আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা পাঁচজন আর বস্তির রাণী সুরাইয়া

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...

আমরা ছিলাম পাঁচজন। পাঁচ জন এক সাথে একটা বাসা ভাড়া করে মেসের মতো থাকি সিলেট শহরের মুটামুটি ইম্পর্টটেন্ট একটা জায়গায়। সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাশ করে,আড্ডা দিয়ে দিন কাটাই। আমাদের মেসমেট শিহাব। আমার দেখা সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট ছেলেদের মধ্যে একজন।

ও মনে হয় একদিন আইনেস্টাইন বা এডিসন টাইপের কিছু একটা হবে। সব মেধাবীদের মধ্যেই মনে হয় ক্র্যাক টাইপ কিছু একটা থাকে। তো আমাদের শিহাবের মধ্যে সেটা একটু বেশী পরিমানেই ছিলো। ওর কাহিনী বলতে বসলে শ’খানেক পোস্ট দিতে হবে। প্রথম শ্রেণীর গর্ধভ।

আমরা ওকে গরু বলে ডাকতাম। টুয়েন্টি নাইনের আসরে পারত পক্ষে ওকে কেউ নিতে চাইতো না। মোটে থাকি পাঁচজন,কেউ একজন না থাকলে বা ব্যাস্ত থাকলে তাই ওকে নিতেই হতো। শিহাব যে দলে পড়েছে সে দলের অবস্থা মোটামুটি কেরোসিন। ওর পার্টনার চোখ দিয়ে নানান রকম ইঙ্গিত দিয়েও শিহাবকে দিয়ে সঠিক চালটা ফেলাতে পাড়তো না।

ভুল সময়ে ভুল কার্ডটা দিয়ে পার্টনারের মেজাজ চড়মে নিয়ে যেতো। পার্টনার খেপে কতবার কার্ড টার্ড ওর মুখের ওপর ছুড়ে ফেলেছে তার ইয়াত্তা নাই। আর তখন শিহাব এমন এক বোকামী মার্কা হাসি দিতো, যেন সদ্য ভূমিষ্ট হয়েছে। নির্বোধের মতো বলতো,’কই তুই কথন আমাকে চোখ টিপ দিয়েছিস তা বুঝি নাই তো্!’আমাদের দুই নাম্বার মেসমেট হলো সাইফুল। বিশিষ্ট সমাজ সেবক।

ক্যাম্পাসের যে কোন অনুষ্ঠান, দাতব্য কার্যকলাপের নেতা। সাইফুলের মতো অর্গানাইজার আমি খুব কমই দেখেছি। সব কিছুতেই নেতা হিসেবে দাড়িয়ে যায়। তিন নাম্বার মেস মেট হলো মারুফ। সে মেকানিক্যালের ফার্স্ট বয়।

লেখা পড়াটা কে সে মুটামুটি ইবাদতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। পরীক্ষার আগের দিন আমরা সবাই যখন জীবনে প্রথমবারের মতো বই খুলে কোনটা পড়বো আর কোনটা বাদ দিবো বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছি, তখন সে সপ্তম কিংবা অষ্টম বারের মতো সিলেবাস শেষ করে বসে আছে আর এরপর পড়তে ইচ্ছে করছে না বলে কোন একটা মুভি দেখছে বা ঘুম দিচ্ছে। চতুর্থতম মেম্বারটি হলো অনিক। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে স্টাইলিশ ছেলে। এক এক দিন চুলের এক এক স্টাইল করে।

বিছানার নীচে ইস্ত্রি করা কাপড় ভাজ করে মজুদ রাখে যাতে ইস্ত্রি নষ্ট না হয়ে যায়। তাকে নিয়ে কেউ কোন ফাজলামি করলে খুবই খেপে যায়। আর পঞ্চমজন হচ্ছি আমি, আগাগোড়া নিরামিষ টাইপ ছেলে, গবেট টাইপ, শিহাব না থাকলে গরু উপাধীটা সম্ভবত আমার ভাগ্যেই জুটতো। তো আমরা পাঁচজন মোটামুটি টুয়েন্টি নাইন খেলে, চায়ের দোকানের আড্ডায় এক এক বার এক এক জনকে পঁচিয়ে, মুভি টুভি দেখে বেশ ভালো ভাবেই দিন কাটাচ্ছিলাম। এর মাঝে আমাদের পাশের ফ্লাটে নতুন ভাড়াটিয়া এলো।

