আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইজরায়েল কিভাবে গাজায় মহাবিপর্যয় তৈরি করেছে(শেষ পর্ব)

ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস

ইজরায়েলি নাগরিক অভি শ্লেইম(Avi Shlaim ) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ষাটের দশকে তিনি ইজরায়েল সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাঁর এই আর্টকেলটি ৭ই জানুয়ারী,২০০৯ -এ দ্যা গার্ডিয়ানে প্রথম প্রকাশিত হয়। মুললেখাটি পাবেন এখানে অনুবাদের প্রথম পর্ব অনুবাদের দ্বিতীয় পর্ব ....................................................................................................। সংখ্যা যেটাই হোক না কেন, বেসামরিক মানুষ হত্যা অগ্রহনযোগ্য।

এই নিয়ম ইজরায়েল এবং হামাস উভয়ের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু ইজরায়েল তার পুরো ইতিহাসে গাজায় সীমাহীন এবং বিরামহীন নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে। অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেও ইজরায়েল গাজাকে অবরুদ্ধ করে রাখে; হামাস নেতাদের মতে তা ছিলো অস্ত্রবিরতির লংঘন। যু্দ্ধবিরতির সময়কালে ২০০৫-এর চুক্তিকে পরিস্কারভাবে অস্বীকার করে ইজরায়েল গাজা ভুখন্ড হতে যেকোন প্রকারের রপ্তানী বন্ধ রেখেছিলো। যা ফলশ্রুতিতে সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ রহিত করে।

সরকারি ভাষ্যমতে জনসংখ্যার শতকার ৪৯,১ ভাগ বেকার। ঠিক একই সময়ে ইজরায়েল খাদ্য, জ্বালানি, জ্বালানী গ্যাসের সিলিন্ডার, পানি এবং পয়নিস্কাশন প্ল্যান্টের খুচরো যন্ত্রাংশ এবং ওষুধ সরবারহ বন্ধ রাখে। ঠিক কিভাবে ক্ষুধার্ত ও শীতার্ত গাজার মানুষেরা সীমান্তের ওপারে ইজরায়েলি অংশের মানুষদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করে, তা বুঝা উঠে কঠিন। কিন্তু যদিওবা তা করে,তবুও সেটা অন্যায়,এটা এক সম্মিলিতভাবে সবাইকে এক ধরনের শাস্তিপ্রদান যেটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইজরায়েলি সৈন্যদের বর্বরতা তাদের মুখপাত্রের মিথ্যা বলার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।

বর্তমান যুদ্ধ শুরু করার ৬ মাস পুর্বে ইজরায়েল জাতীয় তথ্য অধিদপ্তর স্থাপন করে। এই অধিদপ্তরের মুল বার্তা ছিলো হামার অস্ত্রবিরতি লংঘন করে; ইজরায়েল মুল উদ্দ্যেশ্য তার জনগনকে রক্ষা করা; এবং ইজরায়েলি সৈন্যরা নিরপরাধ মানুষ যেন আহত না হয় সেজন্য সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করবে। ইজরায়েল কুট-কুশলীরা এই মেসেজকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে পুরোপুরি সফল। কিন্তু সত্যিকারভাবে এই প্রচরণা ছিলো একগাদা মিথ্যায় পূর্ন। ইজরায়েলি মুখপাত্রের বাগাম্বড়তা তার আক্রমনের কার্যকারনকে অনেক দুরে সরিয়ে রাখে।

