
লোকে জানুক
কবি আহাম্মক উটপাখি নয়।
তাকে ঘাটাঘাটি না করে
কবিতার হাড়মাংস নাড়িভুঁড়ি
খাবলে খাবলে দেখা যাক খাদ্যপ্রাণ,
উচ্ছিষ্ট থেকে আবিষ্কার হতে পারে
নতুন কোনো ক্ষুধা।
কবিতার ছোট পুস্তকটির মোড়ক
উদ্বোধন হোক আড়ালে - মনের মধ্যে
প্রিয় বালিশে মাথা রেখে
আরম্ভ হোক কবিতার নখদর্পণ
কবি নিশ্চয় খুশি হবেন-
থু থু দিয়ে ভিজে গেলে
নিউজপ্রিন্টের প্রতিটা পাতা
কবি কি কমলা-সার্কাসের বাঘ?
স্টেডিয়াম ভর্তি লোকজনের সামনে
সংবর্ধনায় তার কী দরকার!
এর চেয়ে জনারণ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ
সরল আবৃত্তি হোক
অনির্বচনীয় কোনো স্বপ্ন ভেজাক চোখের পাতা
ঘষা কাচের আড়ালে তৃপ্ত কবি
সেই কথা জেনে হাসুন মুচকি।
কবির জনপ্রিয়তা ভালো নয়
তাহলে কুশপুত্তলিকা দাহ হবে একদিন।
সেই ভয় আমার যায় না
ভালোবাসা সাধারণভাবে যেসব অর্থ প্রকাশ করে
আমি তার একটাও উদ্ধার করতে পারি নাই।
আষাঢ় মাসে নদীর সামনে যেতে
আমার ভয় লাগে
অথচ তুমি দুঃসাহসে
পানির অতলে বেণী ভেজাও,
অনায়াসে সাঁতার কাটতে কাটতে
ঐপার ঘুরে আসো।
ছোটবেলায় কানশিসা ফুলের দুধ চুষতে
সাপ দেখে পালিয়ে আসি
সেই ভয় আমার যায় না।
আর তুমি বটগাছের মাথায় চড়ো
চাক ভেঙে মধু চুষে খাও,
আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে
বুকের মধ্যের খাদ দিয়ে
সেই তীব্র মধুবিষ
ঢুকে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার গভীর সুরঙ্গে।
আমি নাকে গন্ধ পাই
জিভ থেকে কুকুরের মতোন লালা ঝরে
কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ি,
তুমি শিলাবৃষ্টির মতো শব্দে
হাসতে হাসতে
ন্যাংটা হতে হতে
নদীর পারে ঘুরতে আসা সব লোকজনকে
সামন-পিছন দেখিয়ে উধাও হলে।
রাইয়ান যানিক সাম্য
ঘোড়যাত্রা ও আমরা
উন্মাদনার ঘোড়ায় চেপে আমরা পাড়ি জমাই
আমাদের কোন ঠিকানা থাকে না
কোন লক্ষ্য থাকে না
কোন উদ্দেশ্য থাকে না
কিন্তু কী দেখে যেন হঠাৎ মনে হয়
এভাবে চলাটা আমাদের
ঠিক হচ্ছে না,
আর তখনই আমরা
গতি বদলাই
পোষাক বদলাই
চেতনা বদলাই
বদলাই আরো অনেক কিছু
নির্দিষ্ট করি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
নতুন কোন ঘোড়ার পিঠে আবারও
অনির্দিষ্ট কালের জন্য পাড়ি জমাই।
আব্রাহাম লিংকন
বাসন্তির গল্প
বাসন্তির গায়ের রং ছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আফ্রিকা
রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলি কবিতার নায়ক নায়িকাদের মত
যৌবনের উন্মেষকালে তার গ্রীবা দেখে
ঈর্ষাকাতর ছিল সহপাঠীরা
বাসন্তির পটলচেরা চোখে সূচিত্রা সেনের চাহনীÑ
ক্যান্টিনে ছেলেদের রোজকার আড্ডার বিষয় ছিল।
মেধায় বাসন্তির কাছা-কাছি আজও কেউ নেই
বাসন্তির কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে কবিতা শোনা হয় নি
পথ চলতে-চলতে পথহারাদের তাকে উদ্দেশ্য
করে উচ্চারিত পঙ্ক্তি শুনে
রবীন্দ্রনাথের গোটা কৃষ্ণকলিই মুখস্থ হয়েছিল।
বান্ধবীরা বলতোÑ কবিরা কি
ফর্সা মেয়েদের জন্য কোন কবিতাই লিখেন নি!
