আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফরম্যাট

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
ত্রয়োদশ মেয়েটাও যখন ছেলেটাকে ছেড়ে গেলো, ছেলেটার ঠিক একই রকম কষ্ট হলো। এর আগে আরো বারো বার ছেলেটার এক্ই রকম কষ্ট হয়েছে। ছেলেটা অবশ্য সে সব ভুলে গেছে। কিছুই তার মনে নেই। এই মেয়েটা ছেলেটাকে অনেক বেশী ভালোবাসতো।

এর আগে ছেলেটা যে বারোটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলো তাদের চেয়ে বেশী কিনা তা অবশ্য ছেলেটা জানে না, তবে এইবারের মেয়েটাকে নিয়ে ছেলেটা যে পাঁচটি মাস একসাথে ছিলো সেই সময়টা তার খুবই দারুন কেটেছে। বেশ কয়েকবার তারা দক্ষিনের সমুদ্রতটে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেখানে সারা রাত তারা বসে বসে কৃত্রিম সামুদ্রিক ঢেউ দেখেছে। অনেক আগে যখন পৃথিবীতে সত্যিকারের মানুষ ছিলো আর সত্যিকারের সমুদ্র ছিলো, তখন নাকি মানব মানবীরা প্রায়ই ঘুরতে যেতো সমুদ্রের পারে। এখন সেই সমুদ্র নেই।

বেশীর ভাগই ভরাট করা হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে জন বসতি। তবে সাইবর্গদের বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম সমুদ্র। আসল সমুদ্রের চেয়ে কোন অংশে কম না সেটা। সেখানেও রাতের আলোতে ঢেউয়ের চূড়ায় দেখা যায় ফসফরাসের আলোকিত ফেনা, আকাশের কৃত্রিম চাঁদ চির পূর্ণিমা নিয়ে সেই ঢেউয়ে প্রতিফলিত হয়।

বেশ কয়েকবার মেয়েটিকে নিয়ে ছেলেটি সেই সমুদ্র দেখে এসেছে। সত্যিকারের মানব মানবীদের মতো হারিয়ে গেছে নিজেদের মাঝে। সাইবর্গ সম্প্রদায়ের মাঝে মানবিক অনুভূতি গুলোর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার সিদ্ধান্তটা যে ভুল হয়নি তা জলজ্যান্ত প্রমান এই কৃত্রিম বিনোদন কেন্দ্রগুলো। সবসময়ই অসংখ্য সাইবর্গ এখানে ভীড় করে সাইবর্গ সঙ্গীনিদের নিয়ে। হাজারখানেক বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের দূষণমাত্রা যখন প্রচন্ড মাত্রায় বেড়ে গেলো আর তখনকার খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা বিশাল জনগোস্ঠীর জন্য অপ্রতুল হয়ে গেলো, তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ নিজেদের সাইবর্গে রুপান্তরিত করলো।

যারা করতে চাইলো না তারা অল্পদিনেই দূষিত আবহাওয়ায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। সাইবর্গে রুপান্তরিত হওয়ার সুফল আজ তারা ভোগ করছে। খাবারের জন্য চিন্তা করতে হয় না, অল্প কিছু জৈব তরল আর দুটো এনার্জি সেল দিয়ে অনায়াসে দু'মাস কটিয়ে দেয়া যায়। মেয়ে সাইবর্গগুলোকে আর কষ্ট করে শিশুদের গর্ভে ধারন করতে হয় না। নতুন শিশু আসে বেবী সেল থেকে।

কেউ সন্তান নিতে চাইলেই আবেদন করে আর কিছু ইউনিটের বিনিময়েই পেতে পারে কাঙ্খিত শিশুটিকে। আরো কতো সুবিধা। ছেলেটি আর মেয়েটি ভেবেছিলো খুব দ্রুত তারা একটা শিশুর জন্য আবেদন করবে। খু্ব সুন্দর, ফুটফুটে একটি সাইবর্গ শিশুকে নিয়ে বাকিটা জীবনটা কাটিয়ে দিবে তারা একসাথে। কিন্তু খুবই তুচ্ছ কারনে মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে গেলো।

সম্ভবত মেয়েটির মাঝে মানবিক অনুভূতি গুলো খুব বেশী মাত্রায় দেয়া হয়েছিলো। মেয়েটিকে ভালোবাসার আগে তার ইমোশনাল প্রোফাইল দেখে নেয়া উচিৎ ছিলো। বিশাল ভুল হয়ে গেছে। সেই ভুলের মাসুল হিসেবে আজ ছেলেটি আবার একা হয়ে গেলো। ছেলেটির খুবই কষ্ট হচ্ছিলো সেই সব স্মৃতি মনে করে।

ইচ্ছে করছিলো মাথার পেছনের মস্তিস্ককে পুষ্টি সরবরাহকারী তরলের পাইপটা খুলে দিয়ে তার সাইবর্গ জীবনের সমাপ্তি করে দিতে। কষ্ট,দুঃখ,যন্ত্রনা-এই সব অতি মানবিক সমস্যাগুলো সাইবর্গের মাঝে না আনাই ভালো ছিলো। মেয়েটার জন্য ছেলেটির ভেতর এখন যে ব্যাকুল অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে এর নামই বোধ হয় ভালোবাসা। ভয়াবহ মানবিক কিছু কষ্ট নিয়ে ছেলেটা ঘর থেকে বের হলো। একটা বাই ভার্বালে করে এসে হাজির হলো মেমোরি রিসাইক্লিঙ সেন্টারে।

এর আগে আরো বারো বার ছেলেটা এখানে এসেছে। ভয়াবহ কষ্ট আর বেশ কিছু স্মৃতি নিয়ে এসেছে, আর বেড় হয়ে গেছে আনন্দ চিত্তে, কারন এখানে খুব অল্প কিছু ইউনিটের বিনিময়ে পুরোনো সব স্মৃতি মস্তিস্ক থেকে মুছে ফেলা হয়। পুরোনো কোন কিছুই আর তখন মনে থাকে না। ঘন্টা খানেক পর যখন ছেলেটা হাসি মুখে সেন্টার থেকে বেড় হয়ে এলো, তখন তাকে দেখে কে বলবে, কিছুক্ষন আগেও ছেলেটা ভয়াবহ কষ্টের মধ্যে ছিলো, তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে ছেড়ে চলে গেছে বলে। নির্ঘন্ট: সাইবর্গ: মানুষ আর যন্ত্রের সমন্বয়ে তৈরী এক ধরনের রোবট।

বাই ভার্বাল: উড়ন্ত গাড়ি সদৃশ্য যান। মেমোরি রিসাইক্লিঙ সেন্টার: যেখানে মস্তিস্কের সব অথবা কিছু স্মৃতি ফরম্যাট করা হয় বি:দ্র: এটা একটা এক্সপেরিমেন্টাল লেখা। সায়েন্স ফিকশন লিখতে পারি কিনা চেষ্টা করে দেখছি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.