হামাস নয়, আই,ডি,এফ-ই(ইজরায়েলি সেনাবাহিনী) প্রথম অস্ত্রবিরতি লংঘন করে এবং তা করে ৪ই নভেম্বর গাজায় এক আক্রমনে ৬জন হামাস সদস্যাকে হত্যার মাধ্যমে । ইজরায়েল উদ্দ্যেশ্য শুধু তার জনগণের নিরাপত্তা দান করা নয় বরং গাজার হামাস সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে দাঁড় করিয়ে তার পতন ঘটানো। এবং বেসামরিক জনগনকে রক্ষা করা তো দুরের কথা তিন বছর মেয়াদি অবরোধ এবং নির্বিচার বোমা বর্ষনের মাধ্যমে তারা গাজার প্রায় ১৫ লক্ষ অধিবাসীর জন্য এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। বাইবেলের আদেশে চোখ বদলায় চোখ যথেষ্ট অমানবিক। কিন্তু গাজায় ইজরায়েলের উন্মত্ত আগ্রাসন মনে করিয়ে দেয় যেনবা তারা "পাপড়ির বদলায় চোখ চাই" এর নীতি অনুসরণ করছে।

৮ দিনের বোমাবর্ষনের সর্বমোট ৪০০-এর অধিক ফিলিস্তিনি এবং ৪ জন ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পরেও অতি উৎসাহী মন্ত্রীপরিষদ গাজায় স্থল আক্রমনের নির্দেশ দেয়, যার প্রতিক্রয়া হবে ধারণাতীত। যে কোন পরিমাপের সামরিক বাহিনীই হামাসের সামরিক শাখা কতৃক ইজরায়েলে রকেট হামলাকে পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবেনাইজরাইলি বাহিনী দ্বারা সমস্ত হত্যাকান্ড এবং ধংসযজ্ঞ সত্বেও তারা প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে, রকেট হামলা চালিয়ে যাবে। এটা এমন এক ধরনের আন্দোলন যা তাদের উৎসর্গ এবং শহীদ হওয়াকে সম্মানিত করে তোলে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই কোন সামরিক সমাধান নেই। ইজরায়েল নিরপত্তা ধারণা সবচে বড় সমস্যা হলো তারা অন্য সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার একেবারেই প্রাথমিক ধারণাকে অস্বীকার করে।

ইজরায়েল নিরাপত্তার একমাত্র পথ হামাসকে গুলি করে নয় বরং তার সাথে কথাবলার মধ্যে নিহিত। হামাস ৬৭-পুর্ব সীমানার ইহুদি রাষ্ট্রের সাথে ২০,৩০ এমনকি ৫০ বছরের জন্য যু্দ্ধবিরতি ঘোষনা করার জন্য বারবার আগ্রহ দেখিয়েছে। ইজরায়েল এইপ্রস্তাবকে প্রত্যাখানকে করেছে সেই একই কারন দেখিয়ে যে ২০০২ সালের আরবলীগের শান্তি পরিকল্পনাকে বর্জন করেছে;যে প্রস্তাবে আপোষ এবং ছাড় দুটোই ছিলো। গত চার দশকের রেকর্ড শেষ পর্যন্ত এই উপসংহারে নিয়ে আসে যে ইজরায়েল একদংগল অতিশয় বিবেকহীন নেতৃত্ব দাঁড়া পরিচালিত হয়ে এক দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র অভ্যাসগভাবেই আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করেনা,গন বিধ্বংসী মারণাস্ত্র মজুত করে এবং সন্ত্রাসের চর্চা করে-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনগনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে ব্যবহারকে করে।

ইজরায়েল এই তিন বৈশিষ্ট্যের সবগুলো ধারন করে; এটা মানতেই হবে। ইজরায়েল মুল উদ্দ্যেশ্য তা ফিলিস্তিনি প্রতিবেশির সাথে শান্তিপুর্ন সহাবস্থান নয় বরং সামরিকাধিপত্য স্থাপন। সে পুরনো ভুলের সাথে নতুন এবং আরো বিপদজনক ভুল মিশিয়ে পরিস্থিত ভয়ানক করে তুলছে। রাজনীতিবিদরা আর সবার মতোই পুর্বের মিথ্যা এবং ভুল পদক্ষেপ আরো একবার নিতেই পারেন। কিন্তু সবসময় তা করাটা বাধ্যতামুলক নয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।