বাসন্তির বান্ধবীরা প্রায় সকলেই সন্তানের জননী
অথচ তিমির ঘন অন্ধকারে বাসন্তির বসবাস!
ঐশ্বর্য্যময় গ্রীবা নেতিয়ে পড়েছে তার
যারা রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুসারী
তারাও কেউই এগিয়ে আসে নি।
বাসন্তি মা হতে পারে নি
পণ দেবার মত টাকাও ছিল
অবাক হয় না বাসন্তি
কেননা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কালো মেয়ের সাথে ঘর বাঁধেন নি!
তারিফ উল হক
আলোদের নিয়ে চল্
কে দিন বদলায়?
কার দিন বদলায়?
রঙিন মিথ্যার শেকলে
ভীষণ কাঙাল মন
ধরা পড়ে যায় বার বার
কে দিন বদলের কথা বলে?
কারা দিন বদলের কথা বলে?
ভুলে যেতে চাই
তবু ভুলি না
বাসন্তির জাল-পরা ছবি
বার বার ভেসে ভেসে ওঠে
নির্বিকার চোখের জমিনে।
মন্দের ভালোর প্রবোধ মেনেছে মন
এভাবে আঁধারকে আলো ভেবেছি
কতবার কত কত বার!
ঘুমের ভেতর দুঃস্বপ্নে অথবা দিবাস্বপ্নে
অথবা স্বপ্নহীন নির্বিকার ঘুমে
আমি তো ভালোবাসতে চেয়েছি
স্বপ্ন দেখতে চেয়েছি
বিশ্বাস করতে চেয়েছি
তবু নির্জলা মিথ্যাকে কী করে সত্য বলে মানি?
কীভাবে মানি মিথ্যার দিনবদলে?
বোবা দুঃখ
ভীষণ জীবিত হয়ে ওঠে
বিগড়ে যায় সমূহ সাজানো পট
যদিও আমি বাতিলকে বলেছি সুখ
যদিও আমি অহংকে বলেছি
অনবরত ভুলে ডানা মেলা পাখি।
আমার এককোটি হৃদয় চাই
এই দাবি নিয়ে আমি মিছিল থেকে বেরিয়ে এসেছি
মিথ্যা সবুজ মিথ্যা আলো কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা
আমার বৃথাবাক্য ব্যয়ে ভুলের মাঝে ঠিক খুঁজতে যাবার ভুল
ঊনিশ বছর আমি নিঃশ্বাস নিয়েছি
এই বিষম বিভ্রাটে সুখের লেশমাত্র নেই
এমনটা নয়
তবে সে সুখ শেকড়হীন আগাছার সুখ
আলো ও আঁধার দুটোই প্রতিবেশী আজ
আলোর বাজারদরে আঁধারের বেচা-কেনা
গভীর দুঃখের রাত এসেছে অচিন্ত মৌনতায়
খয়েরি রঙের গোলাপ যদি বলে
সে বিক্রি হবে না
আমি কি তাকে সায় দিতে পারি?