হাজবেন্ড,ওয়াইফ আর তাদের ছোট একটা বাচ্চা, বয়স ৩/৪ বছর হবে। মহিলা(!) দেখতে মোটামুটি সুন্দর। আমি যে গবেট টাইপ, এটা তো আগেই বলেছি, তাই আমি খুব দ্রুত মহিলাকে আপু আপু বলে ডাকা শুরু করলাম আর বিকেল হলেই বাচ্চাটাকে নিয়ে বাসার সামনের খোলা জায়গাটায় খেলতাম। এতে দেখলাম আমার মেসমেটদের কেউ কেউ খুবই নাখোশ হলো। কারন তারা উনাকে ভাবী ডাকতে চায়।

আমি আপু ডেকে ফেলায় নাকি মস্তো মুসিবত হয়ে গেছে। তো অন্যরা তাকে ভাবীই ডাকা শুরু করলো। আমরা সবাই মোটামুটি খু্বই ভালো ছোট ভাই বা দেবর হিসেবে আপু (কিংবা ভাবী)-র কাছে পরিচিতি হয়ে গেলাম। আমি পিচ্চিটাকে নিয়ে খেলি, সাইফুল ভাবীর সাথে বাজারের চাল ডালের গল্প করে,অনিক চুলের স্টাইল ঠিক করে,শিহাব বুঝে না বুঝে বেমক্কা জ্ঞানের গল্প জুড়ে দেয়, আর মারুফ বই হাতে একবার উকি দিয়ে যায়-এভাবে ভালো ছেলে হিসেবে আমাদের দিনকাল ভালোই কাটছিলো। এর মাঝে একদিন ঘটলো ঘটনাটা।

রাত তখন সম্ভবত ১১টা। আমাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। কে একজন দরজার পিপ হোলে দেখে বললো যে পাশের বাসার ভাবী নাকি নক করছেন। সাথে সাথে যে যেখানে ছিলাম সবাই এস হাজির হলাম। দেখলাম কথা সত্য।

আমরা বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম। ভালো করে বোঝার আগে আপু যেটা বললেন তা হলো কাছের ভিডিও দোকানের ছেলেটা নাকি এসে তাদের বাসায় ভুল করে নক করেছে। আমরা তাকিয়ে দেখলাম গেটের অপর পাশে ছেলেটা দাড়িয়ে আছে। রাত হয়েছে বলে বাসার কলাপসিবল গেট আটকে দেয়া হয়েছে। ওখান থেকে আমাদের দরজায় নক করা যায় না।

তাই আপুদের বাসায় নক করেছে। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম বিষয় কি?গেটের ওপাশ থেকে ছেলেটা গলা উচিয়ে বললো আমাদের মাঝে অনিক নাকি তার দোকান থেকে একটা মুভির সিডি এনেছে অনেকদিন হলো এখনো ফেরৎ দেয় নি। আপুর সামনে আমাদের প্রেস্টিজের ব্যাপার, সাইফুল নেতা মানুষ, এগিয়ে এসে বললো সিডি এনেছে তো কি হয়েছে? এতো রাতে সে জন্য অন্যদের ডিস্টার্ব করতে হবে?ছেলেটা চিল্লাপাল্লা শুরু করলো। তখন সাইফুল বললো আচ্ছা কোন ছবি? গেটের ওপাশ থেকে ছেলেটা গলা উচিয়েই উত্তর দিলো –“বস্তির রাণী সুরাইয়া”। সাইফুলের মুখটা আমশি হয়ে গেলো, শিহাব গর্দভটা বলে বসলো-‘হ্যা হ্যা আমি দেখেছি, অনিকের টেবিলে উপর ছবিটার সিডি’।

পেছনে তাকিয়ে দেখি অনিক হাওয়া, আর মারুফ গিয়ে পড়ার ভান করছে,যেন সে এসব কিচ্ছু জানে না। আর আপু/ভাবী? তিনি দেখলাম মুচকি হাসছেন। পরিশেষ: এরপর অনিক বহুদিন আর আপুর সামনে যায় নি। চুলের স্টাইলও মারে নি। বি:দ্র: বন্ধুর তীব্র বিরোধিতায় ছব্দনাম ব্যাবহার করতে বাধ্য হলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.