মন হঠাৎ-ই উদার হতে চায়
বিষন্ন নির্ঘুম রাতে হাহাকারের পানশালাজুড়ে
ধুলো হয়ে ওড়ে
মাটি হয়ে মিশে যায় মন
এই দিনে আমি সূর্যের দিকে খোলা চোখে তাকিয়েছি
পিরামিডগুলো মিশে যাবে ধুলোবালি হয়ে
দূর থেকে দূরে মিশে যাবে সুখ
আর কোনো জন্ম নেই
শুধুই মৃত্যু.....
তবে যদি বলো- ফিনিক্স হয়ে জ্বলে ওঠো তুমি, পৃথিবী!
আমি বলি আমাকেও সাথে নিও
এই জল্লাদের উপত্যকাজুড়ে ক্ষুদ্রতায় বিকৃতসুখে
আমি আর নিজেকে খুঁজি না
আজীবন ভুলের মাশুল পোহাতে হয় জানি
আজীবন খোলস-বদল
নারদের পদ্মহাতে আমি ইন্দ্রনীল
বিষম দ্বিধায় কাকে খুশি করি...
হৃদয় আমার স্বপ্নবীজ
পায়ের তলায় বুভূক্ষ মাটি
পৃথিবীর সমস্ত হৃদয়
যদি বলে ওঠে- না
আমি তবে কোথায় দাঁড়াবো?
আলোগুলো ভীষণ খেয়ালি হলো
সুরগুলো আধেক কাতর
পৃথিবীর চুলে পৃথিবীর নখে
পৃথিবীর জোয়ান শরীরে
বাঙালির প্রেম, বাঙালির ক্ষুধা
এতোটা মৌনতায় খুঁজেছে অহর্নিশ সুখ
খাঁচায় বন্দি প্রহরগুলো
ছেড়েছে সকাল ছেড়েছে সবুজ
বাউল দৃষ্টিতে দিগি¦দিক ছায়া
দিগি¦দিক পরাজিত রাত
প্রলাপের শেষ অথবা শুরু খঁজে ফেরে।
ইমতে আহসান শিলু
কপিলা কথা
হাঁটতে হাঁটতে তো আর
হাসনাবানুর কাছে যাওয়া যায় না
বড়জোর পড়শি তোমার কাছে
হাসনাবানু তো ইন্সট্যান্ট,
পলিমার
আর তুমি তো মেয়ে অনার্য
জ্যোসনাধোয়া
ইভারফ্রেশ
উঠোনে আমার-
বুনোঝাড়ের রেন ফরেস্ট।
ইউসুফ আলমগীর
তুমি ফেরো তোমার আঙিনায়
তোমার হাতছানি আমাকে নিয়ে যায় ধরলার কোল থেকে
তিস্তা-পদ্মা পেরিয়ে গড়াই-এর পাড়ে।
লালনের সুর আমার পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।
আহা! লালন চত্বরে তুমি আর আমি...
আমরা দু’জন।
তোমার আখড়ায় তপে বসি আমি সন্তজন
তোমার ছোঁয়ায় উজ্জীবিত হই
অবগাহন নেই তোমার সুরায়
সে দিনের সকালটা ছিল বড় কাক্সিক্ষত
প্রভাতের রোদ্দুর চিকচিক করছিল প্রকৃতিতে
মেঘেরা সাদা আর নীলে রাঙিয়েছিল আকাশের ক্যানভাস
শুকনো বৃক্ষরা সবুজে সবুজময় হয়ে উঠেছিল
গড়াই-এর স্রোতে সুর তুলেছিল হাজার কোকিল
আর মজমপুর স্টেশনে হাত বদল হয় রক্ত গোলাপ
এবং মুখোমুখি আমরা দু’জন...
গড়াই-এর পাড়ে গাছের ছায়ায় উচ্চারিত শব্দাবলি
ছলকে পড়ে নিজেদের তন্ত্রীতে
রোদ থেকে বাঁচতে সরে আসা কাছাকাছি
আর তোমার হাসিতে ঝরতে থাকে
আমার উন্মাদনা।
হুড তোলা রিক্সায় ঘুরি তোমার শহরÑতোমার পাশে
দুপুরের রোদ গড়িয়ে যায়, তুমি ফেরো তোমার আঙিনায়
আর সন্ধ্যের গোধুলি আলোর ভেতর আমাকে নিয়ে
একটি দ্রুতগামী বাস পার হয় লালন সেতু ...
এবং
মধ্যরাত্রি পেরিয়ে গভীর রাতে নির্ঘুম বিছানায় আমি
মগজের কোষে কোষে লিখে চলি দিনলিপি...
মাইকেল রবিন সরকার
শোক দীর্ঘায়িত হচ্ছে
পশ্চিমের কেউ আমাদের নিয়ে লিখলে
তাকে খুব কাছের বলে মনে হয়।
রবার্ট ফিস্ক, আমরা কৃতজ্ঞ-
আপনার সৎ স্বীকারোক্তির কাছে।
আমরা বিশ্বাস করি,
আগুন লাগিয়ে যারা ফায়ার ব্রিগেড-এ
খবর দিতে ছুটে যায়
আপনি তাদের দলের নন।
আপনি তো জানেন
নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদের মাথাগুলো
বার বার বিক্রি করে দিচ্ছি
ডলারের গায়ে মুদ্রিত মাথার কাছে;
মেনে নিচ্ছি- পশ্চিমা সাদাপ্রভুদের প্রভুত্ব-
যারা আমাদের পরাজিত বিবেকের কাছে
দখলদার বলেই পরিচিত।
রবার্ট, আপনি জানেন
পৃথ্বীখ্যাত রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের সাথে
সিআইএর সম্পৃক্ততার কথা-
ফ্যামিলি জুয়েল'স এর আদ্যোপান্ত।
তাদেরই পোষক রাষ্ট্র আমেরিকা আজ
গণতন্ত্রের মহান তান্ত্রিক সেজে কেবলই
গণঔম্ গণঔম্ করছে।
রবার্ট, আপনার জানার কথা
শোষিতের শ্বাসকষ্ট চরমে পৌঁছলে
এক একটা ফিলিস্তিন হয়।
ক্ষুধার প্রতিটি স্তর তখন ভরে ওঠে অফুরন্ত শস্যে
হারানো ভূখন্ড ফিরে পেতে সদ্যোজাত শিশুরা
কোন এক আবাহনী মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে
যুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব সারে।
এর ফাঁকে আমরা খানিকটা ঘুমিয়ে নিই
সামনে দীর্ঘ রাতজাগা পথ
জেগে থাকবো তো?
জামাল অন্তর
হাত রেখে শিকে শূন্যতায়
তোমাকেই খুঁজে ফিরি রাত্রিদিন
তারকার পাড়ায়, মেঘেদের কার্নিভালে
অশান্ত সৈকতে দেখি রাত্রির আনাগোনা
ঝিনুকের অতল গহীনে খুঁজি শুক্তির
নীলাভ নীরবতায়
প্রবালেও পৌঁছে যাই নিমিষেই,
খুঁজি লক্ষ নিযুত রূপালি মৎস্যদের
নান্দনিক ক্রাউটেডে
তবু নিষ্ঠুর সফেন জলাধার
অরণ্য কাঁদায়,
চিতার নখরেও খুঁজি শতদিন শতরাত
সুন্দরের সাথে করি শর্তহীন সন্ধিচুক্তি
অতঃপর যত্রতত্র পড়ে থাকি নিরাত্রি নির্ঘুম
তুমি নেই-
কি এক নাক্ষত্রিক নীরবতায়
প্লুটোর আকাশ।
মাইকেল রবিন সরকার সম্পাদিত
উত্তরেরর জানালা-১০
কবিতাপত্র (ডিসেম্বর-০৮-ফেব্রুয়ারি-০৯) বের হয়েছে
খোঁজ করুন বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।